
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বর মাসে সাংবাদিকদের ওপর হামলা, হুমকি ও হয়রানির সংখ্যা কিছুটা কমেছে। আগস্টে যেখানে এই সংখ্যা ছিল ৯৬, সেপ্টেম্বরে নেমে এসেছে ৬৩-তে। একইভাবে মামলার সংখ্যা তিন থেকে এক এবং গ্রেপ্তার দুই থেকে একে নেমেছে। অর্থাৎ সাংবাদিক নির্যাতনের প্রবণতা সামান্য হ্রাস পেয়েছে।
তবে রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তারের চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলন সম্পর্কিত মামলায় আগস্টে যেখানে ২২৩ জন গ্রেপ্তার হয়েছিল, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৫৯৭-এ। সরকার পতনের পর সহিংসতা সংশ্লিষ্ট মামলাতেও আসামির সংখ্যা আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে—আগস্টে নামসহ আসামি ছিল ৮৬ জন, সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪৮৬-এ। এ ছাড়া অজ্ঞাতনামা আসামি হিসেবে আরও প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।
আহতের সংখ্যায় কিছুটা স্বস্তির খবর আছে। আগস্টে আহতের সংখ্যা ছিল ৫৪৭, সেপ্টেম্বরে তা কমে দাঁড়িয়েছে ২৯৪-এ। সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক বাংলাদেশিদের পুশইনও আগস্টের ৩৩ থেকে সেপ্টেম্বরে কমে দাঁড়িয়েছে ১০৭-এ। সীমান্তে হত্যাকাণ্ডও পাঁচ থেকে একে নেমেছে। তবে আরাকান আর্মির হাতে বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নেওয়ার ঘটনা বেড়েছে—আগস্টে ৫১ জন থেকে সেপ্টেম্বরে তা দাঁড়িয়েছে ৫৮ জনে।
অন্যদিকে প্রতিমা ভাঙচুর আগস্টে শূন্য থেকে সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৯-এ। নারী ও শিশু নির্যাতনের ঘটনাতেও বৃদ্ধি দেখা গেছে। ধর্ষণ আগস্টে ৪৭ থেকে সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৩, যৌন নিপীড়ন ২১ থেকে ২৪, হত্যার ঘটনা ৭৩ থেকে বেড়ে ৮৩, যদিও আত্মহত্যা সামান্য কমেছে—৪১ থেকে ৩৯। নতুন করে এসিড নিক্ষেপের মতো ভয়াবহ সহিংসতা যুক্ত হয়েছে।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও বেড়েছে। সেপ্টেম্বরে অন্তত পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে, যার মধ্যে দুইজন আত্মহত্যা করেছেন বলে জানা গেছে। তিন বন্দির ওপর নির্যাতনের অভিযোগ আদালতে গৃহীত হয়েছে এবং তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া গ্রেপ্তার এড়াতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভয়ে পানিতে ঝাঁপ দিয়ে তিনজন নিহত হয়েছেন।
রাজনৈতিক সহিংসতায় নিজের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ভেতরের দ্বন্দ্ব ও দুষ্কৃতিকারীদের হাতে নেতাকর্মীদের হতাহতের ঘটনাও অব্যাহত রয়েছে। সংখ্যালঘুদের বাড়িঘর ভাঙচুর, লুটপাট ও জমি দখলের অভিযোগও পাওয়া গেছে। সীমান্তে হতাহতের ঘটনা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি।
গণপিটুনি ও মব সহিংসতার মতো আইন হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতাও বাড়ছে, যার ফলে নিহত ও আহতের সংখ্যা বেড়ে নাগরিকদের নিরাপত্তাহীনতা বাড়াচ্ছে। নতুনভাবে মব সন্ত্রাস যুক্ত হয়েছে—মাজার ও আখড়ায় আক্রমণ, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটছে।
এমএসএফের পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, রাজনৈতিক মামলা ও গ্রেপ্তার, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে মৃত্যু, সংখ্যালঘু নির্যাতন এবং নারী-শিশু সহিংসতা সেপ্টেম্বরে উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। অন্যদিকে সাংবাদিক নির্যাতন, বিএসএফ পুশইন এবং সীমান্তে হত্যার সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিরোধ ও নাগরিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সমমর্যাদার নিশ্চয়তা দেওয়ার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানিয়েছে সংস্থাটি।
ইউ