
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশে পরিবেশ ও জলবায়ুজনিত প্রভাব নিয়ে কাজ করবে ইসিডি নেটওয়ার্ক। জলবায়ু পরিবর্তন নিয়ে কাজ করার জন্য ন্যাশনাল ওয়াকিং গ্রুপ এর কার্যকর ভূমিকার জন্য গণমাধ্যমসহ নেটওয়ার্ক শক্তিশালী করতে জোর দিয়েছেন ড. মনজুর আহমেদ।
বুধবার (১৮ জুন) সকালে বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়াক (বেন) এর আয়োজনে ইনডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ (আইইউবি), ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড ডেভেলপমেন্ট এবং এশিয়া প্যাসিফিক রিজিওনাল নেটওয়াক ফর আর্লি চাইল্ডহুডের সহযোগিতায় রাজধানীর আইইউবি’র মিলনায়তনে ‘ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট’ এর জাতীয় সেমিনারে এ মন্তব্য করেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন ড. মনজুর আহমেদ।
সূচনা ও স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের কোষাধ্যক্ষ ও নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির পাবলিক হেলথ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক
অধ্যাপক ড. এসএম সাইদুর রহমান মাশরেকী। "মাল্টি-সেক্টরাল ওয়ার্কিং গ্রুপ ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ অ্যান্ড ইসিডি" উদ্বোধন করেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের চেয়ারপারসন ড. মনজুর আহমেদ । বিশেষ অতিথির বক্তব্য দেন ওয়াটারএইডের দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক পরিচালক খায়রুল ইসলাম এবং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশের ভাইস চ্যান্সেলর অধ্যাপক এম. তামিম ।
প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এশিয়া-প্যাসিফিক রিজিওনাল নেটওয়ার্ক ফর আর্লি চাইল্ডহুডের (আর্নেক) প্রোগ্রাম অ্যান্ড পার্টনারশিপ স্পেশালিস্ট ড. নীলিমা চোপড়া । ক্লাইমেট চেঞ্জ এন্ড আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ ইসিডি নেটওয়ার্কের (বেন) ভাইস-চেয়ার মাহমুদা আখতার। বেন এর নির্বাহী কমিটির সদস্য ও আইইউবির ফার্মেসি অ্যান্ড পাবলিক হেলথ স্কুলের ডিন ড. কামরান উল বাসেতের সঞ্চালনায় উন্মুক্ত আলোচনায় অংশ নেন সেভ দ্য চিলড্রেনের মোহাম্মদ ওমর ফারুক, আসিফ মঈনুল চৌধুরী, বিশিষ্ট গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব ও গণমাধ্যম বিষয়ক উন্নয়ন সংগঠন সমষ্টি ফাউন্ডেশন এর নির্বাহী পরিচালক মীর আত্তাকী মাসরুরুজ্জামান,
দৈনিক ইত্তেফাকের স্টাফ রিপোর্টার রাবেয়া বেবী, রূপালী বাংলাদেশ এর সিনিয়র রিপোর্টার স্বপ্না চক্রবর্তী প্রমুখ।
সমাপনী বক্তব্য দেন আইইউবির পরিবেশ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রধান ও ফোকাল আইসিসিসিএডি) অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান । এছাড়াও সমষ্টি এর সমন্বয়ক জাহিদুল হক খান প্রমুখসহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়, আন্তর্জাতিক ও জাতীয় উন্নয়ন সংগঠন এর নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
ড. মনজুর আহমেদ বলেন, জলবায়ু পরিবতনের অভিঘাত শিশুদের উপর বেশি প্রভাব পড়ে। জলবায়ু পরিবতন একটা অস্তিত্বের সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জীবনে।
শিশুদের উপর জলবায়ুর যে প্রভাব সেক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি, করনীয় এ নিয়ে তেমন যথেষ্ট আকারে আলোচনা হচ্ছে না।
তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবতনে যে নানারকম অভিঘাত প্রভাবিত করছে আমাদের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে। কিন্তু এটি শিশুদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করছে । এই প্রস্তাব অনুযায়ী বিশিষ্ট ১২ ব্যক্তিকে নিয়ে জলবায়ু এবং শিশু বিকাশ সম্পর্কিত করণীয় বিষয়ে জাতীয় মাল্টিসেক্টরাল ওয়াকিং গ্রুপ তৈরি করা হয়েছে।
