ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

English

ভ্রমণ

সুমিত্রানন্দন পন্থের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

কানাইলাল জানা

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ২৪ অক্টোবর ২০২২; আপডেট: ১৫:৪৪, ২৪ অক্টোবর ২০২২

সুমিত্রানন্দন পন্থের সঙ্গে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়

ফাইল ছবি

মোমবাতির কারখানা আছে নৈনিতালে। রাতে আর একবার দেখে নিই আলো দিয়ে সাজানো লেকের অপূর্ব দৃশ্য। বাঙালিরা যে পরিমানে উৎসাহী,রাতেও বোটিং করতেন য়দি না সময় বাঁধা থাকত বোটিং সময় সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৫টা। রাতে জানা গেল নির্ধারিত গাড়ি চলে গেছে রানিক্ষেত। পরদিন সকালে আবার গাড়ি ঠিক করে যাত্রা শুরু। যাওয়ার পথে পড়ে বাওয়ালি। অসামান্য হিমালয়ের দৃশ্য! কিন্তু নামা হয়নি। কৈঁচি মোড়ে গাড়ির ছাদে প্রাতরাশ। এরকম অন্য জায়গায়ও দেখেছি গাড়িকে অচল রেখে ছাদে  খাওয়ার ব্যবস্থা, দোতলায় রান্নাবান্না। তোলা হল কিছু অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। পথে পড়ল এক বাবাজির মন্দির। খুব ভিড়। বাবাকে পূজো দিতে এসেছে এলাকার। মানুষ। প্রসাদ ছোলা। মন্দিরটি এন এইচ - ১১২ লগোয়া কোশীর এক উপনদীর ধারে। আরো কিছুদূর গিয়ে নদীর স্রোতে চলল জলকেলি। ফর্সা মিনারেল ওয়াটার কেউ কেউ ভরছে বোতলে। আরো এগিয়ে কোশী নদীর ব্রিজ পেরিয়ে  রানিক্ষেত  ঢোকার মুখে প্রাকৃতিক দৃশ্য দিয়ে ঘেরা একটি রেস্তোরাঁয় সারা হল মধ্যাহ্ন -ভোজ।

এখন থেকে পাঁচ দিনের পাইলট ভাইয়া সিং নেগি। যেতে যেতে নিজের পরিচয় দিচ্ছেঃ দারু খায় না, কোনো নেশা নেই, মুসলিম নয় ইত্যাদি। দারু খায় না বলতেই একটা ঘটনা ছ্যাঁকা দিল মনে।সেবার নাসিক পৌঁছোলে ড্রাইভার খড়গ সিং চৌহান আমাদের নামিয়ে দিয়ে বলল রাম সীতা মন্দির দেখে আসুন। খুব তাড়াতাড়ি ফিরে এসে দেখি তার চোখ লাল। সবাইকে উঠিয়ে   হঠাৎ সে গাড়িটাকে বাঁধানো গোদাবরী নদীর ওপারে জলের ওপর দিয়ে নিয়ে যাবে ভেবে দড়াম করে সিঁড়ি থেকে পড়ে যেতেই সম্বিৎ ফিরল আরে দারু খাওয়ার এই ফল! সেখানে সান্ধ্য আড্ডা দিচ্ছিলেন কিছু মারাঠি যুবক। গাড়িটিকে শূন্যে তুলে পাড়ে উঠিয়ে দিলে বিপদ থেকে রেহাই পাওয়া গেল। নেগি দারু সেবন করে না ভালো কথা কিন্তু মানুষ মাত্রই নেশা তো থাকবেই। তবে কী তার নেশা?  আবিষ্কার হল অনেকটা সময় পরে।
 
