ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

English

এক্সক্লুসিভ

‘নারী অভিবাসী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে’

রীতা ভৌমিক

প্রকাশিত: ১৭:০৭, ৫ আগস্ট ২০২২; আপডেট: ১২:৩৯, ৫ সেপ্টেম্বর ২০২২

‘নারী অভিবাসী যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছে’

অভিবাসী নারী কর্মী হতে পারে অর্থনীতির গেইম চেঞ্জার

বাংলাদেশের নারী শ্রমিকরা নিজের ভাগ্য বদলাতে চাকরি করতে বিদেশ যান। অভিবাসী নারী শ্রমিকরা অনেকে যেমন নিয়ে এসেছেন বৈদেশিক মুদ্রা, আবার অনেকে দালালের খপ্পরে পড়ে হয়েছেন নিঃস্ব। প্রবাসে কাজ করতে গিয়ে কেউ যাতে বিপদে না পড়ে এক্ষেত্রে নিরাপদ অভিবাসনের জন্য সরকার অনেক উদ্যোগও নিয়েছে। 

নারগিস আক্তার, বয়স ৪৫ বছর, কলাকোপার বাসিন্দা। পদ্মা নদীতে বাড়ি ঘর বিলীন হয়ে যাওয়ায় স্বামী তাকে বিদেশ পাঠিয়ে দেয়। জয়পাড়ার মনির নামে এক দালালের (আসল বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া) মাধ্যমে তিনি লেবানন যান। দালাল বিদেশ যাওয়া বাবদ ৫০ হাজার টাকা নেয়। তাকে লেবাননে এক বাসায় গৃহপরিচারিকার কাজ দেয়। সেখানে অনেক অত্যাচার নিযার্তনের শিকার হন তিনি। সব নির্যাতন সহ্য করে ১ বছর কাজ করেন। পরবর্তীতে গৃহকর্তার দ্বারা অত্যাচার নিযার্তনের পরিমাণ অনেক বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে তিনি পালিয়ে যান।

এ প্রসঙ্গে নারগিস আক্তার বলেন, ‘সেই দেশের ভাষা জানতাম না। এমনকি  সেখানে আমার পরিচিতও কেউ ছিল না। এক বাঙালি নারীর সঙ্গে আমার পরিচয় হয়। তার সহযোগিতায় আমি একটি কাজ পাই। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদি  কোনো কাজও পাই নি। বাংলাদেশে আমার পরিবারের আর্থিক অবস্থা খুব খারাপ থাকায় দেশেও ফেরত আসতে পারছিলাম না। এত কষ্ট করে পরিবারে স্বচ্ছলতা না এনে কিভাবে দেশে ফিরি। তাই সিদ্ধান্ত নিই, যত কষ্টই হোক না কেনো যেখানে কাজ পাবো কাজ করব। যখন কাজ থাকত না আর্থিক কষ্টের মধ্য দিয়ে দিন কাটিয়েছি। এভাবে লেবাননে দিনের পর দিন অবস্থান করি। ২০২০ সালের শেষ দিকে বাংলাদেশে ফেরত আসি। দেশে  ফেরার পর আমার প্রতিবেশি, পাড়ার লোকেরা আমার সাথে কথা বলেনি। আমাকে নিয়ে অনেকে কটূক্তি করেছে।’

দেশে ফেরত আসা আরেক অভিবাসী নারী শ্রমিক মোসা. বেবী আক্তার। বয়স ৩৯ বছর। কেরানীগঞ্জ শুভড্যা ইউনিয়নের ইকুরিয়ায় থাকেন। স্বামী জলিল মাদবর ১৬ বছর আগে মারা গেছেন। এক ছেলে এক মেয়ে নিয়ে তার অভাবের সংসার। কারো কাছে কোনো সাহায্য না পেয়ে বিদেশ যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। বাড়ির পাশে এক দালালের মাধ্যমে তিনি গৃহকর্মীর কাজ নিয়ে সৌদিতে যান।  সৌদি যেতে তার খরচ হয়েছে ৪০ হাজার টাকা । গৃহকর্তা তাকে খাবার দেয়নি, মারধর করত। ৩ দিন তাকে বাথরুমে আটকে রেখেছিল। একদিন সুযোগ মতো সেখান থেকে পালিয়ে যান। রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে কান্নাকাটি করছিলেন। সেখানে এক বাঙালির সাথে তার দেখা হয়। মোসা. বেবী আক্তারের মতে, সেই বাঙালি তাকে বাংলাদেশ দূতাবাসে যাওয়ার পরামর্শ দেন। শুধু তাই নয়, তাকে একটি গাড়িতে উঠিয়ে দূতাবাসে যেতেও সহযোগিতা করেন। তিনি ১৫ দিন দূতাবাসের তত্ত্বাবধানে ছিলেন। কিন্তু দেশে ফিরবেন বিমান ভাড়া নেই। বাংলাদেশ থেকে ২২ হাজার টাকা পাঠালে তিনি দেশে ফিরে আসেন। বিদেশে চাকরি নিয়ে গিয়ে আর্থিক স্বচ্ছলতার বদলে আরো ঋণের বোঝা বেড়েছে।

অভিবাসী নারী শ্রমিকরা দালালদের খপ্পরে পড়ে যাতে নিঃস্ব হয়ে দেশে ফিরে না আসে সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচির উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অভিবাসী নারী শ্রমিকরা নিরাপদ অভিবাসনে যাচ্ছেন কিনা তা দেখার জন্য স্থানীয়  জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন পর্যায়ের  চেয়ারম্যানদের অবগত করা হয়েছে। তারা যেন খোঁজখবর রাখেন, তাদের এলাকার নারী কর্মীরা কার মাধ্যমে, কেন বিদেশে যাচ্ছেন।

