ছবি সংগৃহীত
বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবনের আগুন পুরোপুরি নেভানো সম্ভব হয়েছে এবং বনের কোথাও আর ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন বন বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
আগুনে বিশ্বের সবচেয়ে বড় ম্যানগ্রোভ বনের জৈববৈচিত্র্য ও গাছপালার ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য সোমবার বিকাল নাগাদ প্রধান বন সংরক্ষকের পক্ষ থেকে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে উচ্চ পর্যায়ের একটি কমিটি গঠন করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, সুন্দরবনে এই মুহূর্তে আগুনের অস্তিত্ব নেই। কোথাও ধোঁয়াও দেখা যাচ্ছে না।
সোমবার (৬ মে) সকাল থেকে অগ্নিকাণ্ডের বিভিন্ন এলাকায় পানি ছিটানোর কাজ শুরু হয়। সকাল সাতটার দিকে বনের দুই থেকে তিনটি স্থানে ধোঁয়া দেখা দিলে, সঙ্গে সঙ্গে পানি ছিটিয়ে ধোঁয়া বন্ধ করা হয়েছে।
এদিকে ড্রোন দিয়ে আগুনে পোড়া এলাকা পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। এ জন্য বন বিভাগের ৫০ সদস্যকে নিয়ে ২৫টি টিম গঠন করা হয়েছে। ওই টিমের সদস্যরা আগামী দুইদিন সার্বক্ষণিক ওই এলাকা পর্যবেক্ষণ করবে।
৪ মে (শনিবার) দুপুর নাগাদ আমরবুনিয়া এলাকায় আগুন ও ধোঁয়া দেখে বনকর্মীরা ছুটে গিয়ে নেভানোর চেষ্টা করে। সঙ্গে যোগ দেয় স্থানীয় গ্রামবাসীও। তবে তাতে আগুন নেভানো যায়নি। সন্ধ্যায়ই ঘটনাস্থলে পৌঁছায় বনরক্ষী ও থানা পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিসের তিনটি ইউনিট। তবে রাতের কাজ শুরু না করে তারা ফিরে যান।
সকাল সাতটা থেকে সমন্বিতভাবে শুরু হয় আগুন নেভানোর কাজ। বনরক্ষী ও ফায়ার সার্ভিসের পাশাপাশি আগুন নেভাতে যোগ দেয় নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও বিমান বাহিনীর একটি হেলিকপ্টার।
সারাদিন চেষ্টার পর রোববার রাতে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনার খবর দেয়া হয়। রাতে বিরতির পর সোমবার সকাল সাতটা থেকে আবারও আগুন নেভানোর কাজে হাত দেয় বনবিভাগ, নৌবাহিনী ও ফায়ার সার্ভিস। তাদের সহযোগিতা করছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও।
বন বিভাগের বিভিন্ন কর্মকর্তারা জানান, বনের প্রায় পাঁচ একর এলাকায় দুইদিন ধরে বিক্ষিপ্ত ভাবে আগুন জলে। মাটিতে পড়ে থাকা লতাপাতা, ডালপালা আর মাটির নিচে গাছের শিকরের মধ্যে আগুনের বিস্তৃতি ছড়িয়ে পড়ে।
আগুন ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে ওই জায়গার চারদিক থেকে প্রায় পাঁচ একর জায়গা জুড়ে ফাইয়ার কাটা হয়। যেখানে আগুন রেগেছে সেই এলাকাটি সুন্দরবনের লোকালয় সংলগ্ন উঁচু হয়ে যাওয়া বনভূমি। ওই স্থানটি নিয়মিত জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয় না।
ফলে সেখানে কয়েক ইঞ্চি পুরো মরা পাতা এবং ডালপালার আস্তর জমে রয়েছে। আগুন গাছের উপরে বা ডালপালায় ছড়িয়ে না পড়ে শুধু মাত্র মাটির উপর বিক্ষিপ্ত ভাবে বিস্তৃত হয় বলে বন কর্মকর্তারা জানান।
সুন্দরবনে কীভাবে আগুন লাগলো, কত এলাকাজুড়ে ছড়িয়েছে এবং কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা খতিয়ে দেখতে রোববার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে বনবিভাগ।
খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক মিহির কুমার দো বলেন, বন বিভাগের তদন্ত কমিটি কাজ শুরু করে দিয়েছে। তারা অগ্নিকাণ্ডের এলাকা ঘুরে দেখছে এবং বিভিন্ন তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করছে। তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর আগুনের সূত্রপাত এবং ক্ষয়ক্ষতির সঠিক পরিমাণ জানা যাবে।
বন কর্মকর্তারা ধারণা করছেন, বনের ওই এলাকায় মাটির উপর কয়েক ইঞ্চি পুরু জৈব পদার্থ মজুদ হয়েছে। সেখানে মিথেন গ্যাস মজুদ হয়ে আগুন লাগতে পারে। তবে মৌয়ালদের মৌচাক ভাঙার আগুন থেকে অথবা কারো বিড়ি-সিগারেটের অংশ থেকেও অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে।
এদিকে প্রধান বন সংরক্ষক আমীর হোসাইন চৌধুরী বলেন, আগুনে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের জন্য সোমবার বিকাল নাগাদ বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি কমিটি গঠন করা হবে।
ওই কমিটির সদস্যরা সরজমিনে ঘুরে দেখে জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণের পাশাপাশি নানা বিষয়ে সুপারিশ করবে বলেও জানান প্রধান বন সংরক্ষক।
ইউ