বাওয়ালি রাজবাড়ির দুর্গোপুজো .................... ছবি: সংগৃহীত
রোববার নবমীর দুপুরে ( ২২-১০-২০২৩) সপরিবার গন্তব্যস্থল ছিল বাওয়ালি রাজবাড়ির দুর্গোপুজো। প্রায় তিন 'শ বছরের পুরোনো সুদৃশ্য এই রাজবাড়ি অবশ্য পড়ে না পরাধীন ভারতে ৫৬৫টি দেশীয় রাজ্যের মধ্যে। আসলে দক্ষিণ ২৪ পরগণার বাওয়ালির মন্ডলরা ছিলেন জমিদার। পূর্বপুরুষ বাসুদেব রায়ের নাতি শোভারাম পান 'মন্ডল' উপাধি। শোভারামের নাতি রাজারাম মন্ডল ছিলেন হিজলি রাজার এক দুর্দান্ত সেনাপতি। সেনাপতির সাহস ও বীরত্বে মুগ্ধ হয়ে রাজা তাঁকে দান করেন যে ৫০ টি গ্রাম তার একটি এই বাওয়ালি।
১৭১০ সাল নাগাদ মন্ডলরা সুন্দরবনের অন্তর্ভুক্ত বাওয়ালিতে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীকালে বংশধররা জমিদারী সহ ছড়িয়ে পড়েন টালিগঞ্জ চেতলা গরচা খিদিরপুর ও অন্যান্য অঞ্চলে। ৫০ টি গ্রাম থেকে খাজনা আদায় হত যথেষ্ট তার ওপর রাজারামের নাতি হারাধন মন্ডল পেয়েছিলেন ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতা। তখন থেকেই শুরু মন্ডলদের প্রকৃত উন্নয়ন। প্রতিপত্তি এতটাই ছিল যে বাওয়ালি, চেতলা ও টালিগঞ্জ এলাকায় মন্ডলদের নামে রাস্তা যেমন আছে তেমনি আছে দৃষ্টি নন্দন নানা দেবদেবীর মন্দির। এই সব অঞ্চলে তাঁরা যে সব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ মন্দির নির্মাণ করেছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম গোপীনাথ ও মদনমোহন জিউয়ের নবরত্ন মন্দির (ছবিতে আছে নবরত্ন মন্দির )। কথিত আছে মন্ডলদের নবরত্ন মন্দিরের আদলে তৈরি দক্ষিণেশ্বরের ভবতারিণী মন্দির। এঁদের আর একটি বৈশিষ্ট্য 'জলটুঙ্গি' কালচার। দিঘির মধ্যে বিনোদনের স্থান। বিশাল এলাকা জুড়ে জমিদারী ব্যবস্থার নানা অনুসঙ্গ: কুলদেবতার মন্দির, নাচঘর, কারাগার, গুমঘর, নহবৎখানা। আছে মেলা প্রাঙ্গণ যেখানে নিয়মিত হত যাত্রা ও পালা গান, ছাতু উৎসব, রথ রাস ঝুলন দোল ও বুদ্ধ পূর্ণিমায় ফুলদোল।
এই মুহূর্তে রাজবাড়ি ভর্তি বিভিন্ন জায়গা থেকে আগত বংশধর ও অতিথিদের নিয়ে। রাজবাড়ির একটি অংশ এখন হেরিটেজ হোটেল। এক রাতের ভাড়া মাত্র পাঁচ হাজার টাকা।
মনে পড়ছে এক বছর আগে লিখেছিলাম তমলুক রাজবাড়ির দুর্গোৎসব নিয়ে। পরাধীন ভারতে তমলুক রাজবাড়ির সঙ্গে বিপ্লবীদের ছিল নিবিড় যোগাযোগ। তাই সেখানে গেলে দেখা যায় কোন্ তারিখে এসেছিলেন নেতাজি সুভাষ, কোন্ তারিখে এসেছিলেন বিজ্ঞানী আচার্য প্রফুল্ল চন্দ্র, কবে এসেছিলেন সতীশ সামন্ত প্রমুখ, তাঁদের মূর্তি। দেখে গর্ব হয়। স্বাধীন ভারতে তমলুক রাজবাড়ির দুর্গোৎসবও হয় সার্বজনীন। দু:খের বিষয় বাওয়ালি রাজবাড়ির দুর্গোৎসবে সাধারণের প্রবেশ নিষেধ। সবকিছুইর জন্যই এখানে অনুমতি লাগে। কবি বৃন্দাবন দাস একবার বাওয়ালি রাজবাড়িতে কবিতা উৎসব করেছিলেন মহাসমারোহে।
বাওয়ালি যাওয়ার দুটো রাস্তা: বেহালা চৌরাস্তা- শকুন্তলা পার্ক - শিবরামপুর হয়ে বাঁয়ে বাগপোতারোড - বাগরাহাট- বাওয়ালি মোড়। অন্যটি: তারাতলা রোড- শহর ও শহরতলির সবথেকে দীর্ঘ 'সম্প্রীতি' উড়াল পুল জিনজিরা বাজার পর্যন্ত - বজবজ চড়িয়াল মোড় হয়ে বাওয়ালি মোড়। আশ্চর্যজনক ভাবে সব জায়গাতেই আজ রাস্তা ছিল ফাঁকা।
//জ//