মে মাসে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বেড়েছে 

এমএসএফ এর তথ্য  অনুযায়ী মে মাসে  মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা পর্যালোচনায়  দেখা যায়, মানবাধিকার লংঘনের ধারায়-গণপিটুনি বেড়েছে,
-হত্যা ও আত্মহত্যা বেড়েছে,
-অজ্ঞাত নামা লাশ উদ্ধারের সংখ্যা বেড়েছে, সাংবাদিক নির্যাতনের ঘটনা বেড়েছে, সীমান্তে পুশইন বেড়েছে,
-পুলিশের ভয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়েছে, সংখ্যালঘুদের ওপর ‍নির্যাতন বেড়েছে, রাজনৈতিক সহিংসতা বেড়েছে,  সাইবার নিরাপত্তা আইনে মামলা ও আসামির সংখ্যা বেড়েছে,
বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও লাশ গুমের অভিযোগ।
এ মাসেও আগের মতই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানকালে গুলি করা ও লাশ গুমের ঘটনা ঘটেছে। পুলিশী আটকের ভয়ে পালাতে গিয়ে দুইজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক কর্মকান্ড তেমন না থাকলেও নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যে অর্ন্তদ্বন্দ্ব ও সহিংসতায় হতাহতের ঘটনা যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে দুস্কৃতিকারীদের হাতে রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের নিহত হওয়ার ঘটনা। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঘটনার পর সাবেক সরকারের মন্ত্রী, সাংসদ, প্রশাসনের কর্মকর্তাসহ যে কোনো ব্যক্তিকে আন্দোলন বিরোধী বলে চিহ্নিত  করে  তাদের বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতার অব্যাহত রয়েছে। 
প্রাপ্ত তথ্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, এপ্রিল মাসের মতই এ মাসেও নারী ও শিশু ধর্ষণের ঘটনা ঘটে চলেছে। নারী ও শিশুদের ওপর সহিংসতা যেমন; হত্যা ও আত্মহত্যার ঘটনা বেড়েছে, শিশু ও নারীদের প্রতি শারীরিক নির্যাতন বেড়েছে। সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে হুমকি ও হামলা তথা সাংবাদিকতা এবং মত প্রকাশের পথ রুদ্ধ করার মত ঘটনা দিন দিন বেড়ে চলেছে। এ মাসে কারা- হেফাজতে মৃত্যুর ঘটনাও রয়েছে । সনাতন ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের মন্দিরের প্রতিমা ভাংচুর, জমি দখল, বাড়িঘরে অগ্নিকান্ড, এমন কি ধর্ষণের মতো ঘটনাও ঘটেছে। সীমান্তে হতাহতের  ঘটনা বন্ধ হয়নি বরং বাংলা ভাষাভাষিদের পুশইন করার ঘটনা ঘটিয়ে সীমান্ত অস্থিতিশীল করে তোলা হয়েছে। গুলি করে হত্যা ও বাংলাদেশী নাগরিকদের ধরে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটে চলেছে। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধার বেড়ে চলেছে। গণপিটুনির মত আইন হাতে তুলে নেয়ার ঘটনাও বন্ধ হয়নি । ফলে হতাহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। মানবাধিকার লংঘন প্রতিরোধ ও মানবাধিকার সুরক্ষা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে রাজনৈতিক চর্চা, শান্তিপূর্ণ সমাবেশ, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, সমমর্যাদা ও নাগরিক জীবনে নিরাপত্তার বিষয়গুলোর নিশ্চয়তা বিধানের জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্তৃপক্ষের কাছে এমএসএফ জোর দাবি জানাচ্ছে।

দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে মাসে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ড ও লাশ গুমের একটি ঘটনা কক্সবাজারের টেকনাফে ঘটেছে। কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যদের গুলিতে মোহাম্মদ তাহের নামে এক জেলের মৃত্যু হয়। আহত অবস্থায় আটক করা হয় তিনজন জেলেকে।
১৯ মে,  সোমবার দিবাগত রাতে তাহেরসহ সাতজন জেলে মাছ ধরতে গেলে কোস্টগার্ডের গুলিতে তাহের ঘটনাস্থলেই মারা যায়। পরে লাশটি প্যাকেটে ভরে অটোরিকশায় শাহপরীর দ্বীপের দিকে নিয়ে যাওয়া হয় বলে তাহেরের বড় ভাই মোহাম্মদ কাশিম জানান। ভিকটিমের পরিবার ভিকটিমের লাশ বুঝে পায়নি। অপরদিকে কোস্টগার্ড মিডিয়া কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট হারুন-অর-রশীদ বলেন, ‘লাশ গুমের এমন অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট’। টেকনাফের তুলাতলী ঘাট এলাকায় অভিযান চালিয়ে কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরা গুলিবিদ্ধ আব্দুল শুক্কুর এবং মো. ইলিয়াস ও নুর মোহাম্মদ নামের তিনজনকে আটক করেন। তিনজনই মাদক কারবারি। তাঁদের মধ্যে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিকে হাসপাতালে পাঠানো হয়। তাহের নিখোঁজের বিষয়টি নিয়ে টেকনাফে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়। সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনেতারা বলেন, এটি বিচারবর্হিভূত হত্যাকান্ড। 

