
সংগৃহীত ছবি
আজ শুরু হচ্ছে ২৯ তম কলকাতা আন্তজার্তিক চলচ্চিত্র উৎসব। চমকপ্রদ ব্যাপার হল এই যে গতবছর অর্থাৎ ২০২২ সালের প্রথম হাফে অনুষ্ঠিত হয় ২৭ তম কলকাতা আন্তজার্তিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং রাজ্য সরকারের প্রধান চাকরির পরীক্ষা ডাবলিউ বিসিএস প্রিলি।
ঐ বছরেই ডিসেম্বরে আবার একবার অনুষ্ঠিত হয় ২৮ তম কলকাতা আন্তজার্তিক চলচ্চিত্র উৎসব। এক বছরে দুবার চলচ্চিত্রউৎসব । ২০২২ সাল গেল ২০২৩ সাল শেষ হচ্ছে, উৎসব চলছেই কিন্তু মাত্র ২০০ মার্ক্সের এমসিকিউ পরীক্ষার ফল বের করা গেল না। এই ইচ্ছে পশ্চিম বাংলার তরুণদের ভবিষ্যৎ যাদের মধ্যে পড়ে আমার মেয়েও তবু চলচ্চিত্র উৎসব এলে বেছে বেছে কিছু ছবি দেখি এই কারণে যে সিনেমা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে সকল শিল্প মাধ্যম ও শিল্পীর সমন্বয়। সারা বিশ্বের পরিচালকদের চিন্তা ভাবনার প্রতিফলন এই উৎসব। যদিও ২৭ তম চলচ্চিত্র উৎসবের মূল ফোকাস ছিল শতবর্ষ অতিক্রান্ত পরিচালক সত্যজিৎ রায় আর থিম কান্ট্রি ছিল ফিনল্যান্ড। সত্যজিৎ রায়কে নিয়ে উৎসব প্রাঙ্গণ সেজে উঠেছিল অপূর্ব। তাঁকে নিয়ে চর্চা, আলোচনা তাঁর ওপর তথ্যচিত্র ইত্যাদি যেমন ছিল তেমনই দেখান হয় তাঁর তৈরি সিনেমা 'পথের পাঁচালি', 'নায়ক', 'পরশ পাথর', 'অরণ্যের দিনরাত্রি' 'সোনার কেল্লা', 'হীরক রাজার দেশে', 'গুপি গাইন বাঘা বাইন' কিন্তু আমার আবিষ্কার 'আনোয়ার কা আজব কিস্সা'। বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত-র ছবি।
কবি ও পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের সঙ্গে ছিল আমার অন্তরঙ্গ ও ভালবাসার সম্পর্ক: আমার মাধ্যমে তিনি তাঁর মামু কবি সমরেন্দ্র সেনগুপ্ত-র খবর তো নিতেনই, একবার তাঁর ঢাকুরিয়ার বাড়িতে ডেকে চমকে দিলেন: 'তুমি যেমন চাষ কর, আমিও করি' বলে দেখালেন ফ্ল্যাটের বারান্দায় সিমেন্টের অনুচ্চ দেয়াল দিয়ে মাটিতে সব্জি ফলিয়েছেন। আমার হাতে কিছু পুঁই বীজও দিলেন। সেই কবি যে হিন্দি ভাষায় এমন একটি অসাধারণ সিনেমা বানিয়েছেন সত্যি জানা ছিল না। মূল ভূমিকায় নওয়াজ সিদ্দিকী। মাথায় টুপি চোখে কালো গগলস। চর বৃত্তির চাকরি। কোনো মালিক বস্তি বা পুরোনো বাড়ির ভাড়াটিয়া ওঠাতে পারছেনা কিছুতেই। ভার পড়ল সিদ্দিকী ওরফে মহম্মদ আনোয়ারের ওপর। গোপনে ভাড়াটিয়ারা কেমন খবর নিয়ে অন্য আর একদিন তাদের মধ্যে ঝগড়া বাঁধিয়ে দিল এবং হঠাৎই হাজির হয়ে তাদের আসবাব ও জিনিস পত্র বাইরে ছুড়ে ফেলে