
এএলআরডি আয়োজিত ওয়াইডব্লিউসিএ মিলনায়তনে ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রামীণ নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য’ শীর্ষক তৃণমূল নারীদের নিয়ে সংলাপের চিত্র।
টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অন্যতম লক্ষ্য ক্ষুধামুক্তি অর্জনে গ্রামীণ নারীর ভূমি কৃষি অধিকার নিশ্চিত করার দাবিতে তৃণমূল নারীদের নিয়ে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
আজ ২১ অক্টোবর শনিবার বেসরকারি সংস্থা বাংলাদেশে, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট
( এএলআরডি )'র আয়োজনে রাজধানীর ওয়াইডব্লিউসিএ মিলনায়তনে ‘ক্ষুধা ও দারিদ্রমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণে গ্রামীণ নারী কৃষকের ক্ষমতায়ন অপরিহার্য’ শীর্ষক তৃণমূল নারীদের নিয়ে উক্ত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়।
সংলাপে স্বাগত বক্তব্যে এএলআরডি’র কর্মসূচি সমন্বয়কারি মং সিং নিও বলেন, বৈষম্যমূলক রাষ্ট্র ও সমাজ ব্যবস্থার কারণে কৃষিব্যবস্থা ধীরে ধীরে নারীর হাত থেকে পুরুষের হাতে চলে গেছে। গুরুত্বপূর্ণ এ উৎপাদনশীল খাতে গ্রামীণ নারীর অবদান অ-আনুষ্ঠানিক অর্থনীতির অংশ। ফলে, নারীর শ্রম অধিকার ও সামাজিক নিরাপত্তা নেই বললেই চলে।
এএলআরডি’র নির্বাহী পরিচালক শামসুল হুদা সংলাপে সভাপতির বক্তব্যে বলেন, খাদ্য উৎপাদনে পুরুষের থেকে নারীর অংশগ্রহণ এখন অনেক অনেক বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু, নারীরা সরকারি সেবা সেভাবে পাচ্ছে না। তারা শ্রম দেয় বেশি কিন্তু মজুরী পান অনেক কম।
তিনি বলেন, নারীরা সব থেকে বেশি অবহেলিত। ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী সদস্যদেরকে সহায়তা বরাদ্দ ও ক্ষমতা প্রদানের ক্ষেত্রে পুরুষের সমান অধিকার দিতে হবে। সংবিধান অনুযায়ী জনগণকে সর্বাধিক ক্ষমতা দিতে হবে।
লিখিত বক্তব্যে এএলআরডির প্রোগ্রাম ম্যানেজার সানজিদা খান রিপা বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে ক্ষুধামুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তুলতে হলে নারী কৃষকদের কৃষি বিষয়ক সরকারি পৃষ্ঠপোষতা বৃদ্ধির পাশাপাশি খাসজমি বিতরণ করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে নারী, আদিবাসী জনগোষ্ঠী, পারিবারিক কৃষক, মৎস্যচাষী সকলের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে ভূমিসহ অন্যান্য উৎপাদনশীল সম্পদ ও উপকরণ, বিপণন ইত্যাদি ক্ষেত্রে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার পরিসংখ্যানে জানতে পারি , বাংলাদেশে অপুষ্টির কারণে ১২ থেকে ৪৯ বছর বয়সী নারীদের ১২ শতাংশের বয়স এবং উচ্চতার তুলনায় ওজন অনেক কম। এছাড়াও, কৃষি উৎপাদনশীলতার সাথে যুক্ত নারীরা পুরুষের সমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে না। গ্রামীণ নারীদের ১৩ ভাগেরও কম নারীর নিজের নামে বৈধ ভূমি আছে।
সংলাপে রাঙ্গামাটির নারী কৃষক নিহারিকা চাকমা বলেন, “মেয়ে বলে আমাদের দাম দেয় না মানুষ। আমরা তো অনেক বেশি কাজ করি। ভোর বেলায় পাহাড়ে চলে যাই, পুরুষদের
আগেই যাই। কিন্তু মজুরি একরকম পাই না। দূর্গম পাহাড়ে ফসল উৎপাদন করে আবার তা বয়ে আনি আমরা বাজারে। আমাদের সরকারি কোন সাহায্য দেয়া হয় না।”
মধুপুর থেকে আগত নারী কৃষক ত্রিফলা চিরান বলেন, “আমরা সারাদিন ঘরে এবং মাঠে দুই জায়গাতেই কাজ করি। কিন্তু, আমরা গারো নারীরা কৃষি কার্ড এবং প্রশিক্ষণ খুবই কম পেয়েছি।”
মুক্তাগাছা ময়মনসিংহ থেকে নারী কৃষক মমতাজ বেগম বলেন, “আমরা বিভিন্ন সবজি চাষ করি। আমার স্বামী নাই। তাই আমিই আমার সবজি বাজারে নিয়ে যাই বিক্রিকরতে। বাজারে দেখি পুরুষরা বেশি দামে বিক্রি করে। আমাকে দাম দিতে চায় না। কম টাকা দেয়।”
চলনবিল অঞ্চল থেকে আগত প্রতিনিধি মন্জুর হোসেন বলেন, সরকার ভূমিহীনদের জন্য ঘর তৈরি করে দিচ্ছেন কিন্তুসেখানে নারীর সংখ্যা পুরুষের তুলনায় খুবই কম।
ইউনিয়ন পর্যায়ে নারী সদস্যদের জন্য বরাদ্দ পুরুষ সদস্যদের তুলনায় খুবই নিতান্ত। অথচ, নারীরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হওয়ার জন্য তিনটি এলাকা নিয়ে তাদের নির্বাচন করতে হয়।
উক্ত তৃণমূলের সংলাপে দেশের ২০ টি জেলা থেকে নারী কৃষক, জেলেসহ বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থার প্রধানগণ উপস্থিত ছিলেন।
//এল//