
সংগৃহীত ছবি
বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবসে সাংবাদিকদের দায়বদ্ধতার প্রসঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা দিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। রোববার ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) আয়োজিত ‘ব্রেভ নিউ বাংলাদেশ: রিফর্ম রোড ম্যাপ ফর প্রেস ফ্রিডম’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, “সংবাদমাধ্যমের নীতিনির্ধারণী স্তরেও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকা উচিত। পার্লামেন্ট, বিচার বিভাগ বা নিরাপত্তা বাহিনীকে যেমন প্রশ্ন করা যায়, সাংবাদিকদেরও প্রশ্ন করার সুযোগ থাকতে হবে।”
সভায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ, যেখানে তিনি গণমাধ্যম খাতে তাৎক্ষণিক ও দীর্ঘমেয়াদি সংস্কারের জন্য সুপারিশ তুলে ধরেন।
আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর কিছু সাংবাদিকের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া হত্যা ও হত্যাচেষ্টার মামলা নিয়ে আলোচনায় উঠে আসে। এ প্রসঙ্গে মাহফুজ আলম বলেন, “মূল অভিযোগ বাদ দিয়ে হত্যা মামলা করা হচ্ছে, যা সরকারের জন্যও অস্বস্তিকর। আমরা বিষয়টি স্বরাষ্ট্র ও আইন মন্ত্রণালয়ে তুলে ধরেছি। মামলা হওয়া এবং বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু হওয়া এক বিষয় নয়। কেউ আটক থাকলে তা আইন অনুযায়ী হচ্ছে কি না, সেটিই বড় প্রশ্ন।”
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সরকারি বিজ্ঞাপনের নামে বিপুল অর্থ লুটপাট হয়েছে বলে মন্তব্য করেন তথ্য উপদেষ্টা। তিনি জানান, ভুয়া সার্কুলেশন সংখ্যা দেখিয়ে অনেক সংবাদমাধ্যম রাষ্ট্রের অর্থ আত্মসাৎ করেছে।
“দেড় লাখ সার্কুলেশন দেখিয়ে ৯৫০ টাকা হারে বিজ্ঞাপন নেয়া হয়েছে, অথচ প্রকৃত পাঠক দুই হাজারও না। মন্ত্রী বা উচ্চপদস্থ ব্যক্তিদের চাপের মাধ্যমে সার্কুলেশন বাড়িয়ে দেখানো হয়েছে,”—বলেন মাহফুজ আলম। তিনি জানান, এই অপব্যবহারের পেছনে ‘পলিটিক্যাল ইকোনমি’ গড়ে উঠেছিল এবং এই বিষয়ে শিগগিরই একটি ফ্যাক্ট-ফাইন্ডিং কমিটি গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে। কমিটি হয়তো সরকারের পক্ষ থেকে অথবা জাতিসংঘের সহায়তায় গঠিত হতে পারে।
তথ্য উপদেষ্টা আরও বলেন, গত ১৫ বছরে দেশের গণমাধ্যম কীভাবে রাজনীতিকরণ হয়েছে এবং তা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, তা নিরীক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে।
“সংবাদকর্মীরা কতটা চাপের মধ্যে ছিলেন, কোন সংবাদমাধ্যম কী ধরনের সম্পাদকীয় নীতি নিয়েছিল, এসব জানা দরকার। মানুষ এসব জানতে চায়,” উল্লেখ করেন তিনি।
আলোচনা সভায় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন ইউনেস্কোর বাংলাদেশ প্রতিনিধি সুশান ভাইজ, সুইডেনের রাষ্ট্রদূত নিকোলাস উইকস, এএফপির ব্যুরো প্রধান শেখ সাবিহা আলম এবং টাইমস মিডিয়া গ্রুপের চেয়ারম্যান একে আজাদ।
//এল//