সংগৃহীত ছবি
প্রতিদিন নিত্য-নতুন প্রতারণার ফাঁদে পড়ছেন ঢাকাবাসী। মলম পার্টি, অজ্ঞান পার্টিসহ বিভিন্ন প্রতারক চক্রের খপ্পরে পড়ে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছেন। নতুন করে আরেকটি চক্রের সন্ধান মিলেছে, যারা প্রথমে একটি কাগজ ধরিয়ে পড়ে দিতে বলে; তারপরই ঘটে আসল ঘটনা। কাগজটি পড়া ব্যক্তি মুহূর্তে হারান নিজের ওপর নিয়ন্ত্রণ, চলে যান প্রতারক চক্রের কব্জায়। প্রতারকদের দিয়ে দেন সবকিছু। অনেক সময় অজ্ঞানও হয়ে পড়েন ভুক্তভোগী। তেমনই একটি ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন, রাজধানী ঢাকার বাসিন্দা পূর্ণেন্দু তালুকদার।
বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) পূর্ণেন্দু তালুকদার তার ফেসবুকে দেওয়া এক পোস্টে জানান, ‘একটুর জন্য বেঁচে আসলাম; আজকে অফিসের পর শ্যামলীতে এক হাসপাতালে যাই অসুস্থ এক ফ্রেন্ডকে দেখতে। আসার পথে বাসে করে আসতেছিলাম। ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডের মোড়ে নামি, রাস্তা ক্রস করে শংকর যাব। জেব্রা ক্রসিং দিয়ে রাস্তা পার হবো ঠিক তখনই পেছন থেকে কেউ আমাকে হাত দিয়ে ডাক দেয় এবং পিছেনে তাকানোর আগেই তার একটা হাতে কাগজ এবং ওইটা আমার মুখ বরাবর নিয়ে আসতে চায়। সে বলে উঠল দেখেন তো এইটা কি?’
তিনি আরও জানান, ‘কয়েকদিন আগে ফেসবুকে সেম একটা কাহিনি পড়ি। গত ২ দিন আগে একটা দোকানে কোল্ড ড্রিংকস কিনতে গিয়ে শুনি সেম কাহিনি হয় একটি ছেলের সাথে। সে না-কি সবকিছু দিয়ে দিয়েছে তার কাছে যা ছিল। ওই দোকান থেকে ১০ হাজার টাকাও তুলতে চেয়েছিল কিন্তু দোকানদার তার অবস্থা দেখে টাকা তুলতে দেয়নি, বরং বাসায় পাঠিয়ে দেয়।’
পূর্ণেন্দু তালুকদার বলেন, ‘এই দুইটি ঘটনা জানি বলেই, পেছন থেকে কাগজসহ ওই হাতটা দেখে আমি ১ সেকেন্ডের ও কম সময়ে মুখটা সরিয়ে নেই। কিন্তু তাতেও লাভ হয়নি। রাস্তা পার হতে হতেই আমার পা অবশ হতে থাকে পরে আমার হাত। আমি বুঝতে পারি আমার সাথে বাজে কিছু একটা হতে যাচ্ছে। আমি পেছনে ফিরে লোকটাকে এক পলক দেখেও নেই। ভিক্ষুকের মতো দেখতে। লুঙ্গি আর সাদা শার্ট পড়া। মুখে দাড়ি, শার্টের বোতাম খোলা। রাস্তা পার হয়েই দেখি কতগুলো রিকশা, আমি রিকশায় উঠে পড়ি। রিকশায় উঠে আমি আর বলতে পারছি না কোথায় যাব। রিকশা চালক বলার আগেই দেখলাম রিকশা টান দেওয়ার একটা ভাব। হয়তোবা সিন্ডিকেট মেম্বার, তখন কাউকে বিশ্বাস করার মতো অবস্থা ছিল না। রিকশায় বসে ব্রেনকে একটিভ রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাই আর ঘন ঘন নিঃশ্বাস নেই যেন সেন্স না যায়। বুকের ভেতর কেমন যেন খালি হয়ে যাচ্ছে।’
তিনি বলন, ‘কাগজটার দিকে তাকাই নাইও ভালো করে, তাও এই অবস্থা। শংকর আসতে আসতে নিজেকে কন্ট্রোলে আনতে পারি। রিকশা জ্যামের মধ্যে দাঁড়ায়। আমি নেমে যাই এবং বাসার নিচে পর্যন্ত চলে আসি। রিকশায় থাকা অবস্থায় আমি ফোনটা বের করে কাউকে যে কল দিব, সেই অবস্থাটুকু ছিলো না।’
