ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

English

ভ্রমণ

জাপানের পথে--পর্ব-২

সৈয়দ আমিন উল্লাহ

প্রকাশিত: ১৫:৩৩, ২৭ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৫:৩৬, ২৭ অক্টোবর ২০২২

জাপানের পথে--পর্ব-২

জাপান

পর্ব-১ এর পর থেকে

জাপানের পথে - ৬
রাতে শুয়ে আছি হঠাৎ ফোন কল ব্যাপার কী রিসিভার উঠালাম। আস্সালামু আলাইকুম আমিন উল্লাহ সাহেব বলছেন। হ্যাঁ, কে বলছেন। মন্টু (ডাকনাম) বলছি টোকিও থেকে। মি. মন্টু এক প্রাইভেট শিপিং কম্পানির ডাইরেক্টর আমার সাথে ভাল জানাশুনা। জানতে পারলাম সস্ত্রীক জাপানে অফিসের কাজে এসেছেন ও আমার খবরা খবর নিয়ে এসেছেন। জাপানে বি.এস.সির যারা এজেন্টস এদেরই বাংলাদেশে এজেন্সি প্রতিনিধি করছে মি. মন্টুর শিপিং কোম্পানী। মি.মন্টু বললেন, আপনাদের এজেন্টস আগামীকাল আপনার সম্মানে ডিনার পার্টি দিচ্ছেন আপনাকে রাত্রি ৮ টার মধ্যে যেতে বলেছেন। আপনি কালকে সকাল সকাল রাতে আমার হোটেলে চলে আসবেন। ঠিকানা নিয়ে ঠিক আছে বলে ফোন রেখে দিলাম। একটু পর আবার টেলিফোনে একজন মহিলার কণ্ঠ নিজের পরিচয় দিলেন। তিনি বি.এস.সির. শিপিং এজেন্টেস এর প্রেসিডেন্ট । সুন্দর ইংরেজিতে কথা বলেন। ইনি আনুষ্ঠানিক ভাবে আগামী রাতে ডিনারের দাওয়াত করলেন আর বললেন, মি. মন্টুকে বলা হয়েছে আপনার হোটেল থেকে আপনাকে নিয়ে যেখানে ডিনারের ব্যবস্থা করা হয়েছে সেখানে যেতে। কুশলাদি জিজ্ঞাসা শেষে ভদ্র মহিলা দুঃখ প্রকাশ করলেন যে আমার আগমন সম্বন্ধে আমি কেন জানাইনি।

পরদিন স্বাভাবিক ক্লাস, মর্কেটিং শেষে হোটেলে ফিরে রাতে অপেক্ষা করতে লাগলাম ডিনারে যাওয়ার জন্যে। মন্টু মিয়া স্বস্ত্রীক আমাকে হোটেল থেকে তুলে নিয়ে গেলেন রেস্তরাতে। ওখানে এজেন্টেস এর প্রেসিডেন্ট ও ভাইস প্রেসিডেন্ট আমাকে সাদরে গ্রহণ করে আন্ডার গ্রাউন্ড হেটেলে নিয়ে গেলেন। দেখি বিড়াট হল রুম। এখানে আলো আঁধারিতে জোড়ায় জোড়ায় মহিলা পুরুষ বলড্যান্স করছে। হলের ধারে ছোট ছোট টেবিল চেয়ার বসে পড়লাম সকলে। মহিলা প্রেসিডেন্ট একজন বেয়ারাকে ইশারা করতেই হার্ড ড্রিংস টেবিলে সরবরাহ করা হলো। আমি আপত্তি জানিয়ে বললাম সফ্ট ড্রিংক্স প্লিজ। সফ্ট ড্রিংস চলে এলো আমি চুকচুক করে পান করছি আর মনযোগ দিয়ে গান শুনছি। এক ভদ্রলোক পিয়ানো বাজিয়ে করুন সুরে গান করছে পাশে বিভিন্ন ধরনের মিউজিক সেট করা। চমকে উঠলাম যুবতি কণ্ঠের পাশে দেখি একটি মেয়ে পুতুলের মত দেখতে মিষ্টি হাসি দিয়ে নাচার জন্য অফার করলো, আমি ক্ষমা চেয়ে বললাম, আমি নাচি না। এবার এজেন্টস এর মহিলা প্রেসিডেন্ট নাচার জন্য আহ্বান করলেন। আমি বললাম, ক্ষমা করবেন। ইনি বললেন কী ধরনের শিপিং ম্যান তুমি। কথা প্রসঙ্গে উনি একটা মন্তব্য করলেন তোমরা মুসলমানরা সব সময় বল ইনশাআল্লাহ্। কিন্তু সময় মত কোন কাজ করনা।


