ছবি: শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশিকা বাস্তবায়নের অগ্রগতি’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলনে...
আমাদের দেশে নারীরা নানাভাবে যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে। জাতীয় দৈনিক এবং অনলাইন নিউজ পোর্টাল এ প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষন অনুযায়ী ২০২২ সালের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত ১০ মাসে বাংলাদেশে মোট ৩০৬০ নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
সোমবার (২৮ নভেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাব এর জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বেলা সাড়ে ১১টায় ‘কর্মস্থল এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন হয়রানি প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশিকা বাস্তবায়নের অগ্রগতি’ বিষয়ক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সংবাদ সম্মেলনটি আয়োজন করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি।
সংবাদ সম্মেলন অ্যাডভোকেট সালমা আলী বলেন, ‘নারী ও কন্যা পাচারের ঘটনা ঘটেছে ৬৬টি এর মধ্যে ১৮ জন কন্যা শিশু। সামাজিক সমস্যার তাৎপর্য বিবেচনা করে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি একজন আবেদনকারী হিসাবে, ০৭ আগস্ট ২০০৮-এ প্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি ও অপব্যবহার প্রতিরোধে উচ্চ আদালতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করে যার নম্বর ৫৯১৬/২০০৮। ১৪ মে, ২০০৯-এ মহামান্য হাইকোর্ট এ মামলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে নারীদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে একটি যুগান্তকারী রানা প্রদান করে। হাইকোর্ট এই রায়েরা সুদীর্ঘ এক যুগ পেরিয়ে গেলেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রের নারীদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে হাইকোর্টের নির্দেশনার সঠিক বাস্তবায়ন এখনো আশানোরুপ নয়।’ বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আছরের ন্যাম ২০২২ সালেও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষে প্রতি যৌন নির্যাতন বিষয়ে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ করেছে যা নিজে কিছু সুপারিশমালা তুলে ধরেন:
১। নারীদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে ১% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কমিটি রয়েছে এবং কর্মস্থলের ক্ষেত্রে মাত্র ৩৯% প্রতিষ্ঠানে এই কমিটি রয়েছে। তবে যৌন হয়রানি প্রতিরোধ নির্দেশিকা মেনে অভিযোগ কমিটি গঠন করা বেশিরভাগ কর্মক্ষেত্রে তুলনামূলকভাবে কম।
শতকরা ১৯ ভাগ প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উক্ত কমিটির গঠন বিষয়ে কোন তথ্য দিতে পারেনি। তাছাড়া নারীদের প্রতিরোধে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মস্থলে যে কয়েকটি কমিটি আছে তাদের মধ্যে মাত্র ৪৪% কার্যকরী।
২।৫৭% শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং কর্মস্থলে নারীদের যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে রিপোর্টিংয়ের জন্য কোন কম্প্লেইন বক্স নাই এবং
প্রতিষ্ঠানগুলোতে যৌন নির্যাতন এর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সমাধান বিষয়ে কোন তথ্য জানা নেই।
তিনি আরও বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং কর্মক্ষেত্রে যৌন হয়রানি বন্ধে বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতি'র সুপারিশমালার মধ্যে আওতাভুক্ত হলোঃ
১। হাইকোর্টের নির্দেশিকা অনুসারে প্রতিটি কর্মক্ষেত্র এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একটি যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি গঠন।
২। কমিটিগুলোকে কার্যকরী করা
৩। কমিটিগুলির উদ্যোগ এবং সুযোগ এবং ক্ষেত্র সম্পর্কে গণসচেতনতা তৈরির উদ্যোগ নিন যাতে তারা কোনও তা ছাড়াই তাদের ঘটনাগুলি সহজেই ভাগ করতে পারে।
৪। রিপোর্টিং এবং প্রতিক্রিয়া প্রক্রিয়া কার্যকরীকরণ
৫। প্রক্রিয়া পরিচালনার জন্য একটি ছোট বাজেট বরাদ্দ
৬। একটি অধাবদিহিমূলক ব্যবস্থাপনা প্রতিষ্ঠার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ এবং সাংগঠনিক স্তর থেকে প্রত্রিয়া পর্যবেক্ষণ
করা।
৭। আইন কমিশন যৌন হয়রানি প্রতিরোধের জন্য বাংলাদেশ দণ্ডবিধির ৫০৯ ধারার কিছু সংশোধন করেছে কিন্তু তারা এখনও এই বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।
৮। হাইকোর্ট বিভাগের নির্দেশিকাগুলি যথাযথভাবে বাস্তবায়িত না হওয়ার আরেকটি কারণ হল তাদের বাস্তবায়ন বা নিরীক্ষা করার জন্য কোনও ব্যবস্থা তৈরি করা হয়নি। রিট পিটিশনে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে বিবাদী করা হলেও রায়ের পর তারা নীতিমালা প্রণয়ন ও পর্যবেক্ষণে সক্রিয় ছিল না।
৯। নির্দেশিকাগুলি প্রস্তাব করে না যে কীভাবে মন্ত্রণালয় বা সরকারী সংস্থাগুলিকে তাদের বাস্তবায়নের জন্য একটি কৌশল প্রণয়নের জন্য সমন্বয় করা উচিত, বা কোন সংস্থাগুলিকে বিভিন্ন সেক্টর বা প্রতিষ্ঠানে বাস্তবায়ন পর্যবেক্ষণ করা উচিত।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন,বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবীর এ্যাডভোকেট সালমা আলী।
---শাওন---
ইউ