
ফাইল ছবি
বর্তমান সময়ে স্মার্টফোন যেন শিশুকিশোরদের অবিচ্ছেদ্য সঙ্গী হয়ে উঠেছে। পড়াশোনা, বিনোদন এমনকি সামাজিক যোগাযোগ—সব কিছুতেই তারা মোবাইলের উপর নির্ভরশীল। তবে উদ্বেগের বিষয় হলো, দিনরাত স্মার্টফোনে বুঁদ হয়ে থাকা অনেক শিশুর মধ্যেই জন্ম নিচ্ছে আসক্তি, যা তাদের মানসিক বিকাশ ও দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করছে।
এমন পরিস্থিতিতে একজন মায়ের ভূমিকাই হতে পারে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সন্তানের এই প্রযুক্তিনির্ভর অভ্যাসে লাগাম টানতে কীভাবে এগোতে পারেন একজন মা, তা নিয়েই রইল কিছু বাস্তবমুখী পরামর্শ।
১. সময় নির্ধারণ করুন: প্রযুক্তির নিয়ম মেনে ব্যবহার
স্মার্টফোন ব্যবহারের নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিন। পড়াশোনার পর বা নির্দিষ্ট ছুটির সময়ে আধা ঘণ্টা থেকে এক ঘণ্টা পর্যন্ত স্ক্রিন টাইম নির্ধারণ করুন। এবং সেই সময়ে কোনো ব্যতিক্রম না করার চেষ্টা করুন।
২. একসঙ্গে সময় কাটান: বিকল্প দিন ভালোবাসায়
সন্তানকে প্রযুক্তি থেকে দূরে রাখতে চাইলে তাকে বিকল্প কিছু দিতে হবে। গল্প বলা, একসঙ্গে ছবি আঁকা, রান্না করা বা হাঁটতে যাওয়ার মতো ছোট ছোট অভ্যাস গড়ে তুলুন। মা নিজে যদি সন্তানের সঙ্গী হন, তবে মোবাইলের আকর্ষণ আপনাআপনিই কমবে।
৩. শেখার সুযোগ তৈরি করুন
বাচ্চারা কৌতূহলী হয়। তাই তাদের শেখার আগ্রহকে উৎসাহিত করতে নতুন বই, সৃজনশীল খেলনা বা বিজ্ঞানভিত্তিক অ্যাক্টিভিটি দিতে পারেন। এতে তারা স্ক্রিন ছাড়াও ব্যস্ত থাকবে ও আনন্দ পাবে।
৪. ‘না’ বলতে শিখুন, তবে ভালোবাসা দিয়ে
প্রথম দিকে সন্তান অভিমান করতেই পারে, এমনকি জেদ করতেও পারে। কিন্তু মা হিসেবে ধৈর্য ধরে তাকে বোঝাতে হবে—সবকিছুরই একটা নিয়ম আছে। নিষেধাজ্ঞা আর ভালোবাসার ভারসাম্য বজায় রাখা সবচেয়ে জরুরি।
৫. মা নিজে হোন উদাহরণ
আপনি যদি সবসময় ফোনে মুখ গুঁজে থাকেন, তাহলে সন্তানও তা-ই শিখবে। তাই নিজের ফোন ব্যবহারের অভ্যাসও পর্যালোচনা করুন। সন্তানকে দেখান—ফোন ছাড়াও জীবনে অনেক আনন্দের উৎস আছে।
৬. প্রকৃতির সঙ্গে যুক্ত করুন
সাপ্তাহিক ছুটিতে সন্তানকে নিয়ে বাইরে যান—পার্কে, গ্রামের বাড়ি, অথবা ছোটখাটো পিকনিকে। প্রকৃতির সঙ্গে থাকা শিশুকে মানসিকভাবে উজ্জীবিত করে এবং প্রযুক্তিনির্ভরতা কমায়।
৭. প্রয়োজনে বিশেষজ্ঞের সাহায্য নিন
যদি সন্তান ফোন ছাড়া অস্বাভাবিক আচরণ করে, ঘুম বা খাওয়ার সমস্যা দেখা দেয়, তাহলে শিশুচিকিৎসক বা শিশু মনোবিজ্ঞানীর পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
শেষ কথা:
স্মার্টফোন পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা সম্ভব নয়, তবে নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। সন্তানকে প্রযুক্তির আসক্তি থেকে রক্ষা করতে মা’কে হতে হবে ধৈর্যশীল, সচেতন এবং সৃজনশীল। কারণ, মা-ই পারে সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়তে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখতে।
ইউ