এছাড়াও অভিবাসী নারী শ্রমিকদের এসব সমস্যা নিরসনে সরকার কয়েকটি উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসে গিয়ে যে কোনো বিপদে পড়লে প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারে ফোন করা যায়। প্রবাসে অবস্থানকালে অভিবাসী নারী শ্রমিকরা যে কোনো প্রয়োজনে সরাসরি প্রবাস বন্ধু কল সেন্টারের - +৮৮ ০১৭৮৪৩৩৩৩৩৩, +৮৮ ০১৭৯৪৩৩৩৩৩৩, +৮৮ ০২-৯৩৩৪৮৮৮ এ নাম্বারে ডায়াল করে তাদের অভিযোগের কথা জানাতে পারেন। এটি টোল ফ্রি কল সেন্টার।

অভিবাসী গৃহকর্মীর সঙ্গে প্রতারণা, নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ করতে বিদেশের বাংলাদেশ মিশনগুলোর শ্রমকল্যাণ উইং কর্তৃক নিয়মিতভাবে সে দেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, পুলিশ, ইমিগ্রেশন, আইনসেবা প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ, নিয়োগকর্তাসহ ক্ষেত্র বিশেষে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে নিয়মিত মনিটরিং এর উদ্যোগ নিয়েছে। প্রবাসে কাজ করে তারা যাতে ন্যায্য পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত না হয় সেজন্য একজন কর্মীর ব্যাংকে দুটো হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। একটি নিজের নামে, অপরটি পরিবারের নামে। নিজ হিসাবে ৬০ শতাংশ টাকা পাঠাবেন। পরিবারের হিসাবে বাকি ৪০ শতাংশ টাকা পাঠাবেন।

প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমেদ এমপি বলেন, ‘নারী অভিবাসীদের নিয়ে অনেক সম্ভবনা আছে, আছে সমস্যা এবং সমাধান। কারণ জার্মানি, জাপানসহ আরো অনেক দেশে দক্ষ নারী শ্রমিকের চাহিদা আছে। অভিবাসী নারী কর্মী হতে পারে এই দেশের অর্থনীতির আরেকটি গেইম চেঞ্জার। যারা নিরক্ষর, অদক্ষ এবং চোখ বন্ধ করে দালালদের কথা বিশ্বাস করে বিদেশে চলে যান। তৃণমূল পর্যায়ে তাদের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। সেইসাথে কিভাবে তাদের প্রাপ্য অধিকার আদায়, সুরক্ষা, নিরাপত্তা, মানবাধিকার ও মর্যাদা রক্ষায় কাজ করা যায় সেটিও দেখতে হবে।’

এ প্রসঙ্গে মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, ‘দারিদ্র থেকে মুক্তি, অধিক উপার্জনের পথ  বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। এরপরেও আমাদের মেয়েরা কর্মসংস্থানের জন্য বৈদেশিক অভিবাসনকে বেছে নিচ্ছেন, এটা খুশির খবর। ২০২১ সালে দেখা বাংলাদেশের মোট অভিবাসী কর্মশক্তির ১৩ শতাংশই ছিল নারী অভিবাসী। এটা কিন্তু বড় একটা সংখ্যা। আমরা কোনভাবেই চাইনা নারী অভিবাসন বন্ধ হোক। শুধু চাই নারীর এই অভিবাসন যেন তাকে আরও কঠিন কঠোর অবস্থার দিকে ঠেলে না দেয়। দুর্ভাগ্যবশত আমরা দেখছি  অনেকক্ষেত্রেই নারী অভিবাসীদের নিরাপদ অভিবাসন হচ্ছেনা, যৌন হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কপর্দকহীন হয়ে দেশে আসছেন, কম মজুরি পাচ্ছেন, দীর্ঘসময় কাজ করতে বাধ্য হচ্ছেন ইত্যাদি। আমরা এইসব ইস্যু নিয়ে কাজ করেছি এবং করছি এবং সরকারের সাথে আরো কাজ করতে চাই। আমরা চাই অভিবাসনে ইচ্ছুক কর্মীদের দক্ষতা বাড়ুক। যেন এর মাধ্যমে তারা চাহিদার কথা জানাতে পারেন। এর ফলে সবার জন্য নিরাপদ অভিবাসন নিশ্চিত করা সম্ভব।’

ইউ

বৃষ্টি কবে হবে, জানাল আবহাওয়া অফিস

নারীর প্রতি বৈষম্য দূর করতে সরকার নিরন্তর কাজ করছে

গরমে চা খাওয়া কি ঠিক?

তাপমাত্রা কমাতে হিট অফিসারের নতুন উদ্যোগ

কোথায় হবে অনন্ত এবং রাধিকার বিয়ে?

ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা

বেড়েছে সবজি-মাংসের দাম

উনার মনে হয় ডাক্তার দেখানো উচিত, বুবলীকে অপু 

চলমান তাপপ্রবাহ রেকর্ড ভেঙেছে ৭৬ বছরের

৭৫ নেতাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার

ইসলামী ব্যাংকের কর্মকর্তা সম্মেলন অনুষ্ঠিত

চিকিৎসা খাতে থাইল্যান্ডের বিনিয়োগ চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী

নরসিংদীতে ফেসবুক স্ট্যাটাস দিয়ে প্রেমিকের আত্মহত্যা

এক মিনিটের জন্য শেষ বিসিএসের স্বপ্ন

ধর্মীয় বিষয় নিয়ে বিদ্যা বালানের বিস্ফোরক মন্তব্য