ছবি সংগৃহীত
নেত্রকোণার তিন উপজেলায় হাওরে বোরো ধান কাটা পুরোদমে চলছে। মাঠ জুড়ে ধানের বাম্পার ফলন হওয়ায় কৃষকের মুখে হাসির ঝিলিক দেখা দিয়েছে।
প্রচণ্ড রোদের মধ্যে কৃষকরা ধান কাটতে দেখা যায়। গত সোমবার সরেজমিনে নেত্রকোণা জেলার মদন, মোহনগঞ্জ ও খালিয়াজুরী উপজেলার বিভিন্ন হাওরাঞ্চল ঘুরে দেখা গেছে,হাওরাঞ্চলে কৃষকদের সারা বছরের একমাত্র ফসল হচ্ছে বোরো ধান। আগাম বন্যা কিংবা শিলাবৃষ্টিতে তাদের হাড়ভাঙ্গা কষ্টে ফলানো সোনার ফসল যাতে আর কোন ধরণের ক্ষয়-ক্ষতি না হয়, তার জন্য কৃষাণ কৃষাণীরা পাকা ধান ঘরে তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছে। সর্বত্র ধান কাটা, মাড়াই ও ধান সিদ্ধ করে তা শুকাতে ব্যস্ত সময় পার করছেন তারা। কোথাও কৃষি শ্রমিক, কোথাও আবার সরকারের ভর্তুকি দেয়া কম্বাইন্ড হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। ধান কাটা ও মাড়াই নিয়ে গোলায় তোলা হাওরাঞ্চলে কৃষকদের মাঝে এক ধরণের উৎসবের আমেজ বিরাজ করছে।
আবহাওয়া অনুকূল থাকায় এবার হাওরে বোরো ধানের ভালো ফলন হয়েছে। এ বছর ব্রি-২৮ ও ২৯ ধান এর পরির্বতে ব্রি-৮৮ ও ৮৯ ধান বেশি চাষাবাদ হয়েছে। যার ফলনও বেশি হয়েছে। ব্রি ২৮ জাতের পরিবর্তে ব্রি-৮৮ ধান আবাদ হয়েছে বেশি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, নেত্রকোণা ছয় উপজেলার চলতি মৌসুমে ১৩৪ টি ছোট-বড় হাওরে মধ্যে বোরো ধান চাষাবাদ হয়েছে ৪১ হাজার ৭০ হেক্টর। আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৪০ হাজার ৯৭০ হেক্টর। গত সোমবারে তথ্য মতে, মোহনগঞ্জ হাওরে ৬,৫০০ হেক্টর এর মধ্যে ৮৪%, মদন হাওরে ৮,৫০০ এর মধ্যে ২৯% ও খালিয়াজুরি হাওরে ১৯০১০ হেক্টর এর মধ্যে ২০% ধান কাটা সম্পন্ন হয়েছে। প্রায় ১৪ হাজার ৪৩৯ হেক্টর জমি ধান কাটা সম্পন্ন। যার মোট ৩৫% ধান কাটা হয়েছে। জেলাতে এ বছর বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে প্রায় ১,৮৫,৩২০ হেক্টর জমিতে। যা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল এক লাখ ৮৪ হাজার ২৬০ হেক্টর। সম্ভাব্য হাওরে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২ লাখ ১৫ হাজার ৮১২ মে. টন ধান। যার সম্ভাব্য মূল্য ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা।
মোহনগঞ্জের তেঁতুলিয়া গ্রামের কৃষক করিম মিয়া বলেন, ডিঙ্গাপোতা হাওরে আমার ৮ কাঠা জমিতে ৬০ মণ ধান হয়েছে।৮৫০- ৯০০ শত টাকা মণ দরে ধান বিক্রি করেছি।’ একই গ্রামের চাষী বাচ্চু মিয়া বলেন, ‘২০ কাঠা জমিতে ধান লাগাইছিলাম। দামও ভালো পাইছি। আর কয়েক দিন আবহাওয়া ভালো থাকলে সুন্দরমতো ধান ঘরে তোলা সম্ভব হবে।
খালিয়াজুরী উপজেলার রসুলপুরের কৃষক লাল চান বলেন, ‘এবার আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। এরই মধ্যে ধান পুরোদমে কাটাও শুরু হয়েছে।’ বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে এবার ভালো ফলন পাওয়া যাবে বলে মনে করেন কৃষক কামাল।
নেত্রকোণা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোহাম্মদ নূরুজ্জামানের মতে, বোরো ধান কাটা পুরোদমে শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে ৩৫% শতাংশের মতো ধান কাটা হয়ে গেছে। তবে আগামি মে মাসের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে হাওরে বোরো ধান কাটা শেষ হবে। এ ছাড়া স্থানীয় ও বহিরাগত মিলে প্রায় ১৪ হাজার ৩২৮ শ্রমিক নেত্রকোনায় বোরো কাটছে। হাওরের ধান কাটার জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৭৩০ টি কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সারওয়ার জাহান বলেন, নেত্রকোণা জেলায় এবার সব ডুবন্ত ফসল রক্ষা বাঁধ যথাসময়ে সংস্কার করা হয়েছে। তাই এবার আগাম বন্যায় বোরো ফসলের ক্ষতির সম্ভাবনা নেই।
নেত্রকোণা জেলা প্রশাসক শাহেদ পারভেজ জানান, হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছেন। যথাসময়ে কৃষক যাতে ধান কাটতে পারেন তার ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বড় কোনো দুর্যোগ না হলে এবার বোরোর বাম্পার ফলন।
ইউ