
ডেঙ্গু চিকিৎসায় হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা, বাড়ছে রোগীর চাপ
বর্তমান ডেঙ্গু পরিস্থিতিতে সারা দেশে ডেঙ্গু মৃত্যু এক শতাংশ আর সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি আছে শতকরা ১৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যে জানা গেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে,গতকাল রবিবার (৬আগষ্ট) পর্যন্ত হাসপাতাল থেকে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছেন ৮৬ শতাংশ।
সময়ের সঙ্গে ডেঙ্গু রোগীর মৃত্যু ও আক্রান্ত বাড়লেও ধীরগতিতে হলেও কমতে শুরু করেছে বলে জানিয়েছেন,স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একাধিক কর্মকর্তা। ইতিমধ্যে বিগত ২৩ বছরের ইতিহাসে দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা আগের সব রের্কড ছাড়িয়ে গেছে চলতি বছর।
এছাড়া গতকাল ৬ আগষ্ট পর্যন্ত সারা দেশে মারাগেছে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ৩১৩ জন আর আক্রান্ত হয়েছে ৬৬ হাজার ৭৩২ জনের মধ্যে শুধু ঢাকাতেই আক্রান্ত হয়েছে ৩৫ হাজার ৬০১জন। ঢাকার বাইরে আক্রান্ত রোগী ৩১ হাজার ১৩১ জন। হাসপাতাল থেকে চিকিৎসা সেবা নিয়ে মোট বাড়ি ফিরেছেন, ৫৭ হাজার ৭২ জনের মধ্যে রাজধানীতে ৩০ হাজার ৭৪৮ জন আর রাজধানীর বাইরে ২৬ হাজার ৩২৪ জন ।
এদিকে ঢাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি ডেঙ্গু রোগী ৯ হাজার ৩৪৭ জনের মধ্যে রাজধানীতে ভর্তি রয়েছে, ৪ হাজার ৬০৫ জন আর রাজধানীর বাইরে ৪হাজার ৭৪২ জন।
একতথ্যে জানা গেছে ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল।
এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে সরজমিনে দেখা গেছে প্রচন্ড ডেঙ্গু রোগীর চাপ। হাসপাতালগুলোতে শয্যা ফাঁকা নেই,মেঝে,বারান্দায় কোথাও রোগীদের জায়গা মিলছে না! এতে চিকিৎসকদের যেমন হিমশিম খেতে হচ্ছে, তেমনি রোগীরাও পড়ছেন নানান ভোগান্তি আর বিড়ম্বনায়।
রাজধানীর ডেঙ্গু পরিস্থিতির খবর জানতে মহাখালী ডেঙ্গু চিকিৎসায় মহাখালী ডেডিকেটেড ডিএনসিসি হাসপাতালের কতৃপক্ষ জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ভর্তি ৭২ জনসহ বর্তমানে ভর্তি আছে ৩০১ জনের মধ্যে আইসিইউতে রোগী ভর্তি ৩৮ জন। এছাড়াও প্রতিদিন আউটডোরে ডেঙ্গু রোগী চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে ৫০০-৬০০ অধিক রোগীকে। আর এসব রোগী বেশিরভাগই দেশের বিভিন্ন জেলা উপজেলা থেকে আসছে।
মুগদা মেডিকেল কলেজ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, স্কয়ার, আনোয়ার খান মর্ডান হাসপাতাল, বাংলাদেশ শিশু হাসপাতাল ও ইনিস্টিটিউট, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়সহ রাজধানী বেশ কিছু হাসপাতালে ঘুরে দেখা গেছে, অতিরিক্তি রোগীর কারণে চিকিৎসক-নার্স এবং হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে পরিস্থিতি সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। হাসপাতালে কোনো শয্যা খালি নেই।ডেঙ্গু ওয়ার্ড গুলোতে পা ফেলবার জায়গা নেই। ওয়ার্ডের বারান্দা, করিডোর, সিঁড়ির নিচে কোথাও খালি জায়গা নেই। এমন চিত্র দেশের অনেক হাপাতালের।
চিকিৎসা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সারাদেশেই ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসা দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে ডেঙ্গু রোগী ব্যবস্থাপনা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, বিশেষায়িত চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত নেই। ফলে রাজধানীর বাইরে ডেঙ্গু আরও প্রাণঘাতী হয়ে উঠতে পারে। অন্যদিকে, উন্নত চিকিৎসার জন্য অনেকেই ঢাকার আসছেন। কিন্তু অতিরিক্ত রোগীর কারণে ঢাকার হাসপাতালগুলোতেও জায়গা নেই।
এদিকে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনিস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) এর উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন বলেন, শুরুতে রোগীর সংখ্যা রাজধানীতে বেশি ছিল। বর্তমানে জেলা উপজেলা শহরেও বৃদ্ধি পাচ্ছে, বৃদ্ধি পাচ্ছে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ণে গ্রামে গ্রামে।
তিনি আরও বলেন আমাদের শহরের স্বাস্থ্য অবকাঠামো খুব একটা সাজানো না থাকলেও এখানে রয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। কিন্ত জেলা উপজেলায় অবকাঠামো থাকলেও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও জরুরী ব্যবস্থাপনার ঘাটতি রয়েছে। তাই এমন বাস্তবতায় সামনের অবস্থা আরও অবনতি হতে পারে।
অন্যদিকে ঢাকার উত্তর ও দক্ষিণের সিটি কর্পোরেশন বছরধরে নানা উদ্যোগ নিলেও মশা নিধনের তেমন উদ্যোগ দেখা যায়নি বললেন, কীটতত্ত্ববিদ ড. মঞ্জুর চৌধুরী। তিনি আরও বলেন, দুই সিটি কর্পোরেশন মশা নিধনে শুধু জরিমানা আর জনসচেতনতা বাড়িয়ে কাজ হবে না। সঠিকভাবে জরিপ করতে হবে দক্ষজনবল দিয়ে এবং যথাযথ ব্যাবস্থা নিতে হবে বলে তিনি অভিমত ব্যাক্ত করেন।
//এল//