পুলিশের ধাওয়া খেয়ে মৃ্ত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে, ২০২৫ মাসে দুই ঘটনায় পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে ২   জন  মারা যান।
রাজশাহী নগরের দাসপুকুর এলাকায় ১ মে, ২০২৫ দিবাগত রাতে পুলিশ দেখে পালাতে গিয়ে রাজশাহী সিটি করপোরেশনের সাবেক এক কাউন্সিলর কামাল হোসেনের (৫৫) মৃত্যু হয়। রাজপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ বলেন, রাতে দাসপুকুর এলাকায় পুলিশ গিয়েছিল। তবে কামালকে ধরতে যায়নি। 
১০ মে, ২০২৫ রাত ১০টার দিকে হবিগঞ্জের লাখাই থানাধীন তেঘরিয়া গ্রামের একটি স্টলে বসে চা খাচ্ছিলেন ফজল উদ্দিন ইমন। এ সময় পুলিশ তাকে গ্রেফতার করতে এলে তিনি দৌড়ে পালিয়ে এক আত্মীয়ের বাড়িতে যান। সেখানে বুকে ব্যথা অনুভব করছেন জানালে তাঁকে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। সেখানে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।

এমএসএফ মনে করে, আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর ভয়ে পালাতে গিয়ে মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্খিত। প্রকৃত ঘটনা উদঘাটন করে তা পত্রিকাতে প্রকাশের মাধ্যমে বিষয়টি জনসম্মূখে তুলে ধরা আবশ্যক।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত

মে,২০২৫ মাসে রাজনৈতিক কর্মকান্ড তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। কিন্তু দলসমূহ সর্বত্রই মাঠে ছিলেন। অন্য কোন দলের না হলেও বিএনপির পক্ষ থেকে মুল এজেন্ড ছিল নির্বাচন। দ্রুততম সময়ের মধ্যে নির্বাচন দাবি তাঁদের। নির্বাচনকে ঘিরে নিজের মধ্যে আধিপত্ত্ব বিস্তারকে কেন্দ্র নানামূখি দ্বন্দ্ব অনেকাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে, যা অত্যন্ত দু:খজনক। বিএনপি'র দলীয় কর্মীদের অর্ন্তদন্দ্ব লক্ষ্যণীয়ভাবে বেড়ে যাওয়ায় হতাহতের ঘটনা ঘটেই চলেছে। যা জনমনে নিরাপত্তহীনতা, ভীতি ও আতংকের সৃষ্টি করেছে। অপরদিকে দলের দাবি বাস্তবায়নে বিক্ষোভ আন্দোলন চলছে। অপরদিকে নতুন আত্মপ্রকাশ করা জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করে।  তাঁদের দাবির পরিপেক্ষিতে অন্তবর্তীকালীন সরকার জুলাই –আগষ্টের গণহত্যার বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামি লীগের সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ড নিষিদ্ধ করেন। এই দুই বিক্ষোভ চলাকালে ঢাকা শহরের মানুষের প্রচন্ড দূর্ভোগ পোহাতে হয়েছে যা জনজীবনকে নানাভাবে আতংকগ্রস্ত করে তুলেছে। 
গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে ২০২৫ মাসে রাজনৈতিক সহিংসতার ৫৪ টি ঘটনায় শিকার হয়েছেন ৩৫৯ জন। তাদের মধ্যে ৮ জন নিহত এবং ৩৫১ জন আহত হয়েছেন।  আহতদের মধ্যে ৯ জন গুলিবিদ্ধ এবং নিহতদের মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দ্বে  ১ জন কিশোরসহ ৬ জন, নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগের অন্তর্দ্বন্দ্বে ১ জন কিশোর এবং আওয়ামী-জামাত সংঘর্ষে জামাতের ১ জন নিহত হয়েছেন। 
সহিংসতার ৫৪ টি ঘটনার মধ্যে বিএনপির অন্তর্দ্বন্দে ৩০টি, বিএনপি-আওয়ামি লীগের সংঘর্ষে ৯ টি, এনসিপি অন্তর্দ্বন্দে ১টি, বিএনপি-বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ১টি, বিএনপি-সাম্যবাদী দলের সংঘর্ষে ১টি, বিএনপি-জামাত সংঘর্ষে ৬টি, আওয়ামী-জামাত সংঘর্ষে ১টি, আওয়ামী লীগের অন্তদ্বন্দে ৩টি, আওয়ামী-এনসিপি সংঘর্ষের ২ টি ঘটনা ঘটেছে।
৩ মে ঝিনাইদহে আধিপত্য বিস্তারের জেরে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষের ঘটনায় নাহিদ হোসেন (২৫) নামে আহত যুবকের মৃত্যু হয়েছে।  
৬ মে নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলায় আওয়ামী লীগের দুপক্ষের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে  সাইফুল ইসলাম (১৭) নামে একজন কিশোর নিহত হয়েছেন। 
১০ মে যশোরের ঝিকরগাছায় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে মারধরের ঘটনায় আহত দুই ভাইয়ের একজন প্রবাসী আশাদুল হক আশা মারা যান। 
 ১৫ মে রাজশাহীর দুর্গাপুরে জমিজমা ও আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষে হাসিবুল ইসলাম (২৫) নামে একজন নিহত  হন।
২২ মে নেত্রকোনার দুর্গাপুরে পোস্টার লাগানোকে কেন্দ্র করে বিএনপির এক পক্ষের হামলায় অন্য পক্ষের শফিকুল ইসলাম ওরফে সফু (৪০) নামে একজন নিহত হন।
১৯ মে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে খালের দখলকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে হামলার শিকার দশম শ্রেণির ছাত্র মো. রিফাতুর রহমান (১৭) চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২০ মে মারা যান। 
২৭ মে সিলেটের কানাইঘাটে রাজনৈতিক ও ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে আওয়ামী লীগ ও যুবলীগ নেতাদের হাতে জামায়াত নেতা হাফিজ শিহাব উদ্দিন খুন হন।
২৮ মে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে বিএনপির দুই গ্রুপের সংঘর্ষে কলিম উদ্দিন (৩৩) নামে স্বেচ্ছাসেবক দলের এক নেতা নিহত হন। 

রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের উপর দুস্কৃতিকারিদের হামলা এবং অপমৃত্যু

এ মাসে রাজনৈতিক নেতা কর্মীদের উপর দুস্কৃতিকারিদের হামলার ২০ টি ঘটনা ঘটেছে এবং এ সকল ঘটনায় ১৬ জন আহত ও ৫ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে ৪ জন বিএনপি এবং ১ জন আওয়ামি লীগের নেতা ও সমর্থক। এছাড়াও ২ জন নিষিদ্ধ ঘোষিত সংগঠন আওয়ামী লীগের কর্মী রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার হয়ে নিহত হন।
দুস্কৃতিকারিদের এ ধরনের অপতৎপরতা রাজনীতিবিদদের জন্য হুমকি স্বরূপ। মুক্ত রাজনীতির জন্য বড় বাধা সৃষ্টি করবে বলে এমএসএফ মনে করে।
২ মে টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলার ভাইঘাট বাসস্ট্যান্ড এলাকায় রাতে মিজানুর রহমান (৪০) নামের এক আওয়ামী লীগ নেতাকে দুর্বৃত্তরা পিটিয়ে হত্যা করেছে। 
শাহবাগ থানার কাছে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ১৪ মে রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতা শাহরিয়ার আলম সাম্য (২৫) কে দুর্বৃত্তরা ছুরিকাঘাতে হত্যা করে।
২৫ মে  গুলশান থানা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক কামরুল আহসান সাধনকে বাড্ডা এলাকায় রাত সোয়া ১০ টার দিকে গুদারাঘাট এলাকায় চায়ের দোকানে গুলি করে হত্যা করে দুর্বৃত্তরা।  
২১ মে যশোরের  ভবদহ উপজেলার নওয়া পাড়া পৌর কৃষক দলের সভাপতি তরিকুল ইসলাম সরদারকে  সন্ধ্যার দিকে গুলি করে এবং কুপিয়ে হত্যা করেছে সন্ত্রাসীরা।
২৮ মে জয়পুরহাটে নিজ বাড়ির সামনে ছুরিকাঘাতে ছাত্রদলের নেতা বিপ্লব আহমেদকে (৩০) মাদক বিক্রিতে বাধা ও পূর্বশত্রুতার জেরে হত্যা করা হয়।  
রাজশাহীর পুঠিয়াতে  আত্মগোপন থেকে ৪ জানুয়ারি  বাড়ি ফেরার পর আওয়ামী লীগ নেতা অলিউজ্জামান ওরফে মন্টু  নির্যাতনের শিকার হোন এবং চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৩ মে ২০২৫ মারা যান। 
১৩ মে নোয়াখালীর সোনাইমুড়ীতে জাকির হোসেন (৪১) নামে এক যুবলীগ কর্মীকে পিটিয়ে হত্যা করে বস্তাবন্দী করে লাশ ফেলে দেওয়া হয়। স্থানীয় মাটির ব্যবসা এবং রাজনৈতিক বিরোধকে কেন্দ্র করে জামাত-বিএনপির লোকজন তাকে হত্যা করেছে বলে নিহতের পরিবার দাবি করেছে। 

