ছবি: মধ্যনগর সীমান্ত চোরাচালানিদের স্বর্গরাজ্য...
ভারতের মেঘালয় পাহাড়ঘেঁষা সুনামগঞ্জের নবগঠিত মধ্যনগর উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের মহেষখলা, কাইতাকোনা, কড়ইবাড়ী (কড়ই চড়া), ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটাসহ সীমান্তের বিভিন্ন চোরাইপথে রাতের অন্ধকারে চোরাকারবারিরা প্রতিনিয়ত ভারতের মেঘালয় পাহাড় পাড়ি দিয়ে ভারতীয় গরু, চিনি, শাড়ী, লেহেঙ্গা ও কসমেটিকসহ বিভিন্ন পণ্য আনছে অবাধে। সীমান্তে একটি চোরাকারবারিচক্র সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তারা প্রতিদিন গরু, চিনি, মাদকদ্রব্য, ভারতীয় শাড়ী, লেহেঙ্গা ও কসমেটিকসহ মালামাল অবৈধপথে আমদানি করছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। আরো অভিযোগ রয়েছে, উপজেলার ভারতের সীমান্তবর্তী উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের আন্তরপুর গ্রাম, মহেষখলা, কাইতাকুনা, কড়ইবাড়ী, গুলগাঁও, রূপনগর ও কান্দাপাড়া গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ পাচারকারী চক্র মধ্যনগর থানা পুলিশ ও স্থানীয় বিজিবিকে ম্যানেজ করে প্রকাশ্যে এসব পাচার কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
মধ্যনগর থানার নিয়জিত ল্যাইনম্যান থানার নামে চোরকারবরিদের কাছ থেকে ভারতীয় গরু প্রতি চার শ টাকা করে পুলিশের বখরা আদায় করে থাকেন। চোরাইপথে আনা চিনির প্রতি বস্তা আদায় করেন ১ শ টাকা ও নদী পথে আসা কয়লার প্রতি নৌকার কাছ থেকে ২ হাজার করে বখরা আদায় করে থাকেন। এভাবে প্রতিদিন গরু, চিনি, মাদক, চা পাতা, কক্সমেটিক্স প্রতিদিন অন্তত কয়েক লক্ষ টাকার ভারতীয় চোরাইপণ্য ঢুকছে এই সীমান্ত পথে।
মধ্যনগর উপজেলার উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউনিয়নের মহেষখলা, কাইতাকোনা, কড়ইবাড়ী (কড়ই চড়া), ঘিলাগড়া, বাঙ্গালভিটাসহ সীমান্তে দিয়ে প্রতিদিন আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নিয়োজিত সোর্সের মাধ্যমে চাঁদা আদায় হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই। এক কথায় মধ্যনগর সীমান্তের চোরাচালানের স্বর্গরাজ্য আর এক অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, পাচারকারী সিন্ডিকেট ব্যবসায়ীদের রাতের অন্ধকারে নিরাপদ স্থান ভারতের সীমান্ত এলাকা। ভারতীয় গরু,চিনি, শাড়ী, লেহেঙ্গা ও কসমেটিক, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য পাচারকারী চক্রটি প্রতিদিন সন্ধ্যার চোরাইপথে নামিয়ে বন জঙ্গলে রেখে বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে মহেষখলা বাজার, দাতিয়ারপাড়া, মধ্যনগর বাজার, পাশের কলমাকান্দা বাজার, তাহিরপুর, ধর্মপাশা উপজেলা সদর, মোহনগঞ্জ, বারহাট্টা নেত্রকোনা ঢাকা রাজধানীসহ প্রতিটি অঞ্চলে বিক্রি করে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় সিন্ডিকেট চোরাকারবারি ব্যবসায়ীরা হলো- উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউপির মহেষখলা গ্রামের এরশাদ মিয়া, আলমগীর মিয়া, সাদ্দাম, ফারুক মিয়া, নজরুল, রঞ্জু মিয়া। গোলগাঁও গ্রামের হাতমত, রুবেল মিয়া, শরিফ মিয়া। মাটিয়ারবন আল আমিন, গ্রামের কুরফান আলী, লতিফ, আফাজ, আছব আলী, জব্বার আয়নাল, শফিকুল, বাসেদ, মিস্টার মিয়া, মজিদ হারিছ উদ্দিন, সুলতান মিয়া, নবাবপুর গ্রামের মো. করিম মিয়া,রাজন মিয়া,অন্তপুর গ্রামের দিলু মিয়া ও লক্ষ্মীপুর গ্রামের করজুল ইসলাম, কড়ই বাড়ির