
ফাইল ছবি
বাংলাদেশে নারীর জীবনমান গত এক দশকে দৃশ্যমানভাবে উন্নত হয়েছে। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কর্মসংস্থান এবং ডিজিটাল অংশগ্রহণ—এই চারটি খাতে নারীদের অগ্রগতি শুধু পরিসংখ্যানেই নয়, জীবনের গল্পেও প্রতিফলিত হচ্ছে।
শিক্ষা ও সচেতনতা: পথের শুরু
নারীদের শিক্ষার হার উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। সাম্প্রতিক সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালে মাধ্যমিক স্তরে ছাত্রীদের উপস্থিতির হার ছেলেদের তুলনায় ৫% বেশি ছিল। গ্রামীণ এলাকাতেও স্কুলে যেতে উৎসাহী মেয়েদের সংখ্যা বাড়ছে, যা ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।
ময়মনসিংহের একজন শিক্ষার্থী বলে: “আগে মেয়েরা ম্যাট্রিক পাশ করলেই বিয়ে হয়ে যেত। এখন আমরা কলেজে যাচ্ছি, স্বপ্ন দেখছি শিক্ষক বা ডাক্তার হওয়ার।”
স্বাস্থ্যসেবা: নিজেকে জানা, নিজেকে রক্ষা
নারীস্বাস্থ্য নিয়ে সচেতনতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে। শহর ও গ্রামে পরিবার পরিকল্পনা, প্রজনন স্বাস্থ্য ও মাসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খোলামেলা আলোচনা শুরু হয়েছে।
স্বাস্থ্যসেবায় টেলিমেডিসিন ও নারী স্বাস্থ্য অ্যাপ্লিকেশন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
কর্মসংস্থান ও উদ্যোক্তা জগতে নারীর উত্থান
নারীরা এখন শুধু চাকরির পেছনে ছুটছে না, নিজেরাই চাকরি দিচ্ছেন। নারী উদ্যোক্তাদের সংখ্যা ২০২০ সালের তুলনায় দ্বিগুণ হয়েছে ২০২৫ সালে। অনলাইন প্ল্যাটফর্মে নারীরা ফ্যাশন, হস্তশিল্প, খাবার ও ফ্রিল্যান্সিং খাতে দৃঢ় অবস্থান গড়েছে।
চট্টগ্রামের একজন নারী উদ্যোক্তা বলেন: “ফেসবুক পেইজ থেকে শুরু করে এখন আমার নিজের তিনটি শোরুম। নারীদের জন্য আজকাল স্বপ্ন দেখা সহজ হয়েছে।”
ডিজিটাল লিটারেসি: নতুন ক্ষমতায়ন
ডিজিটাল ডিভাইস ও ইন্টারনেট ব্যবহার শেখার মধ্য দিয়ে নারীরা ঘরে বসেই আয় করছেন। গৃহিণী থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী—সকলেই যুক্ত হচ্ছেন অনলাইন শিক্ষায়, ফ্রিল্যান্সিংয়ে, ইউটিউব কনটেন্ট ক্রিয়েশনে।
চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে
তবে পথ এখনো কাঁটাবিদ্ধ। ইভ টিজিং, কর্মক্ষেত্রে বৈষম্য, পারিবারিক সহিংসতা ও আর্থিক নিয়ন্ত্রণের অভাব এখনো অনেক নারীর জীবনকে সীমিত করে রাখে।
ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা
সরকার, বেসরকারি খাত এবং সামাজিক উদ্যোগ যদি একসাথে কাজ করে, তবে পরবর্তী দশকে নারী জীবনমান আরও সমৃদ্ধ ও নিরাপদ হবে।
নারীদের উন্নয়ন মানেই দেশের উন্নয়ন। তাদের জীবনমানের উন্নয়ন কেবল আর্থিক নয়, বরং এটি একটি সামাজিক রূপান্তর। যেখানে মেয়েরা শুধু স্বপ্ন দেখে না, স্বপ্ন বাস্তবেও রূপ দেয়।
ইউ