নেত্রকোণা থেকে মো. শফিকুল ইসলাম: নেত্রকোণার প্রথম নারী জেলা প্রশাসক হিসেবে যোগদান করেছেন অঞ্জনা খান মজলিস।
বুধবার (২ জুন) তিনি জেলা প্রশাসক হিসেবে নতুন দায়িত্বে যোগদান করেছন।
২০০৩ সালে ২২তম বিসিএস প্রশাসনের মাধ্যমে সরকারি চাকরিতে যোগদান করেন অঞ্জনা খান। চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার কার্যালয় থেকে তাঁর কর্মজীবন শুরু হয়। পরে তিনি ফটিকছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। সবশেষ তিনি চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে দায়িত্বরত ছিলেন।
এরপর মানিকগঞ্জের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক হিসেব দায়িত্ব পালন করেন। পরে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন অঞ্জনা খান। পরে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের উপ-সচিব হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। এ পদে দায়িত্ব পালন শেষে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ পান। তাঁর জন্মস্থান সাভারের আনন্দপুরে। তাঁর বাবা এবং শ্বশুর দু’জনই সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন। তাঁর স্বামীও একজন সরকারি কর্মকর্তা। সদ্য সাবেক জেলা প্রশাসক কাজি মো. আবদুর রহমানের স্থলাভিষিক্ত হলেন তিনি। আর মো. আবদুর রহমানকে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বিভাগের উপ সচিব হিসেবে নিযুক্ত করা হয়েছে।
জানা গেছে, ১৯৭৭ সালের ০৯ অক্টোবর ঢাকা জেলার সাভার উপজেলার সম্ভ্রান্ত “খান মজলিশ” পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম রেজাউর রহমান খান মজলিশ (অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা) এবং মাতা শামীমা খান মজলিশ (গৃহিনী)। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। তিনি সাভার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় হতে ১৯৯২ সালে স্টার মার্কসহ ১ম বিভাগে এস.এস.সি পাশ করেন। ১৯৯৪ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল ও কলেজ হতে স্টার মার্কসহ ১ম বিভাগে এইচ.এস.সি পাস করেন। একইসাথে উক্ত কলেজে মেধার স্বাক্ষর রাখার জন্য জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপচার্যের নিকট হতে উপচার্য পুরস্কার লাভ করেন। পরবর্তীতে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স ও মাস্টার্স ডিগ্রি লাভ করেন।
তিনি ২০০৩ সালে বি.সি.এস (প্রশাসন) ক্যাডারে যোগদান করেন। প্রশাসন ক্যাডারে যোগদানের পর থেকে তিনি অত্যন্ত সততা, সুনাম ও দক্ষতার সাথে কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি বগুড়া ও চট্টগ্রাম জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে আমলী আদালত ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনাসহ অন্যান্য প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। তিনি চট্টগ্রাম জেলার ফটিকছড়ি উপজেলায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এ সময় তিনি জনপ্রতিনিধি, সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন ও উন্নয়ন প্রশাসনে কাজ করার বাস্তব দক্ষতা অর্জন করেন।
ফটিকছড়ি উপজেলায় কর্মকালীন সময়ে তিনি নবগঠিত ফটিকছড়ি পৌরসভায় ১ম পৌর প্রশাসক ছিলেন। তার সময়ই ফটিকছড়ি পৌরসভার সীমানা নির্ধারণ, ভোটার তালিকা চূড়ান্তকরণসহ সফল নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তিনি বাংলাদেশ চা বোর্ডে উপসচিব হিসেবে প্রেষণে কর্মরত ছিলেন। পরবর্তীতে তিনি মানিকগঞ্জ জেলার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কাজ করেছেন। অতঃপর উপসচিব হিসেবে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগে কাজ করেছেন। তিনি ২০২১ সালের ৩ জানুয়ারী থেকে চলতি বছরের ৩১ মে পর্যন্ত চাঁদপুর জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
তিনি ১ জুন নেত্রকোণা জেলার জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে যোগদান করেছেন। বাংলাদেশের যে এলাকায় তিনি কাজ করেছেন সেই এলাকার জন-মানুষের মনে তিনি সততা ও উদার মানবিকবোধ সম্পন্ন প্রশাসনিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে স্মরণীয় হয়ে আছেন। তিনি দেশে ও দেশের বাইরে (জাপান,চীন ও ভারত) প্রশাসনিক বিষয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি রাষ্ট্রীয় ও ব্যক্তিগত কাজে থাইল্যান্ড, চীন, জাপান, ভারত, তুরস্ক, ইন্দোনিশয়া ও সৌদিআরব ভ্রমন করেছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিতা। তার স্বামী আবুল কাশেম মুহাম্মদ জহুরুল হক একজন সরকারি কর্মকর্তা। তিনি দু’সন্তানের জননী। তাঁর একজন ছেলে সন্তান ও একজন মেয়ে সন্তান রয়েছে।
উইমেনআই২৪//ইউ//০২-০৫-২০২২//১:৪৯ পিএম//