
ছবি: উইমেনআই২৪ ডটকম
পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে এগিয়ে নেয়া, যৌন হয়রানি, সম্পত্তিতে নারীর উত্তরাধিকার নিয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন ও নারীর মর্যাদা, মানবিক মুল্যবোধসমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনে আজকের শিক্ষার্থীদের এগিয়ে আসতে হবে।
১৪ মে (বুধবার) বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘ (বিএনপিএস) এর উদ্যোগে ডব্লিউভিএ মিলনায়তন, ঢাকায় ‘বৈষম্যহীন ও মানবিক সমাজ গড়তে দরকার জেন্ডার সংবেদনশীলতা ও আইনি সমতা’ শীর্ষক একটি সেমিনারে বক্তারা একথা বলেন।
সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বিএনপিএস-এর সহ-সভাপতি ও নারীনেত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না। ধারণাপত্র উপস্থাপন করেন বিএনপিএস এর সমন্বয়কারী নাসরীন বেগম। সেমিনার পরিচালনা করেন বিএনপিএস এর পরিচালক শাহনাজ সুমী। সেমিনারে আলোচক হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের পরিচালক, আইনী সহায়তা, এডভোকেট দীপ্তি শিকদার, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনির্ভার্সিটি-বাংলাদেশ এর মিডিয়া ও গণযোগাযোগ বিভাগ এর সহকারী অধ্যাপক, কবি ও গবেষক আফরোজা সোমা, গ্রীণ বাংলা গার্মেন্টস ওয়ার্কাস ফেডারেশন এর সভাপতি সুলতানা। এছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী, শিক্ষক, তৃণমূলের নারী, যুব, স্থানীয় সুশীল সমাজের প্রতিনিধি।
ধারণাপত্র উপস্থাপনকালে নাসরীন বেগম বলেন- বাংলাদেশকে এগিয়ে নিতে এবং পরিবর্তমান বিশ্বে দেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করতে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাইকে অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। সেজন্য সবার আগে উত্তরাধিকার ও পারিবারিক সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি সমাজ-রাষ্ট্রকে জেন্ডার সংবেদনশীল করবার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে, যাতে সামাজিক-অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক কার্যক্রমে নারীর অবাধ বিচরণের অনুকূল পরিবেশ তৈরি হয়। একবিংশ শতাব্দীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় রাষ্ট্রকে অর্থনৈতিকভাবে শক্তিশালী করে তুলতে চাইলে নারী-পুরুষ যৌথ অভিযাত্রাকে বেগবান করার কোনো বিকল্প নেই।
দীপ্তি শিকদার বলেন- ১৯৬১ সালের বৈষম্যমূলক পারিবারিক আইন এখনও বিদ্যমান থাকায় নারী পুরুষের মধ্যে যেমন বৈষম্য তেমনি এক ধর্মের নারীর সাথে অন্য ধর্মের নারীর মধ্যে বৈষম্য সৃষ্টি করেছে। এজন্য অভিন্ন পারিবারিক আইন প্রণয়ন করা জরুরী, একইসাথে উত্তরাধিকার আইনের বৈষম্য দুর করতে হবে।
আফরোজা সোমা বলেন, এই আধুনিক যুগে এসেও নারীর নিজস্ব কোন কিছু নাই, সামাজিকভাবে দ্বিতীয় শ্রেণীর নাগরিকের মতো করে রাখা হয়েছে। একটি মহল নারীকে পুরুষের মুখোমুখি দাড় করিয়ে দিচ্ছে, বিভিন্নভাবে ট্যাগ দেয়া হচ্ছে, এমনকি যৌন হয়রাণিও করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, সরকারি ও বেসরকারি কর্মসূচীগুলি নিপীড়িত নারীর জন্য করা হচ্ছে, নীপিড়কদের আচরণ ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য সর্বাত্মক গুরুত্ব দিতে হবে।
শ্রমিকনেত্রী সুলতানা বেগম বলেন, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশী নারী শ্রমিক যুক্ত আছে পোশাক খাতে, সাম্প্রতিক সময়ে সেই সংখ্যা কমে আসছে যা মূলত মজুরী বৈষম্য, যথাযথ কাজের স্বীকৃতি ও সামাজিক নিরাপত্তার কারনে গ্রামে ফিরে যাওয়া অন্যতম কারন। তিনি আরও বলেন, গামেন্টস শিল্প বিশ^দরবারেও পরিচিতি পাওয়ার পিছনে এই গার্মেন্টস শ্রমিকের অবদান রয়েছে, অথচ এদের জন্য বাজেটে তেমন কোন প্রতিফলন দেখা যায় না। এসকল শ্রমিকেরা মৌলিক মানবিক চাহিদা পূরনে হিমসিম খাচ্ছে। তিনি আরও বলেন, গৃহকর্মে নিয়োজিত শ্রমিকের অবস্থা আরও নাজুক, এক নীতিমালা করেই সরকার বসে আছে, তার বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। এমনকি আইএলও ১৮৯, ১৯০ তে এখনও অনুস্বাক্ষর করেনি।
শাহনাজ সুমী বলেন, এ মুহূর্তে সমাজ-রাষ্ট্রে আমরা সবচেয়ে বেশি যে সংকটের মোকাবেলা করছি তা হচ্ছে নারীর প্রতি সহিংস, বর্বরোচিত, অমর্যাদাকর আচরণ। নারী ও কিশোরীরা পরিবার, অফিস-আদালত, যানবাহন, রাস্তাঘাট, কর্মক্ষেত্র, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন জায়গায় যৌন হয়রানি ও সহিংসতার শিকার হচ্ছে। আমরা মনে করি, এগুলো রোগের উপসর্গ, মূল কারণে হাত না দিলে এই সংকট সমূলে উৎপাটন করা যাবে না। সেই মূল কারণটি হলো নারীর পায়ের নিচে মাটি না থাকা। এই সংকট মোকাবেলার সবচেয়ে কার্যকর মূল পদক্ষেপ হবে নারীর অর্থনৈতিক অবস্থা সৃদৃঢ় করা, তথা উত্তরাধিকারসহ সকল সম্পদ ও সম্পত্তিতে নারীর সমান অধিকার প্রতিষ্ঠা করা, যা পরিবার, সমাজ ও রাজনীতিতে নারীর অবস্থান সুদৃঢ় করবে।
নারীনেত্রী ডা. মাখদুমা নার্গিস রত্না বলেন, মুক্তিযুদ্ধেও অন্যতম লক্ষ্য ফিলো অসাম্প্রদায়ীক ও সমৃদ্ধশীল বাংলাদেশ গঠন করা, অথচ আজ ২০২৫ সালে এসেও সাম্পদায়িক সম্প্রীতির জন্য কথা বলতে হচ্ছে। জেন্ডার সমতার আন্দোলনকে পুরুষের বিরুদ্ধে আন্দোলন হিসেবে চালানোর চেষ্টা হচ্ছে, যেখানে আন্দোলন জচ্ছে পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে। তিনি আরও বলেন, আমাদের বর্তমান আইনী কাঠামো নারী-পুরুষের মধ্যকার বৈষম্য দুর করতে সহায়ক ভ‚মিকা পালন করতে পারছে না। তিনি আরও বলেন, প্রকাশ্যে নারীর প্রতি বিদ্যেষমূলক বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, অনেকসময় অর্থ বিনিয়োগ করে বিভিন্ন এলাকায় ধর্মীয় ওয়াজের নামে নারীর প্রতি বিদ্বেষ ছড়ানো হয়।
সেমিনারে প্রশ্নোত্তর পর্বে আরও বক্তব্য দেন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ।
ইউ