নৈনিতাল থেকে রানিখেত ৫৯ কিমি। মাঝে 'গরমপানি' -তে দেরি না করে ছুটছে গাড়ি। যে দিকে তাকাই অপরূপ শোভা। দেবভূমি সর্বদা সেজেগুজেই থাকে। ৬০০০ফিট উচ্চতার জায়গাটিকে বেশ পছন্দ চাঁদ বংশের রাজা সুধরদেবেের রানি পদ্মিনীর। তাঁর ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে প্রাসাদ হল। চাষবাসের জন্য আনা হল বিভিন্ন স্থান থেকে উপজাতি মানুষদের। সব মিলিয়ে এমন সাজল যে সাময়িক শিবিরকে লোকে বলতে থাকে রানির ক্ষেত অর্থাৎ রানিখেত। পরবর্তীকালে খুব পছন্দ ব্রিটিশ শাসকদেরও। তাদের উদ্যোগে রানিখেত পরিণত হয় সাজানোগোছানো একটি পরিচ্ছন্ন শহরে। তাই সেই ১৮৬৯ সালেই বিট্রিশরা এখানে তৈরি করে ক্যান্টনমেন্ট। প্রকৃতির মতোই মনোরম এখানকার জলবায়ু। এখনই যা শীত শীত ভাব, গ্রীষ্মে রানিখেতের কোনো তুলনা হয় না। দেওদার ওক পাইনে ছাওয়া ম্যাল রোড ধরে হাঁটতে হাঁটতে অনুভব করা যায় শৈল শহরের নির্জনতা। যদিও সব সৌন্দর্য হিমালয় দর্শনে। যে কোনো প্রান্ত থেকেই উদ্ভাসিত হয় পূর্বে নেপাল থেকে পশ্চিমে তেহরি গাড়োয়াল পর্যন্ত ৩০০ কিমি বিস্তৃত হিমালয়ের তুষার মৌলি অগনিত শৃঙ্গ-ত্রিশূল, নন্দাদেবী, কামেট, নীলকান্ত, নন্দাঘুন্টি, হাতি পর্বত, গৌরী পর্বত। ভালো দেখা যায় এই কারণে যে শহরটি একটি বড় পাহাড়ের উত্তরমুখী ঢালকে অবলম্বন করে গড়ে উঠেছে। একসময় ভাইসরয় লর্ড মেয়ো চেয়েছিলেন সিমলা থেকে ক্যান্টনমেন্টকে তুলে আনবেন রানিখেতে। এমনই পছন্দ ছিল তাঁর। এখানকার রেজিমেন্ট মিউজিয়াম একটি অসাধারণ সংগ্রহশালাঃ যেখানে রয়েছে ঝাঁসির রানির দান করা রুপোর তরবারি, চিন যুদ্ধে ব্যবহৃত রাইফেল, কার্গিল যুদ্ধে বাজেয়াপ্ত পাকিস্তানি দস্তাবেজ ইত্যাদি, আছে কুমায়ুনি বাদ্যযন্ত্র নাগাড়া, হুড়াকা, বোখার। অসংখ্য ঘন্টা ঝোলানে ঝুলা দেবীর মন্দিরের পর যাই মনকামনেশ্বর মন্দির। যিনি কালী তিনিই দুর্গা। 

কিছু দূরে গল্ফ খেলার মাঠটি এখন ঘেরা যেখানে  শুটিং হয় রাজা হিন্দুস্থানি সিনেমার গান। দুপাশের  মাঠ ঘাট গাছগাছালি আকাশের ঠিকানায় তাকিয়ে। যত বাঁদর তার থেকে মানুষ অনেক কম। চৌবাটিয়া-র আপেল ক্ষেতে যাব না এতো আপেল বাগান দেখেছি হিমাচল প্রদেশে! তারিখেতে আছে কুটিরশিল্প যেখানে এসেছিলেন গান্ধীজি। শীতলাখেত  পন্ডিত গোবিন্দ বল্লভ পন্থের গ্রাম। রানিখেত ছেড়ে যাচ্ছি বাঁদিকে একটি সর্পিলাকার রাস্তা চলে গেছে গাড়োয়াল হিমালয়ের কর্ণপ্রয়াগে। দেখেছি ২০১২ সালে বিপর্যয়ের ঠিক আগের বছর।

আজকের গন্তব্য কৌশানি। যত এগোচ্ছি মনে পড়ছে রবীন্দ্রনাথের  কবিতার লাইন 'পথের প্রান্তে আমার তীর্থ নয়, পথের দু'ধারে আছে মোর দেবালয়।' মোড়ে মোড়ে দৃশ্যবদল আর অপূর্ব পথ শোভা। পড়ন্ত বিকেলে যেন হালকা সোনার জলে ধোওয়া সমস্ত কিছু তাই সবকিছু সোনালি। এলাম সোমেশ্বর। বিখ্যাত শিবমন্দির। তার আগে সমস্ত জুম চাষের মাঠের ধান পেকে ঝুনো। গম গাছের আকারে পাকা ধান কেটে গাদা দেওয়া হচ্ছে। সোমেশ্বর থেকে দেখা যায় ত্রিশূল শৃঙ্গ। পাশ দিয়ে কলকল করে ছুটে চলেছে কোশী নদী যেন প্রেমিকের সঙ্গে এক্ষুনি দেখা না করলেই নয়। অবশেষে পৌঁছোই কৌশানী। অতীতে মুনি ঋষিদের আবাসস্থল। কৌসিন মুনি থেকে কৌশানি। উচ্চতা ১৮৯০ মিটার। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। আকাশে হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে চৌখাম্বা নীলকন্ঠ নন্দাঘুন্টি ত্রিশূল মীরাঘুন্টি দেবীদর্শন নন্দাদেবী নন্দাকোট ও পঞ্চচুল্লী। সূর্যাস্তের শেষ আভায় উল্লসিত শৃঙ্গরাজি। আছি 'হিমালয়ান মাউন্ট ভিউ' হোটেলে। চারপাশের দৃশ্য বর্ণনাতীত।  রাতের ছবি কল্পনারও অতীত। কিন্তু সকালে উঠে দেখি মেঘের চাদরে ঘেরা চারপাশ। সঙ্গে টিপটিপ বৃষ্টি। বেরিয়ে পড়ি। পর্বতশীর্ষে আছে গান্ধীজির নামে অনাশক্তি আশ্রম। 

