ঢাকা, বাংলাদেশ

বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চ-১৯৭১ এর ভাষণ

মলয়চন্দন মুখোপাধ‍্যায়

প্রকাশিত: ০১:৩৮, ৭ মার্চ ২০২৩

বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চ-১৯৭১ এর ভাষণ

মলয়চন্দন মুখোপাধ‍্যায়:

ঊনিশো একাত্তরের সাতই মার্চ ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ‍্যানে বঙ্গবন্ধু  শেখ মুজিবুর রহমানের আঠারো মিনিটের ভাষণটিকে ইউনেস্কো বিশ্বের কতিপয় ভাষণের মধ‍্যে স্থান দিয়ে ঐতিহাসিক মর্যাদা দিয়েছে।

ভাষণটি লিখিত ছিল না। দেশের এক নাজুক ক্রান্তিলগ্নে বঙ্গবন্ধু স্বতস্ফূর্ত উচ্চারণে ভাষণটি দেন। সামগ্রিকভাবে ত্রুটিহীন ও সময়ের পক্ষে চূড়ান্ত উপযোগী বক্তৃতাটি শুনে মনে হয়, দেবী সরস্বতী যেন তাঁর জিহ্বায় ভর করেছিল, নইলে এরকম বুদ্ধিদীপ্ত অথচ সাবলীল, বাহুল‍্যবর্জিত ও অযথা আবেগহীন (যথার্থ স্থানে আবেগ আছে, তবে আতিশয‍্য নেই একটুও), তন্ময় এবং প্রয়োজনীয় কোনো কিছু বাদ না দিয়ে এমন নিটোল ভাষণ সত‍্যিই অসাধারণ। উপমহাদেশের বহু রাজনৈতিক  নেতার বক্তৃতায় আমরা যে আশ্চর্য মেধা আর অগ্নিস্ফুলিঙ্গের মতো জ্বলে ওঠা দেখি, দেখি জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার যাদুকরী প্রতিভা, সেসব মনে রেখেও বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে অনন‍্যতার মর্যাদা দিতে হয়। আমরা গান্ধী, নেহর, দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাশ, বিপিনচন্দ্র পাল, রাষ্ট্রগুরু সুরেন্দ্রনাথ বন্দ‍্যোপাধ‍্যায়, নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু , শেরে বাংলা ফজলুল হক, মৌলানা ভাসানী প্রমুখ বাঙালির বহু ভাষণ শুনেছি, পড়েছি। বঙ্গবন্ধুর -ও বহু বক্তৃতা অতীতে ও পরবর্তীকালে আমাদের কম মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করে নি। বিশেষ করে আমাদের মনে পড়বে ১৯৬৬- র  সাতই ডিসেম্বর  ছয়দফা ঘোষণার  পর রাওয়ালপিন্ডি থেকে আইয়ুব খানের সঙ্গে  গোলটৈবিল বৈঠকশেষে ফিরে  এসে তিনি রেসকোর্স ময়দানে যে ভাষণটি দেন (এখানেই তাঁকে 'বঙ্গবন্ধু'  অভিধা দেওয়া হয় ), সে ভাষণটিও ছিল তুমুল উদ্দীপনাময় ও গুরুত্বপূর্ণ। 1971 সালে তাঁকে Newsweek পত্রিকা যে  ' Poet of Politics ' বলে আখ‍্যায়িত করে , তাতেই নিহিত রয়েছে তাঁর বাগ্মিতার স্বীকৃতি ও অসাধারণত্ব। মুক্তিযুদ্ধশেষে পাকিস্তানের  কারাগার  থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও দিল্লি হয়ে ঢাকায় ফেরার পর 1972- এর 10- ই জানুয়ারি  যে মর্মস্পর্শী ভাষণটি দেন , তা- ও হৃদ্গত আমাদের। 

ঐতিহাসিক  ছয়দফা (ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬) থেকে একাত্তরের সাতই পর্যন্ত ধাপে ধাপে এগোতে হয়েছিল বঙ্গবন্ধুকে। মধ‍্যে ছিল পাঁচই ডিসেম্বর ১৯৬৯, বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক গুরু হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর জন্মদিনটিতে তিনি যখন পূর্ববঙ্গ তথা পূর্ব পাকিস্তানের  নামকরণ করেছিলেন 'বাংলাদেশ'। ষোলই মার্চ মুজিব-ইয়াহিয়া  বৈঠক শুরু হলো, চললো ২৫ তারিখ পর্যন্ত। এর মধ‍্যে দোসরা মার্চ থেকে পঁচিশে মার্চ তাঁর নির্দেশে সারা দেশে অসহযোগ আন্দোলন পালিত হয়। এ প্রসঙ্গে বঙ্গবন্ধুর  যুক্তি ছিল, 'খুনী ইয়াহিয়া সরকারের হঠকারী ও পাশবিক অত‍্যাচারের প্রতিবাদে আজ থেকে শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন চলতে থাকবে'। 

সাতই মার্চের ভাষণে তিনি যে বলদৃপ্ত ঘোষণা দিয়েছিলেন, যা এখন কিংবদন্তীপ্রতিম হয়ে আছে, সেগুলো নিয়ে  খানিক আলোচনা করা যাক।

তিনি বলেছিলেন, 'ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের  যার যা কিছু আছে, তাই দিয়ে  শত্রুর মোকাবেলা করতে হবে।'
বলেছিলেন, 'আমরা যখন মরতে শিখেছি  তখন কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না।'। আরো: ' ভাতে মারবো, পানিতে মারবো '। এবং ' রাস্তাঘাট যা কিছু আছে সবকিছু আমি  যদি হুকুম দিবার না - ও পারি, তোমরা বন্ধ করে দেবে।' 