হুঁশিয়ারি দেয় 'তোমরা এ বাড়িতে থাকার অযোগ্য।' ঘর ফাঁকা। এ দিকে পেট চোঁ চোঁ করছে খিদেয়। কারণ পেমেন্ট তো অনিশ্চিত। ফাঁকা মাঠে বসে ভাবে অতীতে কোন্ প্রেমিকার সঙ্গে কী ধরনের রোমান্স করেছে। তারা যেন একে একে হাতছানি দিয়ে ডাকছে। এদিকে আনোয়ার ভাবছে পরের কাজটি কী ধরনের হতে যাচ্ছে ? যেমন পরাবাস্তব কাহিনী তেমনি অভিনয়। সঙ্গে পঙ্কজ ত্রিপাঠীরা আছেন। আছে অলোকপ্রসাদের মেয়ে অমৃতা চট্টোপাধ্যায় ( নাসিফা)। তরুণ পরিচালক' রাজদীপ ঘোষের ছবি 'কলকাতার হরি'। হরি তথা হরিনাথ পাত্র নামি কনভেন্ট স্কুলে বাচ্চাদের পুল কারের ড্রাইভার। বাচ্চাদের স্কুলে দিয়ে ফুটপাতে খেলা দেখায়। হরি হ্যারিপটারের ভক্ত। হরি মূলত রূপকথা বিশেষ করে হ্যারিপটারের গল্পের ওপর স্ট্রিট শো করে যে অর্থ আয় করে তা পার্শ্ববর্তী বস্তির বাচ্চাদের সাহায্য করে। পুলকারে যাতায়াত করে দশ বছরের মেয়ে তিতলি। তার থেকে ১৪ বছরের বড় দিদি এবং মা উদ্বিগ্ন তিতলিকে নিয়ে। এদিকে তিতলি হরির সঙ্গে জুটে গিয়ে খেলা বা শো দেখাতে থাকে একের পর এক। একদিন দিদি মোহর আবিষ্কার করে বাচ্চা মেয়ে তিতলির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে ড্রাইভার হরি! হরির ভূমিকায় সোহম চক্রবর্তী। ছবি শুরুর আগে রবীন্দ্রসদনে দলবল নিয়ে হাজির হয়ে অনুরোধ করলেন ছবির মজা উপভোগ করতে। খুব প্রচার হচ্ছে 'পদক্ষেপ', 'কাদম্বরী', 'দ্বন্দ্ব' প্রভৃতি ছবির পরিচালক সুমন ঘোষের নতুন সিনেমা 'সুখের খোঁজে' দেখতে। চার বছরের শাহিদা বেলুনের ওপর হাসিমুখ এঁকে নাম দেয় 'সুখ'। মা ও মেয়ে ঠিক করল এটি আকাশে উড়িয়ে দেবে। বেলুন উড়ছে কলকাতার রাস্তার ওপর, পেছন পেছন ছুটছে শাহিদা, তাকে খুঁজতে মা। নানা কারণে মায়ের মনে যেমন সুখ নেই, তেমনি সুখ নেই রিক্সওয়ালা, সব্জিওয়ালা, সেলুনের যুবক থেকে সার্কাসের জোকার। শাহিদার মনে হচ্ছে উড়ন্ত বেলুন থেকে সুখ ঝরে পড়ছে সকলের মাথায়...। নিউ ইয়র্ক কর্ণেল বিশ্ববিদ্যালয়ে সিনেমার পাঠ নেওয়া এবং জাতীয় পুরস্কার পাওয়া সুমনের আইডিয়াটি বেশ।
নানা দেশ থেকে ছবি এলেও ইজ্রায়েলের ছবি আসেনি। এই মুহূর্তে ইজ্রায়েলের পরিচালকরা সব থেকে এগিয়ে সিনেমা বানানোয়। তবে এসেছে ইরানের ছবি। ইরানও মূল্যবান ছবি বানায়। ফ্রান্সের পরিচালক মিয়া হানসেন লাভ-এর ছবি 'বার্গম্যান আইল্যান্ড'। আসলে ফারো দ্বীপে বার্গম্যান বানিয়েছেন তাঁর বিখ্যাত সব সিনেমা। দুজন আমেরিকার পরিচালক এই দ্বীপে যান বার্গম্যানের অনুপ্রেরণার সন্ধানে...
//এল//