গ্রামের আতাবুর গুক্কুর, খোকন, রংপুর গ্রামের নয়ন মিয়া, আবুল মিয়া সাউত পাড়া গ্রামের কাদির মিয়া ও ছাত্তার মিয়ার ছেলে হযরত আলীসহ একটি সংঘবদ্ধ চক্র। তারা সরকারের রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে খুব দাপটের সঙ্গে ভারতীয় মাদকদ্রব্য, ভারতীয় গরু, চিনি, শাড়ী, লেহেঙ্গা ও কসমেটিকসহ বিভিন্ন মালামাল পাচার করছে। তাদের নিয়োজিত ২০/২৫ জনের একটি দল সার্বক্ষণিক পাচার কাজে নিয়োজিত রয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।
তারা বিভিন্ন ভারতীয় পণ্য আমদানি করে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পাচার করছে। শুধু তাই নয়, ভারতীয় হুন্ডি ব্যবসাও তাদের জমজমাট বলে একাধিক সূত্র জানায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাঁকাতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক সহকারী শিক্ষক জানান, যেভাবে প্রতিদিন শাড়ী লেহেঙ্গা, কসমেটিক, গরু, মদ, গাঁজা ও ইয়াবা চিনি আসছে, তাতে এলাকার যুবসমাজ ধ্বংসের দিকে চলে যাবে। তিনি আরো জানান, চক্রটি এত ক্ষমতাশালী যে প্রশাসনসহ সবাই তাদের ইশারায় উঠে ও বসে। ফলে তাদের বিরুদ্ধে এলাকার কেউ কথা বলার সাহস পায় না। তিনি এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
উত্তর বংশীকুণ্ডা ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুরনবী তালুকদার বলেন, ‘আমার এলাকায় কোনো কলোবাজারি সিন্ডিকেট আছে বলে জানা নেই। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখব ‘
বিজিবির মোহনপুর ক্যাম্পের ইনচার্জ নায়েক সুবেদার মো. আসাদুজাম্মান বলেন, ‘সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা রক্ষায় তারা তৎপর রয়েছেন। তারা চোরাকারবারিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
বিজিবির মাটিয়াবন ক্যাম্পের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা নায়েক সুবেদারের খন্দকার রায়হান বিজিবি ম্যানেজার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমি এখানে নতুন যোগদান করেছি তবে এ বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’
বিজিবির বাঙ্গালভিটা ক্যাম্পের ইনচার্জের দায়িত্বে থাকা নায়েক সুবেদার মো. মোতালেব ম্যানেজার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার নিয়েনিরাপত্তার কাজে নিয়োজিত আছি। আমরা নিয়মিত এলাকায় টহল দিয়ে যাচ্ছি চোরা চালানকারিরা হয়তো ফাঁকে ফাঁকে কিছু মাল নিয়েও আসতে পারে।’
বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবির) ২৮ সুনামগঞ্জের অধিনায়ক মো. মাহবুবুর রহমানের সরকারি ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলো তিনি ফোন রিসিভ না করা ওনার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয় নাই।
মধ্যনগর থানার ওসি মো. এমরান হোসেন থানা পুলিশ ম্যানেজার বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘থানা পুলিশের নামে কেউ টাকা তুলে সেটা আমার জানা নেই। চোরাচালানিদের গ্রেফতারে আমাদের অভিযান অব্যাহত আছে।’
ধর্মপাশা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার মো. আলী ফরিদ বলেন, ব্যবহৃত সরকারি মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও রিসিভ না করা তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।
সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ এহসান শাহ্ বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
ইউ