১৯২৯ সালে এখানে পাথরের তৈরি বাড়িতে থেকে লিখেছিলেন  গীতার অনাশক্তি যোগ অধ্যায় এবং ছিলেন ১২ দিন। গান্ধী আশ্রম এখন সংগ্রহশালা কাম  টুরিস্টদের থাকার জায়গা।  সূর্যাস্ত কিংবা সূর্যোদয়ে শৃঙ্গরাজি সবথেকে ভালো দেখা যায় এখান থেকেই। তাই তো মহাত্মা গান্ধী কৌশানিকে তুলনা করেছিলেন সুইজারল্যান্ডের সঙ্গে।  সংগ্রহশালায় আছে গান্ধীজির সঙ্গে অন্যান্য ব্যক্তিবর্গের অজস্র ছবি। যেমন আছে গায়ে জামা ছাড়া ছমাসের শিশু ইন্দিরা-র সঙ্গে তেমনি কাঁধে ধুতি তোলা ভারতীয় ফকিরের সঙ্গে গুঁতিয়ে আসা মাউন্ট ব্যাটেন, যে তৎপরতার সঙ্গে কেউ এগিয়ে আসে সুন্দরী নারীর সঙ্গে ফটো তুলতে। আছে আরো কতো কিছু, হস্তশিল্প সামগ্রী কিন্তু সকালের টিমটিমে আলোয় স্পষ্ট নয়। কারণ ভোর থেকেই চারপাশে মেঘের আলপনায় ঢাকা। পাশেই শিষ্যা সরলা বেনের তৈরি কস্তুরবা গান্ধী আশ্রম ও লাইব্রেরি। ১৯৬৪ সালে তৈরি। এরপরই আমার আপ্লুত হওয়ার পালা যখন ঢুকি সুমিত্রানন্দন পন্থ সংগ্রহশালায়। হিন্দি ভাষার এই কবির জন্ম কৌশানি। জন্মসাল ১৯০০, ২০ মে। শিশু অবস্থায় মাকে হারান। জ্ঞানপীঠ পদ্মবিভূষণ সহ নানা সম্মান সম্মান্বিত। অকৃতদার কবির সময় কাটত কবিতা চর্চা সাহিত্য ও সমাজসেবা নিয়ে। অনেক বিখ্যাত বক্তির সঙ্গে তাঁর ছবি দেখতে দেখতে যখন গাইডের মুখে শুনি সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের নাম,একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে থমকে দাঁড়াই এই ভেবে যে সুনীলদা বিহীন কলকাতা যেন আমার কাছে এক বান্ধবহীন নগরী....

ইউ

অন্দরে সবুজের ছোঁয়া, গরমে মিলবে স্বস্তি

জয় চৌধুরীকে আজীবনের জন্য বয়কটের ঘোষণা সাংবাদিকদের 

যুদ্ধ কোনো সমাধান দিতে পারে না: প্রধানমন্ত্রী

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে সন্তানকে নিয়ে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিলেন মা

বার্সেলোনায় সীফুড এক্সপো গ্লোবালে বাংলাদেশের প্যাভিলিয়ন উদ্বোধন 

বিরল এক মহাজাগতিক ঘটনার সাক্ষী হলো দেশ

আরও ৩ দিন হিট অ্যালার্ট জারি

মিয়ানমার সেনাসহ ২৮৮ জনকে ফেরত পাঠাল বিজিবি

প্রিমিয়ার ব্যাংকের নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও জাফর

ইন্টিলিজেন্স ভিত্তিক পুলিশিং বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

৪১ জেলায় তাপপ্রবাহ, আরও বাড়বে গরমের তীব্রতা

আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কার নারী কাউন্সিলর

সিয়ামের নায়িকা হচ্ছেন বুবলী

বাড়ছে না শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছুটি

বিএফডিসিতে সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় মানববন্ধন