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর মামলা, গ্রেফতার ও অভিযুক্ত 

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে ২০২৫ মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতার ঘটনায় ১৬টি মামলা হয়েছে। এপ্রিল মাসে মামলা ছিল ৩টি। এ মাসে দায়েরকৃত মামলার মধ্যে ২টি মামলার আসামি সাবেক ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রাজধানীর কাজীপাড়া এলাকায় গত বছরের ২০ জুলাই আন্দোলনের সময় গুলিতে আহত বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার খলিল খান (৩৫) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন। ১৫ মে, ২০২৫ বিকেল ৩টার দিকে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে জাতীয় নিউরোসাইন্স ইনস্টিটিউট হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয় বলে পরিবার জানায়।
এ মাসে দায়েরকৃত কোটা আন্দোলনে ১৬টি মামলায় আসামির তালিকায় সুনির্দিষ্টভাবে নাম রয়েছে প্রায় ১০৭২ জনের। সেইসঙ্গে ‘অজ্ঞাতনামা আসামির সংখ্যা ২৪০০ জন।
সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ও সরকারের পতন সংক্রান্ত বিভিন্ন মামলায় নিষিদ্ধ সংগঠন আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গসংগঠনের ৪২২ জন নেতা কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। যার মধ্যে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে গ্রেফতার হয়েছেন ১৪১ জন এবং অন্যান্য মামলায় ২৮১ জন। এছাড়াও চলতি মাসে অপারেশন ডেভিল হান্টে গ্রেফতার হয়েছেন ৩২ জন এবং সারাদেশে পুলিশের বিশেষ অভিযানে মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত এবং অন্যান্য মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২৪ হাজার ৭ শত ৩৩ জন।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে, ২০২৫ মাসে কারা হেফাজতে মোট ৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। গত মাসে এর সংখ্যা ছিল একজন নারীসহ মোট ৬ জন। এ মাসে ৩ জন কয়েদি ও ৪ জন হাজতির মৃত্যু হয়েছে। 
কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে ২জন কয়েদি ও ১জন হাজতি, চট্রগ্রাম কারাগারে ১জন হাজতি, ময়মনসিংহ কেন্দ্রীয় কারাগার ১জন কয়েদি ও ১জন হাজতি ও গোপালগঞ্জ জেলা কারাগারে ১জন হাজতি মারা যান।  
এমএসএফ মনে করে, কারা অভ্যন্তরে চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নতির পাশাপাশি, বন্দিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে হেফাজতে মৃত্যুর কারণ যথাযথভাবে তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের বিচারের আওতায় আনা হলে এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।

সাংবাদিকতা ও মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন 

মে, ২০২৫ মাসে সাংবাদিকতার বেশ কিছু ক্ষেত্রে সাংবাদিকদের যেভাবে শারীরিক মানসিক এবং আইনি হয়রানি, আক্রমণ, হুমকি ও লাঞ্ছিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং সৎ সাংবাদিকতার কন্ঠরোধ করে বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে বাধা দেওয়া হচ্ছে। যদিও বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার তাদের বক্তব্যে বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার কথা ব্যক্ত করেছেন। এ মাসেও সাংবাদিকতার ক্ষেত্রে মানবাধিকার লংঘনের চিত্র উদ্বেগজনক। 
দেশে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী মে মাসে ৪১টি ঘটনায় ১০১ জন সাংবাদিক দেশের বিভিন্ন জেলায় পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় নানাভাবে হামলা, আইনি হয়রানি, হুমকি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। আক্রান্ত সাংবাদিকদের মধ্যে ৩৮ জন সাংবাদিক তাঁদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় আহত ও হামলার শিকার হয়েছেন। লাঞ্ছিত ও হুমকির শিকার হয়েছেন ২৩ জন, ১ জন সাংবাদিক নিঁখোজ ও ফিরে আসা এবং আইনি হয়রানির শিকার হয়েছেন ৩৭ জন সাংবাদিক। 
এ মাসে দায়ের করা ৬ টি মামলাসহ পুর্বের মামলায় আইনি হয়রানির শিকার ৩৭ জনের মধ্যে ৩ জন সাংবাদিক গ্রেফতার হয়েছেন। সাংবাদিক ফিরোজ কামালকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে দায়ের করা মামলায় এবং সাংবাদিক জান্নাতুল ফেরদৌস জিসানকে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র ডা. সেলিনা হায়াৎ আইভীকে গ্রেপ্তার বাধা সংক্রান্ত মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন।