ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, , ১০ মে ২০২৫

English

বৃত্তের বাইরে

নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা : বাস্তবতা ও করণীয়

প্রকাশিত: ১৯:২৩, ২ ডিসেম্বর ২০২৩

নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা : বাস্তবতা ও করণীয়

ছবি: তরুণদের সঙ্গে মহিলা পরিষদের মতবিনিময় সভায়...

আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ ও বিশ্ব মানবাধিকার দিবস পালন উপলক্ষ্যে গৃহীত কর্মসূচির আওতায় নারীবাদি সংগঠন মহিলা পরিষদের উদ্যোগে ‘নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা : বাস্তবতা ও করণীয়’ বিষয়ে তরুণদের সঙ্গে মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

শনিবার (২ ডিসেম্বর) বেলা ১১টায় সংগঠনটির রাজধানীর নিজ কার্যালয়ে এ মতবিনিময় সভা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির সভাপতি ডা. ফওজিয়া মোসলেম। স্বাগত বক্তব্য রাখেন- যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন।

প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন- বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান (সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর শিকদার; বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাইবার ট্রাইবুনাল, ঢাকা এর বিচারক (জেলা ও দায়রা জজ) এ এম জুলফিকার হায়াত এবং বাংলাদেশ পুলিশের  স্পেশাল ব্রাঞ্চের ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (প্রটেকশন এন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম,বিপিএম।

আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিজিটালি রাইটস’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক মীরাজ আহমেদ চৌধুরী; বাংলাদেশ ইয়ুথ ইন্টারনেট গভর্নেন্স ফোরামের সভাপতি ও সামিট কমিউনিকেশনস লিমিটেডের অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার সৈয়দা কামরুন জাহান রিপা; বাংলাদেশ আইসিটি জার্নালিষ্ট ফোরামের সভাপতি নাজনীন নাহার; সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের সভাপতি কাজী মুস্তাফিজ এবং বাংলাদেশ বক্সিং ফেডারেশনের বক্সার তামান্না হক, নিঃসঙ্কোচ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা মোহাম্মদ ফাহিম এবং শিশু কিশোর ক্রিকেট উইমেনস একাডেমীর টিম ম্যানেজার লামিয়া জালাল প্রমুখ।    
 
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. কাবেরী গায়েন বলেন, ই-মেইলের মাধ্যমে হয়রানি, সাইবার বুলিয়িং, সাইবার স্টকিং, সাইবার পর্ণোগ্রাফি, সাইবার অপবাদ, মরফিং, ইমেইল স্পূফিং এবং নানা ধরণের সাইবার সহিংসতা ঘটছে। সাইবার অপরাধ সংঘটনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে যে উপাদানগুলো মূলত কাজ করে সেগুলো হলো: ভিকটিমদের ব্যক্তিগত তথ্যাবলীর সহজলভ্যতা, ব্যবহারকারীদের অজ্ঞতা এবং উদাসীনতা, ভিকটিমের দায়, একজনের ব্যক্তিগত তথ্য অন্য প্রোফাইলের নীচে ব্যবহার, এবং প্রযুক্তি বিকাশের সাথে আইনী পদক্ষেপের ফাঁক। ২০২২ সালে ৫১৪ জন অনলাইন ব্যবহারকারীরদের উপর পরিচালিত অ্যাকশন এইড বাংলাদেশ-এর গবেষণায় দেখা গেছে, ৬৩.৫১% নারী অনলাইন সহিংসতার শিকার হয়Ñযা ২০২১ সালে ছিলো ৫০.১৯%। অর্থাৎ, এক বছরে বেড়েছে ১৩%।  যারা অন-লইন সহিংসতার শিকার হয়েছেন তাদের মধ্যে ৬৭.৮১% সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১-৫ বার, ২১.৮৯% নারী ৫-১০ বার এবং ১০.৩% এক বছরে ১০বারের বেশি শিকার হয়েছেন। এসব নারীদের মধ্যে ৪৭% ফেসবুকে এবং ৩৫% মেসেঞ্জারে সহিংসতার শিকার হয়েছেন। এছাড়াও ইন্সটাগ্রাম (৬.১১%), আইএমও (৩.০৬%), হোয়াটসআপ (১.৭৫%) এবং ইউটিউবে (১.৩১%) সহিংসতার শিকার হয়েছেন।  ২০০৬ সালে দ্য ইনফরমেশন, কমিউনিকেশেন অ্যান্ড টেকনোলজি (আইসিটি) অ্যাক্ট এবং ২০১৩ সালে সংশোধনী আইনটি হয়। এই আইনের ৫৭ এবং ৬৬ ধারায় নারীর বিরুদ্ধে সাইবার অপরাধে শাস্তির কথা বলে। তবে যে প্রশ্নটি উঠেছিলো সেটা হলো নারীকে ইমেইলের মাধ্যমে হয়রানিমূলক বার্তা পাঠানো, সাইবার স্টকিং, সাইবার পর্ণগ্রাফি, সাইবার মানহানি, মরফিং, ইমেইল স্পুফিং, সাইবার বুলিইং এসব বিষয়ে বিচার কি সাইবার ট্রাইব্যুনালে হবে না কি ক্রিমিনাল কোর্টে হবে। দেখা গেছে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সাধারণ ক্রিমিনাল কোর্টে এসব অভিযোগের বিচার হয়েছে। কাজেই নারীরা এসব অপরাধের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে কাংক্ষিত ফলাফল পাননি। এমতাবস্থায়, সুরাহার পথ দু’টি। প্রথমটি আইনী ব্যবস্থায় জোরারোপ। দ্বিতীয়টি সমাজ মনস্তত্ত্বের পরিবর্তন সাধন। পরিবর্তন সাধন সাইবার পরিসর ব্যবহারকারীর আচরণে।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে  টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশনের সম্মানিত চেয়ারম্যান(সিনিয়র সচিব) শ্যাম সুন্দর শিকদার বলেন, ‘সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে সরকারের অনেক ধরণের কার্যক্রম রয়েছে। সাইবার দুনিয়া একটি মুক্ত জায়গা যেখানে নিজের নিরাপত্তা নিজেকেই দিতে হবে। ডিজিটাল লিটারেসি বৃদ্ধি করার কোন বিকল্প নেই। অভিভাবকদের বাচ্চাদের ইন্টারনেটের ব্যবহার মনিটরিং  করতে হবে, তাদেরকে ইন্টারনেটের ইতিবাচক ব্যবহারে  উদ্বুদ্ধ করার মাধ্যমে মেধা বিকাশের সুযোগ দিতে হবে।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে  সাইবার ট্রাইবুনাল, ঢাকা এর বিচারক(জেলা ও দায়রা জজ)এ এম জুলফিকার হায়াত; সাইবার স্পেসে বেশিরভাগ নারী ভিকটিম হয় প্রযুক্তি ব্যবহারে সচেতনতার অভাবে এবং অপরাধ প্রমাণের জন্য সুনির্দিষ্ট তথ্য প্রমাণ না থাকার কারনে অপরাধী মুক্তি পেয়ে যায়। তিনি বলেন, বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহারের আগে পরিস্কার ধারণা নিতে হবে; ফেসবুক ব্যবহারে সচেতন হতে হবে; একটি নির্দিষ্ট বয়সের আগে শিশুদের হাতে মোবাইল ফোন দেয়া থেকে  অভিভাবকদের বিরত থাকতে হবে; তিনি নারী ও কন্যার প্রতি সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে একাধিক সিমকার্ড ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞাআরোপ, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সমূহকে আইনের আওতায় নিয়ে আসাএবং টিকটক, ইমো নিয়ন্ত্রণ করার জন্য আইনী নীতিমালা তৈরির উপর জোর দেন।
 
 বাংলাদেশ পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চ এর ডেপুটি ইন্সপেক্টর জেনারেল (প্রটেকশন এন্ড প্রটোকল) আমেনা বেগম,বিপিএম বলেন, মাঠ পর্যায়ে ৬৫৯ টি পুলিশি থানা আছে। এসকল থানার কেস তদন্ত কর্মকর্তাদের সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধ সংক্রান্ত  প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা নেই।  এতে ঢাকা সিটির  চাইতে প্রত্যন্ত অঞ্চলের মেয়েদের সাইবার সহিংসতার শিকার হওয়া ঝুকিঁ বেশি।  আন্ডার রিপোর্টিং  এর জন্য এক্সপ্লয়টেশন বেশি হচ্ছে। পুলিশের  সাইবার সাপোর্ট টিমে মাত্র ১৫-১৬ জন জনবল রয়েছে যারা  ৭০০০০ হাজার কমপ্লেন পেয়েছে। সাইবার সহিংসতা প্রতিরোধে সাইবার সাপোর্ট টিমের জনবল বৃদ্ধি করতে হবে; সচেতনতা শিশুবেলা থেকেই তৈরি করতে হবে;  ইন্টারনেটের নিরাপদ ব্যবহার সম্পর্কে  সকলকে সচেতন হতে হবে। সরকারি, বেসরকারি, তরুণদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় সাইবার ক্রাইম মোকাবেলা করা সম্ভব হবে তিনি মন্তব্য করেন।
 