জাপানের পথে - ৭
রাত্রি বেড়ে গেল সকলে এবার পাশের রুমে এলে ডিনারের অর্ডার দেওয়া হলো, বড় একটি টেবিল চেয়ারে বসলাম। প্রত্যেক টেবিলের নিচে প্রত্যেকের জন্যে একটি করে চুল্লি পাকেরজন্য মসলা। পাশেই ছোট ছোট চৌবাচ্চা যাতে আছে বিভিন্ন ধরনের তাজা মাছ। নানান ধরনের চইনিজ স্টাইলের খাবার সার্ভ করলো এবং তাজা মাছ টেবিলে রেখে এক লোক কুপিয়ে কুপিয়ে টুকরো টুকরো করে প্রত্যেকের সামনে দিয়ে দিল। এখন ইচ্ছে মত যার যার মত মশলা মিশিয়ে চুল্লিতে ভেজে অন্যান্য খাদ্যের মধ্যে নিয়ে আহার করা হলো। নতুন এক অভিজ্ঞতা নিয়ে আহার করে বিদায় নিলাম। বিদায়ের সময় বললাম। ছাইনারা অর্থাৎ বিদায়।

বের হয়ে দেখলাম হুল্লোড় লোকে লোকারণ্য! দিনটি ছিল স্বাপ্তাহিক ছুটির দিন। দেখি নানা রকমারি আলোক স্বজ্জা আর আন্ডার গ্রাউন্ডের সামনে ছেলে মেয়ের ভীড় একজন ডুগডুগি বাজিয়ে বলছে। “আরুশে মারুশে” অর্থ জানিনে। জানতে পারলাম একটি আন্ডার গ্রাউন্ডেরভিতর ডিসকো ড্যান্স এর ব্যবস্থা, সাথে পানীয় চলবে কোনটায়। ম্যছেজ এর অন্যান্য ব্যবস্থা। এরা সারারাত আনন্দ ফূর্তি আকণ্ঠ পানীয় পান করে টলতে টলতে বাসায় ফিরবে। জাপানিজরা কর্মরত অবস্থায় কোন কথা বলবে না একনাগাড়ে নিবিষ্ট মনে কাজ করবে। ছুটিতে এরা প্রাণ ভরে আনন্দ করে। ঠিক হলো আগামী কাল এজেন্টস ব্যবস্থা করবে দ্বীপের মাঝে লোহার কারখানা দেখার।

পরদিন গাড়ি করে রওয়ানা দিলাম অজানা সেই দ্বীপে কারখানা দর্শনের উদ্দেশ্যে। চলতেচলতে হঠাৎ করে গাড়ি টানেলের ভিতর ঢুকে গেল খুব দ্রুত গতিতে গাড়ি চলছে তো চলছেই, চারিদিক অন্ধকার তাই মাঝে বৈদ্যুতিক আলোর ব্যবস্থা। এজেন্টসর এর লোকটা জানালো আমরা সমুদ্রের তলা দিয়ে যাচ্ছি। আমি বিস্মিত হলাম। অনেকক্ষণ চলার পর আমরা টানেল থেকে বের হয়ে দ্বীপে চলে এলাম। শুনলাম এই দ্বীপটি কৃত্রিম উপায়ে তৈরি করা। বিরাট কারখানা সমনে ফুলের বাগান ও অনেক গাছ ও গাছালি। গাছ-ফুলের বাগান করা হয়েছে পরিবেশ ভাল রাখার জন্যে। অবাক হয়ে চেয়ে রইলাম। আর ভাবতে লাগলাম এদের উন্নতির শিখরের অবস্থান।

