ছবি সংগৃহীত
বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তা নিহতের ঘটনায় আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করতে যাচ্ছেন শহীদ পরিবারের সদস্যরা। অন্তর্বর্তী সরকারে গঠনের তিন মাসেও এই ঘটনায় বিচার না পেয়ে ট্রাইব্যুনালে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা। পাশাপাশি এই ঘটনা পুনঃতদন্তেরও দাবি জানিয়েছেন নিহতের স্বজনরা।
২০০৮ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় রাজধানীর পিলখানায় নির্মমভাবে নিহত হন ৫৭ সেনা কর্মকর্তা। বিডিআর জওয়ানদের হাতে নিহত সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিচারের দাবিতে বৃহস্পতিবার রাজধানীর মহাখালীতে এক সংবাদ সম্মেলন করেন পরিবারের সদস্যরা।
ঢাকার মহাখালী রাওয়া হলে ‘পিলখানায় ৫৭ অফিসারসহ ৭৪ জনের হত্যার বিচার এবং শহীদ সেনা দিবসের দাবিতে' আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহীর ছেলে আইনজীবী সাকিব রহমান বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের ষড়যন্ত্রে ভারত সরকার ও শেখ হাসিনা সরাসরি জড়িত।
তিনি বলেন, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর নতুন সরকারের কাছ থেকে এই বিচারে কোনো আশ্বাস পাননি। তাই বাধ্য হয়ে হত্যাকাণ্ডের ‘প্রকৃত ঘটনা’ উন্মোচনসহ ‘পর্দার আড়ালের ষড়যন্ত্রকারীদের’ বিচার নিশ্চিতে আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যে ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ দাখিল করা হবে।
প্রায় ১৬ বছর ধরে চলা বিডিআর বিদ্রোহের মামলাটি আপিল বিভাগে থাকলেও সর্বশেষ পরিস্থিতি স্বজনদের জানা নেই দাবি করে সাকিব বলেন, মামলা চলার এই দীর্ঘ সময়ে আমাদের সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করা হয়নি। আমরা যারা ভুক্তভোগী, তারাই মামলার পরিস্থিতি জানি না, দেশের মানুষ কীভাবে জানবে?
তিনি বলেন, শেখ ফজলে নূর তাপস, শেখ ফজলুল করিম সেলিম, জাহাঙ্গীর কবির নানক, মির্জা আজমের বিরুদ্ধে অভিযোগ করব।
আন্তর্জাতিক আইনের ডকট্রিন অফ কমান্ড রেসপন্সিবিলিটি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকেও বিচারের মুখোমুখি আনা সম্ভব। প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রধান হিসেবে তিনিও দায় এড়াতে পারেন না। তার বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ করব।
সাকিব বলেন, এছাড়া তৎকালীন সেনা কর্মকর্তা, বিশেষ করে ডিজিএফআই কর্মকর্তা যারা ছিলেন। তখনকার সময় কিছু সাংবাদিক যারা ভুল ন্যারেটিভ সৃষ্টি করেছেন তাদের বিরুদ্ধেও আমরা অভিযোগ আনব।
তৎকালীন বিডিআর প্রধান মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে রাকীন আহমেদ ভূঁইয়া বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদ সরকার আওয়ামী চাইবে না গুম-খুনের বিচার হোক। যেহেতু এখন বাধা নেই, তাই বিডিআর সদস্য হত্যার তদন্ত দ্রুত শেষ করে জড়িতদের আইনের মাধ্যমে সাজা দেওয়া হোক।
পিলখানা হত্যার দিনকে শহীদ দিবস ঘোষণা করার দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, জড়িতদের সাজা দিলে দেশের সকল মানুষ আমাদের পাশে দাঁড়াবে। যারা হত্যাকাণ্ডের বিচার চাওয়ায় চাকরি থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে তাদের সুনির্দিষ্ট একটি ব্যবস্থা করতে হবে।
শহীদ পরিবারের পক্ষ থেকে দাবিগুলো তুলে ধরেন শহীদ কর্নেল মজিবুল হকের স্ত্রী নাহরীন ফেরদৌসী। তিনি বলেন, গ্যাজেটের মাধ্যমে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করা হোক। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের আগেই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে 'শহীদ সেনা দিবস' ঘোষণা করে এদিন দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখারও দাবি জানান তিনি।
পিলখানা হত্যার ঘটনা সুষ্ঠু বিচারের স্বার্থে নতুনভাবে তদন্ত শুরুর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, প্রস্তাবিত ইনকোয়ারি কমিশনের অগ্রগতি আমাদের জানানো হোক। ইতিপূর্বের সকল তদন্তের প্রতিবেদন জনসম্মুখে প্রকাশ করার হোক।
অফিসিয়াল গ্যাজেটে নিহত ৫৭ জন বীর সেনানীকে শহীদের মর্যাদা দেওয়া ও পিলখানা ট্র্যাজেডিকে উপযুক্তভাবে স্কুলের পাঠ্যবইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করা এবং দ্রুত বিচার শেষ করে আটক নির্দোষ সব মানুষকে দ্রুত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি জানান তিনি।
একইসঙ্গে ঘটনার দ্রুত বিচার শেষ করে আটককৃত নির্দোষ সকল মানুষকে দ্রুত ন্যায় বিচার দেওয়ার দাবি করেন তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপনা করেন শহীদ লেফটেন্যান্ট কর্নেল লুৎফুর রহমান খানের মেয়ে ফাবলিহা বুশরা। এ সময় আরও বক্তব্য দেন শহীদ লে. কর্নেল কাজী রবি রহমানের স্ত্রী ডা. ফৌজিয়া রশিদ ও তার ভাই কাজী ওলি রহমান, শহীদ কর্নেল এরশাদের ভাই ডা. মামুন, শহীদ কেন্দ্রীয় সুবেদার মেজর নুরুল ইসলামের ছেলে আশরাফুল আলম হান্নান, শহীদ কর্নেল কুদরত এলাহির স্ত্রী লবী রহমান প্রমুখ।
ইউ