ঢাকা, বাংলাদেশ

সোমবার, , ১৯ মে ২০২৫

English

জাতীয়

‘সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন’

উইমেনআই প্রতিবেদক

প্রকাশিত: ১৮:১৫, ১৯ মে ২০২৫; আপডেট: ১৮:১৬, ১৯ মে ২০২৫

‘সামগ্রিক পানি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন ও জনসম্পৃক্ততা প্রয়োজন’

ছবি সংগৃহীত

ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট নিরসন এবং ভবিষ্যত নিরাপদ পানির অপ্রতুলতা প্রশমনে ব্যক্তি পর্যায় থেকে পানির অপব্যবহার বন্ধের চর্চা শুরু করার দাবি জানিয়েছেন গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা। ভূ-গর্ভস্থ পানি সুরক্ষার গুরুত্ব অনুধাবন করে তারা আরও বলেন, যে সকল ফসল ও শস্য উৎপাদনে পানি কম প্রয়োজন সেই সব ফসল ও শস্য উৎপাদনে কৃষকদের উৎসাহিত করতে হবে সরকারিভাবে এবং দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চাহিদানুযায়ী খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হলে দক্ষ প্রযুক্তি ও কার্যকরী পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।

এএলআরডি ও বেলা’র যৌথ আয়োজনে এবং পানি অধিকার ফোরামের উদ্যোগে আজ ১৯ মে ২০২৫ ঢাকাস্থ সিরডাপ এর এটিএম শামসুল হক মিলনায়তনে “ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট: কৃষি ও পরিবেশের ওপর প্রভাব মোকাবেলায় করণীয়” অনুষ্ঠিত হয়েছে। আলোচনায় অংশগ্রহণকারী বক্তারা ভূ-গর্ভস্থ পানি সুরক্ষায় তাদের মতামত ব্যক্ত করেছেন।

মূল প্রবন্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. চৌধুরী মো. সারোয়ার জাহান বলেন, “বাংলাদেশের বরেন্দ্র এবং উপকূলীয় অঞ্চলে ভূ-গর্ভস্থ পানির সংকট ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে, যার ফলে পানির প্রাপ্যতা ক্রমেই হ্রাস পাচ্ছে। পানির অধিকার একটি মানবাধিকার, আর তা নিশ্চিত না হলে অভ্যন্তরীণ সংঘর্ষ ও সামাজিক অস্থিরতা বাড়বে। দেশের ৯৭% মানুষ পানীয় জল এবং ৮০% কৃষির সেচের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভর করে। বরেন্দ্র অঞ্চলে বিশেষ করে বোরো ধান চাষের সময় (মার্চ-মে) অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের কারণে পানির স্তর ৭-৮ মিটার পর্যন্ত নিচে নেমে যায়, ফলে অনেক নলকূপ শুকিয়ে যায় এবং মানুষ নিরাপদ পানির সংকটে পড়ে। একইভাবে, উপকূলীয় অঞ্চলের ৫৩% এলাকায় লবণাক্ততা বেড়ে গেছে, যা কৃষিজমি ও ফসল উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত, দীর্ঘ খরা এবং পানির সঠিক ব্যবস্থাপনার অভাব এই সংকটকে আরও তীব্র করছে। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ভূ-গর্ভস্থ পানির ওপর নির্ভরতা কমিয়ে পুকুর ও খাড়ি পুনঃখনন, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ, নদীর পানি দিয়ে সেচ এবং ড্রিপ সেচ, অডউ পদ্ধতির মতো পানির সাশ্রয়ী কৃষি প্রযুক্তি ব্যবহার বৃদ্ধির সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে পানি আইন ২০১৩ ও পানি বিধিমালা ২০১৮ এর কার্যকর বাস্তবায়ন এবং অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনার ওপর জোর দেওয়া প্রয়োজন। এই পদক্ষেপগুলো এসডিজি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।”
রিভারাইন পিপল এর মহাসচিব শেখ রোকন বলেন, ঢাকা ওয়াসা ৭১ শতাংশ পানি ভূ-গর্ভস্থ থেকে উত্তোলন করলেও মেঘনা নদী থেকে পানি আনতে হচ্ছে, কারণ অতিরিক্ত উত্তোলনের ফলে পানির স্তরর দ্রুত নিচে নেমে যাচ্ছে। ডিজেল চালিত সেচ পাম্পের জায়গা বিদ্যুৎচালিত সেচ পাম্প দখল করে নিয়েছে। তাই, খরচ কমে যাওয়ায় এবং নজরদারির অভাবে সেচের পানি ব্যবহারের মাত্রা বেড়েছে।

পানির সুশাসনে নারীর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে এএলআরডি’র উপ-নির্বাহী পরিচালক রওশন জাহান মনি বলেন, গ্রামীণ নারীদের ৭২% কৃষিতে যুক্ত এবং তারা মূলত ভূ-পৃষ্ঠের পানি ব্যবহার করে টেকসই চাষে অবদান রাখছে। নারীদের এই প্রচেষ্টাকে স্বীকৃতি দিয়ে অন্তর্ভূক্তিমূলক পানি নীতিতে তাদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ইনসিডিন বাংলাদেশ এ কে এম মাসুদ আলী বলেন, পানি সুশাসনে ৫টি ‘প’ গুরুত্বপূর্ণ- প্রাধান্য, প্রক্রিয়া, প্রযুক্তি, প্রতিষ্ঠান ও প্রয়োগ; যেখানে কৃষক, নারী, আদিবাসী, প্রান্তিক মানুষ ও পরিবেশকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। প্রযুক্তির সীমাবদ্ধতা, প্রতিষ্ঠানগুলোর সমন্বয়ের অভাব ও প্রয়োগের অদক্ষতা দূর করে অন্তর্ভূক্তিমূলক ও কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে।
বুয়েটের অধ্যাপক ড. শাহাজাহান মন্ডল বলেন, সমন্বিত পানি ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে বরেন্দ্র এলাকায় বোরো ধানের আবাদ বন্ধ ও খাল পুনঃখননের মতো উদ্যোগ গ্রহণ করা যেতে পারে। স্থানীয় জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে আইন, নীতি ও প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে পানির টেকসই ব্যবহার ও সংরক্ষণের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন জরুরি।

জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মীর আব্দুস সাহিদ বলেন, দেশে বছরে ৩২ বিলিয়ন ঘনমিটার ভূ-গর্ভস্থ পানি উত্তোলন হয়। তিনি কম পানি প্রয়োজন এমন শস্য চাষে কৃষকদের উৎসাহিত করার মাধ্যমে সম্পদের যথার্থ ব্যবহার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. কামরুজ্জামান মনে করেন, দেশের পানি সংকট মূলত ব্যবস্থাপনার অভাবে সৃষ্টি হয়েছে। ধানের চাহিদা ও জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে কার্যকর পানি ব্যবস্থাপনা এখন সময়ের প্রয়োজন।

পানি সম্পদ পরিকল্পনা সংস্থার পরিচালক শাহ্ মোজাহিদ উদ্দিন জানান, বিদ্যমান পানি নীতি, পানি আইন ও বিধিমালা হালনাগাদের পাশাপাশি পানির বাণিজ্যিক ও গৃহস্থালী ব্যবহারের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণে সরকার কাজ করছে।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী পরিচালক মো. তরিকুল আলম জানান, উত্থাপিত সুপারিশসমূহ বোর্ড সভায় উপস্থাপন করে বাস্তবায়নের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে এলআরডির নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা সভায় বলেন, পানির সুশাসন নিশ্চিত করতে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মধ্যে কার্যকর সমন্বয় প্রয়োজন। বর্তমানে সমন্বয়হীনতার কারণে যত্রতত্র পানির প্লান্ট বসিয়ে বাণিজ্যিকভিত্তিতে পানি উত্তোলন করে পানির ব্যবসা করা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পরিকল্পনাহীনভাবে হাউজিং, বাজার ও কলকারখানা গড়ে উঠছে, যা দেশের জন্য হুমকি। পানির সমস্যা বিশেষত নারী, আদিবাসী ও প্রান্তিক কৃষকদের ওপর গভীর প্রভাব ফেলে; তাই তাদের দৃষ্টিকোণ থেকে পানির সংকট বিশ্লেষণ করা জরুরি। নদী ও জলাধার দখল ও দূষণমুক্ত রাখতে হবে এবং প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীদের পানির সমস্যা সমাধানে সক্রিয়ভাবে যুক্ত করতে হবে।

বেলার প্রধান নির্বাহী তাসলিমা ইসলাম বলেন, আমরা চাই নদীগুলো ফিরে আসুক, পানি ফিরে আসুক এবং পরিবেশ সুস্থ্য হোক। দেশে যথেষ্ট আইন থাকলেও বাস্তবায়নে ঘাটতি রয়েছে। তাই ভূ-পৃষ্ঠের পানি রক্ষা করা এবং আন্তঃসীমান্তীয় নদী ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি।

এছাড়াও, এ গোলটেবিল বৈঠকে রাজশাহী, চাপাইনবাবগঞ্জ, নওগাঁ, বগুড়া, রংপুর, পাবনা, হবিগঞ্জ, ময়মনসিংহ, সাতক্ষীরা জেলা থেকে আগত প্রতিনিধিদের মধ্যে আফজাল হোসেন, জিয়াউর রহমান, রাজকুমান শাঁও, বিচিত্রা তির্কি, রেবেকা সুলতানা, প্রমূখ বক্তব্য রেখেছেন।

ইউ

মোরেলগঞ্জে শুরু হলো ৩ দিনব্যাপী কৃষি মেলা

জাতীয় ঐকমত্যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে দ্বিমত নেই: আলী রীয়াজ

কাশিমপুর কারাগারে নুসরাত ফারিয়া

ব্যালন ডি’অরে নারী–পুরুষ সমতা

আসিফকে অপদস্ত কইরেন না: হাসনাত 

রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত

বেনাপোলে দুই কোটি টাকার চোরাচালানি পণ্য জব্দ

বানারীপাড়া উপজেলার ভোকেশনাল শাখার শ্রেষ্ঠ শিক্ষার্থী হাবিবা

স্পেনে প্রায় চার লাখ অভিবাসী পেতে পারেন বৈধতার সুযোগ

‘সমাজের অবহেলিত নারীদের কল্যাণে সরকার কাজ করছে’

১০ এসপিকে অতিরিক্ত ডিআইজির দায়িত্বসহ ১৭ কর্মকর্তাকে বদলি

টরন্টোতে রবীন্দ্রনাথের জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে ‘রবিপ্রণাম’

পাচার ও লুটের অর্থে ক্ষতিপূরণ তহবিল গঠনের উদ্যোগ: গভর্নর

এনসিপি ‘সেকুলারিস্ট’ নয়, ‘ধর্মতান্ত্রিকও’ নয়: নাহিদ ইসলাম

তামাক পণ্যের কার্যকর কর ও মূল্য বৃদ্ধির দাবি