জাপানের পথে - ৮
পরের দিন ঠিক হলো যশোহোরের ডিসি সাহেব (এর মধ্যে যোগ হয়েছিল বাংলাদেশের কিডনি স্পেশিয়ালিস্ট ডা. মতিউর রহমান।) তিনজন ক্লাস শেষে একত্রিত হয়ে ঠিক করলাম আমরা নতুন জায়গায় যাব। রাস্তায় ডিনারের জন্য যে দোকানেই ঢুকছি কিছু পেট পুরে খাবার জন্যে দেখি সব শুকরের মাংস। এরপর একটির পর একটি দোকান ছেড়ে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। হালাল খাওয়া তো আর পাই না। এর মধ্যে শিখেছিলাম ছুটে ছাটা বাক্য যা চলতে ফিরতে প্রয়োজন হতে পারে যেমন ‘বুথা খাবিনে' অর্থাৎ শুকরের মাংস খাইনা” বলে যাচ্ছি কিন্তু আমার ভাষাতো ওরা বুঝতে পারছে না। হয়তো উচ্চারনে ত্রুটি ছিল। হাঁটতে হাঁটতে আমরা এক অঞ্চল থেকে ভিন্ন অঞ্চলে চলে এসেছি, এখানে তো কেউ বলবে না “পথিক তুমি পথ হারাইয়াছ?” হ্যাঁ সত্যি পথ হারিয়ে ফেলেছি। এর মধ্যে ক্ষুধা নিবৃত্তির জন্য আইসক্রিম খেলাম। যার কাছেই পথের সন্ধানের জন্য ‘এগিয়ে যাই’ সেই বলে” নো ইংলিশ নো ইংলিশ, বলে সটকে পড়ে। পাশ দিয়ে দেখি একটি মেয়ে হেঁটে যাচ্ছে। এগিয়ে গিয়ে। ইংরেজিতে বললাম Excuse me, We have lost our way could you help us? মেয়েটি কোন কথা বার্তা না বলে খপ করে আমার হাত ধরে হাঁটতে শুরু করলো। আমার সাথীরাও আমার সাথে হাঁটতে লাগলো। সামনে দেখি থানা। মেয়েটি পুলিশের কাছে আমাদের হস্তান্তর করে কী যেন বলে আমাদের বিদায়ের ভঙ্গিতে হাত ইশারা করে চলে গেল। আমরা ভীত হয়ে পড়লাম এবার বোধ হয় জেলে ঢুকিয়ে দেবে। না পুলিশ সুন্দর ইংরেজিতে জিজ্ঞাসা করলো আমরা কোথায় যাব। আমরা গন্তব্য স্থানের নাম বলায় পুলিশের গাড়িতে করে ট্রেন স্টেশনে নিয়ে ট্রেনে চড়িয়ে দিল। হোটেলে ফিরে এসে হাঁফ ছেড়ে বাচলাম।

আরেকদিন হারিয়ে গেলাম। কিন্তু ভূপৃষ্ঠে নয় ভূগর্ভে। হোটেলের যত সামান্য দূরে দেখি নিচের দিকে একটি সিঁড়ি নেমে গেছে নিচ দিকে কৌতুহল বশত আমি সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলাম ও অদ্ভুত রহস্য ময়তায় বিস্মিত হয়ে গেলাম তখন সন্ধা ঘনিয়ে এসেছে নেমে এসেছি এক অচিনপুরীতে। এক ঝলমলে শহর চারিদিক আধুনিক সাজে সজ্জিত দোকান, নানান ধরনের খাবার রেস্তোরা। দলে দলে যুবক যুবতীরা ঘুরে বেড়াচ্ছে হুল্লোড় করে আর হাসির ফোয়ারা।

চারিদিক আলো আমি এগিয়ে চললাম আর একেকটি দোকান চিহ্নিত করার চেষ্টা করলাম যাতে ফিরে আসতে পারি। পাতাল পুরীর শহর কী এক দুর্বার আকর্ষণে সম্মুখে চলতে লাগলাম। অনেকদুর এসে বাঁ দিকে মোড় নিলাম দেখি রেল স্টেশন, ট্রেন এলো নিমিষে লোক উঠলো আর ট্রেন ছেড়ে দিল। মনে হলো আমি স্বপ্ন দেখছি। স্বপ্নাবিষ্ট হয়ে চলে এসেছি অনেকদূর সম্বিত ফিরে এলো। এবার পথ চিনে ফিরে চলা একী! সে আরেক বিস্ময় সমস্ত দিক ঠিক একই রকম সে এক গোলধ ধাঁধাঁ জায়গা মত ফিরে আসার চেষ্টা করছি। কোন কুল কিনারা পাচ্ছি না। যার কাছেই এগিয়ে যাচ্ছি পথের দিশার জন্য সেই একই কথা শুনতে হচ্ছে। “নো ইংলিশ।” হাঁটতে হাঁটতে ক্লান্ত ও ক্ষুধার্ত ভীত হয়ে গেলাম। হঠাৎ করেই এক যুবক এগিয়ে এসে বলল, Any Help? স্বস্তিরতা ফিরে পেলাম। হোটেলের নাম বললাম চট করে ছেলেটি পথ দেখিয়ে নিয়ে এলো উপরে। ভূগর্ভ থেকে ভূপৃষ্ঠে ফিরে এলাম। সামনেই দেখি আমার হোটেল। পরে শুনেছি আন্ডারগ্রাউন্ড এমন কায়দায় তৈরি করা হয়েছে যাতে শত্রুপক্ষ গোলক ধাঁধায় পড়ে যায়, সঠিক পথ খুঁজে না পায়।

জাপানের পথে - ৯
ঐ রাতে অনেক কষ্টে ফিরে এলাম, সংক্ষিপ্ত খাবার খেয়ে শুতে গেছি। নস্টাজিয়া পেয়ে বসলো। স্ত্রীর কথা মনে এলো, ওর চেহারার আদলটা জাপানিজদের মত নাকটা বোঁচা বোঁচা মিষ্টি দেখতে। ভাবলাম এখন থেকে ওকে ‘কিমনো’ পরাবো আর নতুন কারও অনুষ্ঠানে জাপানিজ বলে চালিয়ে দেব। ‘কিমনো’জাপানী মেয়েদের আদি পোষাক। জাপানি মেয়েদের কথা ভাবলেই যে দৃশ্য ফুটে ওঠে তা হলো কিমনো পরা পুতুলের মত হাতে রং বেরং এর ফুল আঁকা ফোটানো ছাতা। মিষ্টি হেসে সামনের দিকে ঝুঁকে কুর্নিশ করে বলছে। আরুগতু গোজায় মাস্ত। কোন এক ফাঁকে ঘুমিয়ে পড়লাম। পরের দিন ক্লাসে গিয়ে শুনি আমাদেরকে মেরিন একাডেমিতে নিয়ে যাওয়া হবে। শিক্ষক জাহাজের ট্যাকনিকাল বিষয় বিশধ ব্যাখ্যা দিলেন এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করলেন যে আপনাদের কি ফেরি সার্ভিস আছে, আমি খুব উৎসাহিত হয়ে বললাম হ্যাঁ গাড়ি পারাপার করে।

বক্তা মেরিন একাডেমি যাওয়ার ব্যাপারে ব্রিফিং করলেন। প্রথমে আমাদের গাড়িতে করে ঠিক সকাল ১০ টায় নিয়ে ১২ টায় ট্রেন ধরতে হবে। বেলা ২টায় সমুদ্রের ধারে ফেরিতে উঠতে হবে। তার পরদিন ঠিক সকাল ৮ টায় মেরিন একাডেমির নিকট পৌঁছে অপেক্ষমান থাকতে হবে মেরিন একাডেমির লোক সকলকে ভেতরে নিয়ে যাবে ঠিক সকাল ৮ টায়। সেই মোতাবেক সকলকে শিডিউল দেওয়া হলো। আর সতর্ক করা হলো সময়ের ব্যাপারে সজাগ থাকার জন্য।

পরের দিন ঠিক সকাল ১০টায় আমরা রওয়ানা দিয়ে দিলাম এবং ট্রেনে আরোহন করার পর ঠিক দুপুর ১২টায় ট্রেন ছেড়ে দিল। বেলা ২টায় ফেরিতে চলে এলাম।

জাপানের পথে - ১০
ফেরিতে উঠে আমি হতবাক। বিশাল আকারের ফেরি প্রায় ১০০টা গাড়ি উঠেছে। মালামাল রাখার প্রচুর জায়গা। এটা রো রো সার্ভিস। মালামালসহ গাড়ি উঠে যাচ্ছে। ফেরিতে আছে প্রথম শ্রেণি। দ্বিতীয় শ্রেণি, সাধারণ শ্রেণি, বলরুম ডাইনিং রুম। বেলা ২টায় সকলে আরোহনের পর ফেরি ছেড়ে দিল। প্রথম শ্রেণি আমাদের জন্য বরাদ্ধ করা হয়েছে। ভোরে উঠতে হবে, খেয়ে দেয়ে শুয়ে পড়লাম বল রুমে নাচের আসরে আর গেলাম না। পরের দিন ভোরে উঠে প্রাতঃরাশ এর কাজ সেরে তৈরি হয়ে ফেরির ডেক সাইডে চলে গেলাম। দেখি ফেরি তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছে সমুদ্রের ঢেউ কেটে। দূরে কিনারা দেখা যাচ্ছে, মেরিন একাডেমির দালানগুলো দৃশ্যপটে এসে গেলো। ঘড়িতে সময় সকাল ৮টার কাছাকাছি। ফেরি জেটির কাছে চলে এল। ফেরি জেটিতে নোঙ্গর করার পর সকলকে নেমে পড়ার নির্দেশ দেওয়া হলো।কোয়ার্ডিনেটারকে অনুসরণ করে সকলে মেরিন একাডেমির দরজার সামনে পৌঁছালাম। তখন সকাল ৮টা বাজার ১ মিনিট বাকি। অপেক্ষা করতে লাগলাম এবং ৮টা বাজার সাথে সাথে দরজা খুলে গেলে ১টি মেয়ে বের হয়ে সকলকে জুতা খুলে তাদের সেন্ডেল পরতে বললো। নির্দেশ মত সকলে সেন্ডেল পরে রুমে প্রবেশ করার পর সকলকে বেসিনে হাত ধুয়ে যার যার আসনে গ্রহণ করলো। এরপর কয়েকটি মেয়ে গরম পানিতে তোয়ালে ভিজিয়ে সকলের সমস্ত হাত মুছে দিল। এরপর স্টেজে বক্তারা মেরিন একাডেমির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড সম্বন্ধে বিস্তারিত আলোকপাত করলো। দ্বিপ্রহরে চা চক্র হলো। এরপর একইভাবে ফেরত যাত্রা সম্পন্ন হলো।

এখানে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপারটি হলো সময়ানুবর্তিতা। হোটেল থেকে রওয়ানা দেওয়ার সময় থেকে মেরিন একাডেমিতে পৌঁছান পর্যন্ত নির্ধারিত সময়ের কোন হেরফের হয়নি। শিপিং এর একটি কথাই আছে। Time is money. আমাদের কোর্স প্রায় শেষ পর্যায়ে এর মধ্যে ঘুরে এলাম রাজার বাড়ি তার বিরাট বিরাট বাগান। সেই সময়ের রাজা ছিলেন বর্তমান রাজার পিতা। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র যখন জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে এটম বোম ফেলে। জাপানিজ সৈন্য আমেরিকার নিকট সারেন্ডার করে তখন রাজা আমেরিকান কমান্ডারের কাছে এসে তার বিশাল সম্পত্তি দান করে অনুরোধ করে যেন জাপানিজ জনসাধারনের উপর কোন অত্যাচার না হয়।

জাপানের পথে - শেষ
পাহাড়, সমুদ্র, আর অনেকগুলো দ্বীপ নিয়ে জাপান শহর গড়ে উঠেছে। সমতলভূমি কম ঘনবসতির কারনে আন্ডার গ্রাউন্ডে এদের সুন্দর সুন্দর শহর। রেসিডেন্সিয়াল এরিয়াতে পেগোডা টাইপের বাড়ি ঘর সারিবদ্ধভাবে সজ্জিত। জাপানে থাকাকালীন অবস্থায় একবার ভূমিকম্প হলো। তখন ছিল রাত্রি। দেখলাম সবসহ দুলছি। রুম থেকে বের হলাম দেখি হোটেলের ৪০ তলা দালানসহ দুলছে। ভয়ে আমি ও অনেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করলাম। দৌড়ে নিচে নামার পর দেখি লোক জড়ো হয়েছে। হোটেল কর্তৃপক্ষ বোঝালো ভয়ের কিছু নেই এখানে প্রায় সময় ভূমিকম্প হয়। দালানগুলো এভাবে তৈয়ারি যে দুলতে থাকবে কিন্তু ভেংগে পরবে না। এখানে সুন্দর ব্যাপারটি হলো। কত লোকজন নানান জায়গায় কাজে যুক্ত রাস্তা ঘাটে অফিসে, ইন্ডাসট্রিতে, দোকানে সকলে এক নাগাড়ে কাজ করে যাচ্ছে কোথাও কোন হৈ চৈ নেই কোন আওয়াজ নেই শুধু টুং টাং বাদ্য বাজছে। এখানে দূরের যাত্রার জন্য বাহন বাস এবং ট্রেন সুতরাং বেশির ভাগ সময় সকলকে হাঁটতে হয় ।

