শিক্ষার্থীদের খুঁজতে গিয়ে শিক্ষক শুনলেন, ওরা সবাই মারা গেছে!
গত ৮ সেপ্টেম্বর মরক্কোয় ৬ দশমিক ৮ মাত্রার ভয়াবহ ভূমিকম্প আঘাত হানে। এখন পর্যন্ত প্রায় ৩ হাজার মানুষের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মারাকেশ শহর। ব্রিটিশ গণমাধ্যম জানিয়েছে, শিক্ষার্থীদের খুঁজতে গিয়ে নাসরিন জানতে পারেন, তার ৩২ জন শিক্ষার্থীর সবাই মারা গেছে! তাদের বয়র ছিল ৬ থেকে ১২ বছরের মধ্যে। নাসরিন তাদের আরবি ও ফরাসি ভাষা শেখাতেন।
নাসরিন জানান, ভূমিকম্পের সময় মরক্কোর অপর শহর মারাকেশে অবস্থান করছিলেন তিনি। সেখানেও ভূমিকম্প আঘাত হানে, এর তীব্রতা ছিল কিছুটা কম। ভূমিকম্পে দেশজুড়ে ভয়াবহ ক্ষয়-ক্ষতি দেখে স্কুলের শিশুদের কথা মনে হয় আরবি ও ফারসি ভাষার এই শিক্ষকের। তিনি ছুটে যান আদাসিল শহরে। গিয়ে জানতে পারেন, তার স্কুলের ৬ থেকে ১২ বছর বয়সী ৩২ শিক্ষার্থীর সবাই মারা গেছে।
সেদিনের পরিস্থিতির বর্ণনা দিয়ে নাসরিন বলেন, ভূমিকম্পের পরই গ্রামে ছুটে যাই। আমি ভীষণ চিন্তিত ছিলাম আমাদের শিশু শিক্ষার্থীদের নিয়ে। কিন্তু, সেখানে গিয়ে জানতে পারি করুণ সেই ঘটনা। সবার কাছে নাম ধরে জানতে চাই, ‘সৌম্য কোথায়? ইউসুফ কোথায়? কোথায় আমার মেয়ে আর ছেলেগুলো?’। তাৎক্ষণিক উত্তর পাইনি। কারণ সবাই ছিল নিজেদের নিয়ে ব্যস্ত। মৃত্যু আর আহাজারিতে বাতাস ভারী ছিল। ভবনগুলো ধসে পড়েছিল। তবে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে জানতে পারি আমার সোনারা আর নেই।
নাসরিনের শিক্ষার্থীদের একজন খাদিজা। ভূমিকম্পে কীভাবে তার মৃত্যু হয়, স্বজনদের কাছে এ সম্পর্কে জানতে পারেন নাসরিন। তিনি বলেন, খাদিজাকে আমি অনেক পছন্দ করতাম। দারুণ চটপটে একটা মেয়ে ছিল সে। গান গাইতে খুবই ভালোবাসত। মাঝেমধ্যে আমার বাড়িতে আসত।
একসঙ্গে ৩২ শিক্ষার্থীকে হারিয়ে মুষড়ে পড়েছেন নাসরিন। বললেন, গত শুক্রবার (৮ সেপ্টেম্বর) রাতে আমি শেষবার তাদের ক্লাস নিই। এর ঠিক পাঁচ ঘণ্টা পরই ভূমিকম্প আঘাত হানে। শুধু কল্পনায় ভাসছে, উপস্থিতির খাতাটি হাতে দাঁড়িয়ে একে একে ৩২ শিক্ষার্থীর নাম ধরে ডাকছি। সূত্র: বিবিসি
//এল//