উপস্থিত অন্যান্য আলোচকবৃন্দ বলেন, ‘নাগরিকদের প্রযুক্তি ব্যবহারে স্মার্ট হতে হবে। ৬৩% শিশুকিশোর বিদ্যালয়ে থাকা অবস্থায় পর্নোগ্রাফিতে জড়িয়ে যাচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোকে ইন্টারনেট ব্যবহারে সচেতন হতে হবে। সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা গেছে সবচেয়ে ভুক্তভোগীর বয়স ১৮ থেকে ২০ বছরের মধ্যে। ৮০% ভ’ক্তভোগী আইনের আশ্রয় নেন না আইনী সেবায় সন্তোষ না থাকার কারণে।  সন্তানদের ইন্টারনেট ব্যবহার তদারকি করতে প্যারেনটাল গাইড থাকতে হবে। বিটিআরসির নীতিমালার ব্যবহার, প্যারাসোশ্যাল একটিভি এবং বিনিয়োগের উপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করতে হবে। শুধু আইন দিয়ে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবেনা। প্রকাশিত ভিডিও নিয়েও ট্্রল করে হেনস্থা করা হয়,  যতই আইন  থাক আমাদের একশনে যেতে হবে, অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করার উপর জোর দিতে হবে।’

সভাপতির বক্তব্যে ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘৫৩ বছর ধরে নারীর মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে আন্দোলন করতে যেয়ে দেখা গেছে নারীর অগ্রগতির পথে মুল বাধা নারীর প্রতি সহিংসতা।  সহিংসতার ক্ষেত্রে নূতন নূতন ধরণ যুক্ত হচ্ছে, বর্তমানে সাইবার সহিংসতার বেড়েছে । সাইবার ওয়ার্ল্ড একটা ইনফিনিট ওয়ার্ল্ড। এটা গ্লোবাল।’

স্বাগত বক্তব্যে সীমা মোসলেম বলেন, ‘ডিজিটাল মাধ্যম সম্পর্কে যথাযথ শিক্ষা না থাকায় নারী ও কন্যারা সাইবার সহিংসতার শিকার হচ্ছে। ডিজিটাল ওয়ার্ল্ডে ফতোয়ার মাধ্যমে নানা রকম কুৎসা রচনা করার ফলে ডিজিটাল মাধ্যমের ইতিবাচক প্রয়োগ নিশ্চিত হচ্ছে না।’ অন্যদিকে সাইবার নিরাপত্তা আইনের অপপ্রয়োগ হচ্ছে তা প্রতিহত করতে এই আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও মনিটরিং প্রয়োজন। পাশাপাশি বিনিয়োগ এর উপর তিনি গুরুত্বারোপ করেন।

সভায় সংগঠনটির সহ-সভাপতি রেখা চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ, সম্পাদকমন্ডলী, সংগঠনের কর্মকর্তা, সাইবার সাপোর্ট ফর উইমেন এন্ড চিলড্রেন -প্ল্যাটফর্মের সদস্য সংগঠনের প্রতিনিধি,   বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক. শিক্ষার্থী, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকসহ প্রায় ১৫০ জনের অধিক জন উপস্তিত ছিলেন ।

ইউ

সিলেট সীমান্তে ভারতের কারফিউ জারি

আকাশসীমা বন্ধ করল পাকিস্তান

দ্বিতীয় দিনের মতো শাহবাগে চলছে ছাত্র-জনতার বিক্ষোভ

রাজধানীর মিরপুরে ফ্ল্যাটে মিলল ২ বোনের মরদেহ

দেশজুড়ে মাঝারি থেকে তীব্র তাপপ্রবাহ বইছে  

‘এই প্রজন্মই দেশের সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্রের রক্ষাকবচ’

পাকিস্তানের সেনাপ্রধানকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোন

শাহবাগ ছাড়া অন্য কোথাও ব্লকেড নয়: হাসনাত

পাকিস্তানের গোলায় ভারতীয় কর্মকর্তার মৃত্যু

ভারতের ২৬ স্থানে ড্রোন হামলা চালাল পাকিস্তান

এবার যুব মহিলা লীগের জেলা সভাপতি গ্রেপ্তার

সেই পাপুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম গ্রেপ্তার

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে বিকেলে শাহবাগে গণজমায়েত

মুস্তাফা জামান আব্বাসী আর নেই

ভারতে জরুরি অবস্থা জারির নির্দেশ