সুন্দর আধুনিক উন্নত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন একটি দেশ দেখার থাকবার সুযোগ হয়েছে। এবারচলে যাওয়ার সময় ঘনিয়ে এল। যাওয়ার আগে বন্দরগুলো ঘুরে এলাম। কোবে ওসাকা, ইয়োকো হোমা। একদিন নিয়ে যাওয়া হলো শহর ছেড়ে দূরে এক জাপানিজ পরিবারের বাসায়। কাঠের তৈরি ঘর, ঘরের ভিতর পার্টিশন দেওয়া। পার্টিশন সরালে হয়ে যায় হল কামরা। আবার ডাইনিং হল। আরেকটি বেডরুম। আমাদের স্যুপ, নুডল্স পরিবেশন করা হলো। খাওয়ার জন্য কাঠি দিয়ে খাওয়া আমাদের দ্বারা সম্ভব নয় অতএব চামচ দিয়েই খেলাম। সব কিছু দেখা শেষ হলো। মার্কেটিং শেষ।

এখানকার সুন্দর সুন্দর পুতুল নিতে ভুলিনি। এমন মজার হামাগুড়ি দিয়ে চলা ফেলা করে অবিকল দেখতে ছোট বাচ্চা, হাসে আবার কাঁদে। ইলেকট্রিকাল জিনিসপত্র এখানকার বিখ্যাত। নিয়ে নিলাম ক্যাসেট প্লেয়ার। ম্যাসেজার, অটোমেটিক ক্যামেরা। আমার স্ত্রীর জন্য কিমোনো, রং বেরংএর ছাতা, কাজ করা সুন্দর পাখা। কোর্স রিপোর্ট দাখিল করা হলো। দেশে ফেরার প্লেন টিকেট কনফার্ম করা হলো। একেক জনের একেক রুট। কোর্সের শেষ দিন। সকলেই সকলের নিকট বিদায় নিচ্ছি। মনটা ভীষণ বিষণ্ন হয়ে গেল। চোখটাও ছলছলিয়ে উঠল । হঠাৎ দেখি কান্নার আওয়াজ পিছনে তাকিয়ে দেখি মেরি সোহরাবের হাত ধরে কাঁদছে। আর বলছে ভুলো না আমায়। পরদিন জাপান এয়ার লাইনসে করে সুন্দর দেশটি পিছনে ফেলে হংকং ব্যাংকক হয়ে নিজ দেশে ফিরে এলাম।
 

//জ//

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর

ইন্টিলিজেন্স ভিত্তিক পুলিশিং বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

৪১ জেলায় তাপপ্রবাহ, আরও বাড়বে গরমের তীব্রতা

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার নারী কাউন্সিলর

সিয়ামের নায়িকা হচ্ছেন বুবলী

বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি

বিএফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন

ইসলামী ব্যাংকের ১০ শতাংশ ক্যাশ ডিভিডেন্ড ঘোষণা

সাজেকে শ্রমিকবাহী ট্রাক খাদে, নিহত ৬

গ্যাটকো মামলায় খালেদার অভিযোগ গঠনের শুনানি পেছাল

আবারো কমলো স্বর্ণের দাম

নেটওয়ার্ক আধুনিকায়নের লক্ষ্যে বাংলালিংক ও হুয়াওয়ের চুক্তি

ছাদে বাগান থাকলেই উপহার পৌঁছে দিচ্ছেন সাংবাদিক নওশাদ রানা সানভী

ব্যাংককে শেখ হাসিনাকে রাজকীয় বরণ

আপিল বিভাগে তিন বিচারপতি নিয়োগ