বঙ্গবন্ধুর ভাষণে যে সাবলীল বক্তব‍্য উঠে এসেছে, সে ভাষা সাধারণ মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগের  ভাষা। কখনো কখনো তাই তিনি নিতান্ত আটপৌরে শব্দ - ও ব‍্যবহার করেন। 'দাবায়ে রাখতে পারবা না,' অথবা ' হুকুম দিবার না পারি,'কিংবা--' যাতে মানুষ তার মায়নাপত্র নিবার পারে।' মান‍্য চলিত বাংলা  থেকে বেরিয়ে  আসেন মুজিব এইভাবে, 'আপনি' অবলীলায়' তুমি- তে পরিণত হয়, জননায়কের কণ্ঠস্বরের জরুরিত্বে। আসলে বাংলা ভাষাকে সাহিত‍্যিকভাবে মুখের কাছাকাছি আনতে চেয়ে যেমন কালীপ্রসন্ন সিংহ , স্বামী  বিবেকানন্দ, প্রমথ চৌধুরী লিখে গেছেন, সেই এক-ই তাগিদ থেকে বঙ্গবন্ধু -ও তাঁর লেখায় ও ভাষণে  যতোদূর সম্ভব আম জনতার ভাষা ব‍্যবহার করে গেছেন। বিষয়টি সাতই মার্চের ভাষণপ্রসঙ্গে যথেষ্ট  বিবেচনাযোগ‍্য।

আরো একটি বিবেচনার বিষয় আছে, যা আমরা প্রায়শ এড়িয়ে যাই। ভাষণটিতে হিন্দু -মুসলমানের প্রতি বঙ্গবন্ধুর সমদর্শিতার কথা যেমন  আছে , তেমনি পশ্চিম পাকিস্তানি  সৈন‍্যদের প্রতিও আছে ভ্রাতৃপ্রতিম উক্তি, কেননা তিনি জানেন , সৈনিকেরা নিজেরা অপরাধী নন, হুকুমের  দাস মাত্র। ওই বেপথু সময়েও তিনি পাক সৈন‍্যদের একথা বলতে ভোলেন নি, 'তোমরা আমার ভাই, তোমরা ব‍্যারাকে থাকো, কেউ তোমাদের  কিছু বলবে না '। সৈন‍্যরা নন, আসল শত্রু ইয়াহিয়া। ভাষণটিতে তাঁকে কিন্তু  বঙ্গবন্ধু রেয়াত করেন নি। এজন‍্যই প্রাজ্ঞ রাজনীতিবিদ বলতে হবে তাঁকে।

আব্রাহাম লিঙ্কনের গেটসবার্গ বক্তৃতার সঙ্গে অনেকে বঙ্গবন্ধুর ভাষণটিকে তুলনা করেন। কিন্ত লিঙ্কনের ভাষণটির স্থায়িত্ব ছিল সাত মিনিট, এবং সেটি ছিল লিখিত ভাষণ। কম করে পাঁচ-ছবার লিখন পুনর্লিখনের পরে সেটি চূড়ান্ত রূপ পায়। লিঙ্কনের নিজের  হাতে লেখা একাধিক পাণ্ডুলিপি পাওয়া গেছে। অপরদিকে বঙ্গবন্ধুর  যে আঠারো মিনিটের  বক্তৃতা, গোড়াতেই বলা হয়েছে, তা ছিল জনতার সামনে দাঁড়িয়ে মুখে মুখে বলা। রেসকোর্সে সেদিন দশলক্ষ শ্রোতা-দর্শকের সমাগম হয়েছিল বলে প্রত‍্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন। ঐ বিশাল জনতার মধ‍্যে বঙ্গবন্ধু যে একবিন্দু না থেমে এতো সময় ধরে বলে গেলেন, তাকে' আশ্চর্য' ছাড়া আর অন‍‍্য কোনো শব্দে প্রকাশ করা যায় না।

//জ//

লোহিত সাগর পাড়ি দিতে গিয়ে নৌকা ডুবে ৩৩ প্রাণহানি

ববিতার প্রাণ গেল ছিনতাইকারীদের হাতে

রানা প্লাজা ট্রাজেডি: মোমবাতি জ্বালিয়ে নিহতদের স্মরণ

আজ থাইল্যান্ড যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে ট্রান্সজেন্ডার নারীর আত্মহত্যা

যেভাবে দেশে ফিরবেন ২৩ নাবিক

তাপদাহে গলে গেছে সড়কের পিচ, আটকে যাচ্ছে জুতা

সন্ন্যাসী হতে ২০০ কোটির সম্পত্তি বিলিয়ে দিলেন দম্পতি

তাপদাহে অগ্নি দুর্ঘটনা এড়াতে সচেতনতামূলক  সভা

সরিষাবাড়ীতে চেয়ারম্যান প্রার্থী রফিকের নির্বাচনী গণসংযোগ

বিকাশে নিয়োগ, আবেদন করা যাবে অভিজ্ঞতা ছাড়াও 

গরমে পেট ঠান্ডা রাখতে বেলের ৩ পদ 

ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে যা জানাল বাংলাদেশ ব্যাংক

ইন্টারনেটে ধীর গতি, এক মাস চলতে পারে ভোগান্তি

এফডিসিতে মারামারি, বেশ কয়েকজন সাংবাদিক আহত