মাহমুদা আখতার বলেন, একজন শিশুর উন্নয়ন নিভর করে তার মা-বাবার সম্পর্কের উপর। আমাদের ভালোবাসা শিশুর সামনে প্রকাশ করতে হবে। শিশুকে বাইরে বেড়াতে যাওয়া, তার কথা শোনা, তাকে সময় দেওয়া, খেলার জন্য জায়গা রাখা, খেলতে দেওয়া। এরফলে শৈশবে শিশুর ব্রেইন দ্রুত ডেভেলপমেন্ট করবে। শিশুর মস্তিষ্কের গ্রোথ আকারে বড় হয়। বাবা-মা এগুলো বন্ধ করে দিলে তার ব্রেইন আর ডেভেলপমেন্ট হবে না।
আমাদের দেশে বড় চ্যালেঞ্জ মন্ত্রণালয়গুলো আলাদাভাবে কাজ করছে। এই মন্ত্রণালয়গুলোকে একসাথে নিয়ে কাজ করতে হবে।
খায়রুল ইসলাম বলেন, নেটওয়ার্কের একটা ফোকাস থাকতে হবে। তারা কোন বয়সী শিশুদের নিয়ে ক্যাম্পেইন করবে। শ্রীলঙ্কার একটি বিদ্যালয়ের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, সেখানে তিনবার ঘণ্টা বাজানো হয় শিক্ষার্থীদের পানি পান করানোর জন্য। এই চর্চাগুলো আমাদের দেশেও অনুশীলন করতে হবে।
অধ্যাপক এম. তামিম বলেন, জলবায়ু পরিবতন একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষকে যতটা অভিঘাত করবে তার চেয়েও বেশি অভিঘাত করবে একজন শিশুকে।
তিনি বলেন, প্রাক প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের শিশুর প্রাক শৈশব সম্পর্কে কোনো ধারণা নেই। এ বিষয়ে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের প্রতি গুরুত্ব দেন তিনি।
মীর আত্তাকী মাসরুরুজ্জামান জাতীয় স্বক্ষমতা তৈরি করে সমন্বিতভাবে কাজ করার জন্য সুপারিশ করেন।
তিনি আরো বলেন, উন্নয়নের স্থায়ীত্ব নিশ্চিত করতে প্রয়োজনে দাতা নির্ভরতা কমিয়ে আমাদের দেশীয় সম্পদ কাজে লাগিয়ে সুন্দর শিশুবান্ধব দেশ গড়তে হবে।
মীর আত্তাকী মাসরুরুজ্জামান বলেন, আমাদের সময় শৈশব আনন্দময় শৈশব চাইতাম। এখনকার শৈশব দুর্ভোগমুক্ত শৈশব চাই। আমাদের শিশুদের প্রারম্ভিক বিকাশে প্রধান বাধা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো শিশুবান্ধব না হওয়া। আমরা বড় হতে হতে এমন দুর্ভোগ জীবনে যুক্ত হয়েছি, এখন আনন্দময় জীবনের বদলে এখন দুর্ভোগ দূর করাটাই এখন জাতির সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে আমাদের জন্য। তিনি আরো বলেন, জলবায়ু পরিবতনের শিকার প্রজন্ম ও শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ এবং তাদের পরবতী সময়ে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য তাদের গড়ে তোলার প্রত্যয়।
সেই প্রত্যয়ে উন্নয়ন কর্মীরা যেমন যুক্ত হয়েছেন, তেমনি সমষ্ঠি গণমাধ্যম ও উন্নয়ন সংগঠনও সমাজের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কণ্ঠস্বর তুলে ধরে নীতি নির্ধারণী মহলে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছে। জনস্বাথ সাংবাদিকতার প্রসারে কাজ করছে।
তিনি আরো বলেন, গণমাধ্যমে এই সময়ের বড় চ্যালেঞ্জ হলো প্রান্তিক মানুষের কণ্ঠস্বর। আমরা যদি গণমাধ্যমের কনটেন্ট বিশ্লেষণ করি, সমাজের উপরের স্তরের মানুষের কণ্ঠস্বরই গণমাধ্যমের সমস্ত কনটেন্ট শেষ হয়ে যায়। প্রান্তিক মানুষের কনটেন্ট থাকে না।
জনস্বাথ সাংবাদিকতার অংশ হিসেবে আমরা শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ, পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধ, শিশুর জন্য পুষ্টির নিশ্চয়তা, শিশুর মানসিক বিকাশ নিয়ে আমরা কাজ করেছি।
অধ্যাপক ড. মো. হাফিজুর রহমান সমাপনী বক্তব্যে বলেন, ন্যাশনাল ওয়াকিং গ্রুপ ভবিষ্যতে জলবায়ু পরিবতনে শিশুর উপর প্রভাব নিয়ে কিভাবে কাজ করা যায়।
ইউ