
সংগৃহীত ছবি
২৪২ জন আরোহী নিয়ে ভারতের গুজরাট রাজ্যের আহমেদাবাদে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান বিধ্বস্তের যে ঘটনা, সেটিকে গত এক দশকের মধ্যে দেশটিতে সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা বলা হচ্ছে। ভয়াবহ সেই দুর্ঘটনা থেকে অলৌকিকভাবে বেঁচে ফিরেছেন এক যুবক।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম ইন্ডিয়া টুডে জানিয়েছে, ওই যুবকের নাম বিশ্বাস কুমার রমেশ। তিনি ছাড়া ২৪২ যাত্রীর ২৪১ জনই মারা গেছেন বলে দাবি ভারতীয় সংবাদমাধ্যমগুলোর।
কিন্তু ভয়াবহ এই বিমান দুর্ঘটনার কারণ কী, এ নিয়ে এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কিছু জানানো হয়নি। তবে এরই মধ্যে দুর্ঘটনা-কবলিত বিমানের একধিক ছবি এবং ভিডিও প্রকাশ্যে এসেছে। যেগুলো বিশ্লেষণ করে দুর্ঘটনার কারণ অনুসন্ধানের চেষ্টা করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের বিশ্লেষণে উঠে এসেছে তেমনই চারটি কারণ।
দুর্ঘটনার কী সেই চার কারণ
প্রথমত, এ দুর্ঘটনার অন্যতম কারণ হতে পারে বিমানটির ভার এবং এ সংক্রান্ত গণনায় ত্রুটি। বিশেষজ্ঞেরা মনে করছেন, ওড়ার সময়ে যাত্রী, মালপত্রসহ বিমানের ওজন কত হয়েছিল, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন। প্রত্যেক বিমানের নির্দিষ্ট ভারবহন ক্ষমতা থাকে। কিন্তু অনেক সময় বিমান ওড়ার মুখে এই ওজনের হিসাবে গোলমাল করে ফেলেন দায়িত্বপ্রাপ্তরা। তখন বিমানটি ভেঙে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়। যেকোনো বিমানের আকার ও গঠন অনুযায়ী তার ভারবহন ক্ষমতা নির্দিষ্ট করা হয়ে থাকে।
বিমানের মধ্যে যাত্রীদের কোথায় বসানো হবে, কোন দিকে কত যাত্রী বসলে বিমানের সামনের ও পেছনের দিকের ভারসাম্য বজায় থাকবে, বিমান ওড়ার আগে তা হিসাব করতে হয়। এক্ষেত্রে হিসাবে ভুল হয়েছিল কি না, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞেরা।
ভারতীয় বিমান বিশেষজ্ঞ বন্দনা সিংহ জানিয়েছেন, বিমানটি যে ভবনে ধাক্কা খেয়েছে, সেখানে তার একটি চাকা আটকে গিয়েছিল। ওজনের হিসাবে ভুল হলে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে।
দ্বিতীয়ত, বিমানের ল্যান্ডিং গিয়ার। বিশেষজ্ঞেরা অনেকেই মনে করছেন, দুর্ঘটনা-কবলিত বিমানটির ল্যান্ডিং গিয়ারে ত্রুটি থাকতে পারে। হতে পারে ল্যান্ডিং গিয়ারটি বিমান ওড়ার পর ঠিকমতো বন্ধ হয়নি। এই ল্যান্ডিং গিয়ারই বিমানের ভার নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিমান ওঠানামার সময় রানওয়ের সংস্পর্শে আসে ল্যান্ডিং গিয়ার। এখান থেকে বিমানের চাকা বেরিয়ে আসে। ফলে বিমানের গতিও ল্যান্ডিং গিয়ারের মাধ্যমেই নিয়ন্ত্রিত হয়। সেখানে গোলমালের কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।
তৃতীয়ত, উড্ডয়নের পরই বিমানের উপরের দিকে ওঠার ক্ষমতা (লিফ্ট) কমে এসেছিল। একসময় তা একেবারে শেষ হয়ে আসে। তখন বিমানটিকে আর ভাসিয়ে রাখতে পারেননি পাইলট। ভিডিও বিশ্লেষণ করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, রানওয়ে ছাড়ার পর বিমানটি মাঝপথে সামান্য ধাক্কা খেয়েছিল বলে মনে হচ্ছে। লিফ্ট কমে যাওয়ার কারণেই এমনটি ঘটতে পারে।
চতুর্থত, বিশেষজ্ঞদের কেউ কেউ বলছেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমানটির ইঞ্জিনে ত্রুটি ছিল। সেটি ভেঙে পড়ার আগে ঘণ্টায় সর্বোচ্চ ৩২২ কিলোমিটার গতিতে পৌঁছাতে পেরেছিল। যা একেবারেই স্বাভাবিক নয়। ওই সময়ে বিমানের গতি আরও অনেক বেশি হওয়ার কথা। কোনো কারণে বিমানের ইঞ্জিন শক্তি হারিয়ে ফেলে। এতে দুর্ঘটনা অনিবার্য হয়ে ওঠে।
এদিকে বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেক পরিবারকে ১ কোটি রুপি সহায়তা দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভারতের টাটা শিল্পগোষ্ঠী। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এ ঘোষণা দেন প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান এন চন্দ্রশেখরন।
//এল//