
ছবি সংগৃহীত
নিউ ইয়র্ক: গত চার দশকে সন্ত্রাসী হামলায় ২০ হাজারেরও বেশি ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন বলে জাতিসংঘে জানিয়েছেন ভারতের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত পার্বতনেনি হরিশ।
শনিবার (২৪ মে) জাতিসংঘে বক্তব্য দিতে গিয়ে তিনি এ দাবি করেন।
পাকিস্তানের বিরুদ্ধে আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে পৃষ্ঠপোষকতার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, ‘যতদিন পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসে সমর্থন বন্ধ না করবে, ততদিন সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত থাকবে।’
রাষ্ট্রদূত হরিশ এই মন্তব্য করেন পাকিস্তানের জাতিসংঘ প্রতিনিধি যখন বলেন, ‘পানিই জীবন, এটি যুদ্ধের অস্ত্র নয়।’ এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে হরিশ বলেন, ১৯৬০ সালে বিশ্বব্যাংকের মধ্যস্থতায় স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি ছিল ভারতীয় সৌজন্যতার নিদর্শন। কিন্তু পাকিস্তান তিনটি যুদ্ধ এবং হাজার হাজার সন্ত্রাসী হামলা চালিয়ে সেই বন্ধুত্বপূর্ণ চেতনার প্রতি অসম্মান দেখিয়েছে।
গত ২২ এপ্রিল ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হন, যাদের বেশিরভাগই হিন্দু পর্যটক। এরপরই নয়াদিল্লি সিন্ধু চুক্তি স্থগিতসহ দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ও ভিসা কার্যক্রম বন্ধসহ একাধিক কড়া পদক্ষেপ নেয়। এরই ধারাবাহিকতায় রাষ্ট্রদূত হরিশ জাতিসংঘে ভারতের অবস্থান স্পষ্ট করেন।
রাষ্ট্রদূত হরিশ বলেন, ‘৬৫ বছর আগে ভারতের সরল বিশ্বাসে করা এই চুক্তি আজ প্রাসঙ্গিকতা হারিয়েছে। সীমান্তে সন্ত্রাস, জলবায়ু পরিবর্তন, জ্বালানি চাহিদা ও জনসংখ্যাগত পরিবর্তন—সবই নতুন বাস্তবতা তৈরি করেছে।’
তিনি জানান, ভারত পানিবণ্টন চুক্তির কয়েকটি ধারা সংস্কারের প্রস্তাব দিলেও পাকিস্তান তা বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। পাকিস্তানের এমন আচরণ ভারতের ন্যায্য অধিকার প্রয়োগে বাধা সৃষ্টি করছে, বলেও অভিযোগ করেন তিনি।
ভারতীয় প্রতিনিধি বলেন, ‘বাঁধ পরিচালনা ও পানির সুষ্ঠু ব্যবহারে প্রযুক্তিগত অগ্রগতি থাকলেও পাকিস্তান তা কাজে লাগাতে বাধা দিচ্ছে। পুরোনো কিছু বাঁধ এখন বড় ধরনের নিরাপত্তা ঝুঁকির মুখে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ২০১২ সালে জম্মু-কাশ্মিরের তুলবুল প্রকল্পে সন্ত্রাসী হামলাও হয়েছিল।
রাষ্ট্রদূত হরিশ বলেন, ‘ভারত সব সময়ই উজানের রাষ্ট্র হিসেবে দায়িত্বশীল আচরণ করেছে। কিন্তু যদি আমাদের জনগণের জীবন ও অর্থনীতি বারবার সন্ত্রাসবাদের শিকার হয়, তাহলে ভারত নিজের অধিকার প্রয়োগ করবেই।’
তিনি স্পষ্ট করে বলেন, ‘পাকিস্তান আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদে সমর্থন বন্ধ না করা পর্যন্ত সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত থাকবে।’
১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধু পানি চুক্তি দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম দীর্ঘস্থায়ী দ্বিপাক্ষিক চুক্তি হিসেবে বিবেচিত। এটি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে নদীর পানি বণ্টনে দীর্ঘকালীন সমঝোতা হিসেবে কাজ করেছে। তবে সাম্প্রতিক উত্তেজনা ও সন্ত্রাসবাদের ইস্যুতে চুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
ইউ