পূর্ণেন্দু তালুকদার বলেন, ‘বাসার নিচে এসে পরিচিত এক বড় ভাইকে পাই এবং ওনাকে সব ঘটনা খুলে বলি। তারপর উনি আর আরেক ভাইকে নিয়ে বের হই তাকে খুঁজে বের করার জন্যে। মোটামুটি ভালো এরিয়া কভার করি কিন্তু খুঁজে পাইনি।’
সবাইকে সতর্ক করে দিয়ে তিনি বলেন, ‘এইবারের মতো কিছু হয়নি। রিকশা থেকে নামার পর থেকেই আমি মোটামুটি সুস্থ। আমার বন্ধুবান্ধব, আত্মীয়-স্বজন যারাই আমার ফ্রেন্ডলিস্ট এ আছেন, কখনো কেউ এরকম কাগজ দিলে তাকাবেনও না। আর যদি এমন হয়েও যায় আশপাশে যেকোন শো রুম বা বিশ্বস্ত জায়াগায় চলে যান। বিলিভ মি এক মিলি সেকেন্ডও লাগবে না আপনাকে বশ করতে। আমি বেঁচে আসতে পেরেছি তার কারণ আগেই বললাম, ‘ব্রেন ওয়ার্ক্স লাইক প্যাটার্ন’। এই জিনিসগুলো পড়েছি এবং শুনেছি। তাই কাগজ দেখার সাথে সাথে ব্রেন বুঝে ফেলেছে এবং সাব কন্সাস মাইন্ড আমার মুখটা সরিয়ে নেয়। কারণ ঘটনা এত দ্রুত হবে আপনি বুঝে কিছু করতে পারবেন না, ততক্ষণে অনেক দেরি। কাগজটা হাতে নিলে বা আরেকটু সময় থাকলে হয়তো কোন রাস্তায় সব কিছু হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ে থাকতাম। আর আমি সাথে সাথে কোন একশন বা ছবি তোলার মতো কোনো কাজ করতে পারিনি, কারণ আমি বুঝতে পেরেছি বাসায় পৌঁছাই আগে, তারপর যা হওয়ার হবে। আপনারা নিজেও সতর্ক থাকুন, অন্যদেরও সতর্ক রাখুন।’
প্রসঙ্গত, স্কোপোলামিন নামে এক ধরণের ভয়ংকর নেশা জাতীয় রাসায়নিক উপাদান দিয়ে মানুষকে বশ করা হয়। যা ‘শয়তানের নিঃশ্বাস’ বা ‘ডেভিলস ব্রেদ’ নামেও পরিচিত।
এটি মস্তিষ্কের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। দুর্বৃত্তরা লোকজনকে অজ্ঞান করে সর্বস্ব লুটে নিতে এটি ব্যবহার করে। বর্তমানে এটি মাদক হিসাবে বা হেলুসিনেটিক ড্রাগ হিসাবে খুব ব্যবহৃত হচ্ছে। এর ক্ষতির মাত্রা কোকেন থেকে বহুগুণ বেশি। বাংলাদেশের নয়া আতঙ্ক হিসাবে আবির্ভূত হয়েছে এ মাদক।
এর প্রভাব এতটাই ভয়ংকর যে, কোনো ব্যক্তিকে সেকেন্ডেই নিজের নিয়ন্ত্রণে অনায়াসেই আনা যায়। ফলে অনেক ব্যবসায়িক এবং করপোরেট সেক্টরেও কর্তাব্যক্তিদের এটি প্রয়োগ করে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে থাকে প্রতারক চক্র।
অন্যের আদেশ পালন করতে বাধ্য করানোই হলো এ মাদকের মূলমন্ত্র। ভুক্তভোগীরা হেপনোটাইজ হয়ে অপরাধীদের নিয়ন্ত্রণে চলে যান।
নানাভাবে ও নানা কৌশলে এটি প্রয়োগ করা হয়। যেমন, হ্যান্ডশেকের মাধ্যমে, ঘ্রাণের মাধ্যমে, খাবারের সঙ্গে, চিরকুটের মাধ্যমে, কোমল পানীয়র সঙ্গে, বাতাসে ফুঁ দিয়ে।
কলম্বিয়ায় উৎপন্ন হওয়া এ মাদকটি নিয়ে ১৮৮০ সালে সর্বপ্রথম জার্মান বিজ্ঞানী আলবার্ট লাদেনবার্গ গবেষণা শুরু করেন। ১৯২২ সালে এটি সর্বপ্রথম কারাবন্দিদের ওপর প্রয়োগ করা হয়।
//এল//