ছবি: মিথ বাস্তবতা’ শীর্ষক এক সেমিনারে...
পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেছেন, ‘সরকারপ্রধান দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। তাই আমি মনে করি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) পরিচালনা পর্ষদে যেসব সচিব আছেন তাদের সরে আসা উচিত। এই কোম্পানিতে সরকারের যে বিনিয়োগ আছে সেখান থেকেও বের হয়ে আসা দরকার। বহুজাতিক সিগারেট কোম্পানি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো বাংলাদেশের (বিএটিবি) পরিচালনা পর্ষদ থেকে সচিবদের বেরিয়ে আসা উচিত। তামাক নিয়ন্ত্রণ ও সরকারের নীতিতে যাতে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ না হয় সেজন্যই এমন পদক্ষেপ থাকা উচিত।'
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি কনফারেন্স রুমে বুধবার (৩০ নভেম্বর) 'তামাক কোম্পানি সিএসআর, মিথ বাস্তবতা' শীর্ষক এক সেমিনারে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান এমন কথা বলেন।
এম এ মান্নান বলেন, ‘সরকারপ্রধান দেশকে তামাকমুক্ত করার ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রীর কমিটমেন্ট মানে আমাদের সবার কমিটমেন্ট। তাই আমি মনে করি ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোর পরিচালনা পর্ষদে যেসব সচিব আছেন তাদের বের হয়ে আসা উচিত। সময়-সুযোগ হলে বিষয়টি আমি তুলব।’
এছাড়া ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকোতে সরকারের যে বিনিয়োগ আছে সেখান থেকেও বের হয়ে আসা উচিত বলে মনে করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘বিএটিবিতে সরকারের একেবারেই সামান্য শেয়ার আছে। আমি এটা প্রত্যাহারের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘বিদেশে মানি ট্রান্সফারের বিষয়ে শুধু তামাক খাত নয়, অন্য খাতগুলোকেও গুরুত্ব দিয়ে দেখতে হবে। নবম পঞ্চবার্ষিকীতে কীভাবে তামাক নিয়ন্ত্রণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা যায় তা নিয়ে সবাইকে ভাবতে হবে।’
‘তামাক কোম্পানির সিএসআর: মিথ ও বাস্তবতা’ শীর্ষক এই সেমিনার যৌথভাবে আয়োজন করে ওয়ার্ক ফর বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট ও ইনিশিয়েটিভ ফর পাবলিক হেলথ রিসার্চ অ্যান্ড কমিউনিকেশন (আইপিএইচআরসি)।
সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন তামাক নিয়ন্ত্রণ গবেষক ও একাত্তর টেলিভিশনের বিশেষ প্রতিনিধি সুশান্ত সিনহা। তিনি ‘তামাক কোম্পানির সিএসআর, মিথ ও বাস্তবতা: বিএটিবি-র ১০ বছরের আর্থিক প্রতিবেদন বিশ্লেষণ’ শীর্ষক গবেষণার ফল উপস্থাপন করেন।
সুশান্ত সিনহা বলেন, ‘বছরে মাত্র ৬ কোটি টাকা সিএসআর ব্যয় করে ফলাও করে প্রচার করে বিএটিবি। সরকার যখন তামাক নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেয় তখন সিএসআরে ব্যয় বৃদ্ধি করে বিএটিবি। ইতোমধ্যে বিশ্বের ৬২টি দেশ সিএসআর নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে তামাক কোম্পানি নামে-বেনামে কৌশলে তাদের সিএসআর কার্যক্রম পরিচালনা করছে।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী বলেন, ‘আমি যেসব পলিসি নিয়ে কাজ করছি সেগুলো সরকারের জন্য খুবই দরকারি হলেও এসব খাতে তেমন কোনো উন্নতি হয়নি। এনবিআরের কোনো কর্মকর্তা ট্যাক্স নিয়ে কথা শুনতে চান না।’
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল (এনটিসিসি)-এর সমন্বয়কারী (অতিরিক্ত সচিব) হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘যখন সরকার তামাক নিয়ন্ত্রণে কোনো পদক্ষেপ নেয় তখন তামাক কোম্পানি সিএসআর বাড়িয়ে দেয়- এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ফাইন্ডিংস। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে এনটিসিসি ইতোমধ্যে রোডম্যাপ প্রণয়নে কাজ শুরু করেছে। সরকারের সব প্রতিষ্ঠানের উচিত প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের তামাকমুক্ত দেশ গড়ায় সহায়তা করা।’
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. নাসির উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘তামাক কোম্পানির রাজস্ব দেয়া নিয়ে অনেক বিভ্রান্তি হয়। এ খাত থেকে টাকা এলেও জনস্বাস্থ্যের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া যায় না। তামাকের বিকল্প খাত থেকে রাজস্ব আয় করতে সরকারকে নতুন খাতের খোঁজ করতে হবে।’
আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্য ইউনিয়নের কারিগরি পরামর্শক অ্যাডভোকেট সৈয়দ মাহবুবুল আলম তাহিন বলেন, ‘আমরা ট্যাক্স বাড়ানোর কথা বললে তামাক কোম্পানি নানা ধরনের তথ্য প্রচার করে। তারা সিএসআর নিয়ে প্রচার বাড়ায়। তাদের ব্যবসা প্রতিবছর বহু গুণে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাদের হস্তক্ষেপ বন্ধ করতে হবে।’
---শাওন---
ইউ