
দুবাইয়ের একজন সফল ব্যবসায়ী আঁখি
ছোটবেলা থেকেই নিজেকে একজন নারী হিসেবে নয় বরং একজন মানুষ হিসেবে ভাবতেন নিজেকে। সাধ্য না থাকলেও প্রচুর স্বপ্ন নিয়েই এগোচ্ছিলেন তিনি। দেশের কুসংস্কার আর প্রতিবন্ধকতা পেছনে ফেলে নিজেকে সফল উদ্যোক্তা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন বরিশালের বাকেরগঞ্জ থানার শেফালী আকতার আঁখি। কেবল সফল স্ত্রী বা মা নন, তীব্র ইচ্ছাশক্তি, কঠোর পরিশ্রম আর একাগ্র নিষ্ঠায় নিজ পরিচয়ে আঁখি এখন সংযুক্ত আরব আমিরাতে বাংলাদেশি গার্মেন্ট ব্যবসায়ী।
এখনো দেশের কর্মক্ষেত্র নারীদের জন্য বন্ধ সেখানে বিদেশের মাঠিতে একজন নারী তাঁর মেধা মননে নিপুণ হাতে গড়েছেন এই পোশাক কারখানা। ২০০৩ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতের আজমানে গৃহিনী হিসেবে আসেন। স্বামী দীর্ঘ দিন ধরে গার্মেন্ট ব্যবসার সাথে জড়িত ছিলো। অবসরে স্বামী মাজহারুল ইসলামের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান মাঝে মধ্যে দেখাশুনা করতেন তিনি। কিন্তু তাঁর গার্মেন্ট সম্পর্কে কোনো অভিজ্ঞতা ছিলো না। বিভিন্ন দেশের মানুষের সাথে কথা বলা সম্ভব ছিলো না। ভাষা বুঝার ব্যপারে সমস্যা হতো। এক বছরের মত কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ২০০৪ সাল থেকে তিনি সরাসরি জড়িয়ে যান ব্যবসায়। স্বামীর সহায়তায় তিনি শুরু করেন নিজস্ব গার্মেন্ট ব্যবসা। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে গড়ে তোলেন পাঁচটি গার্মেন্ট রেস্টুরেন্টে আর একটি নির্মাণ কোম্পানি। সফলতাও পেয়েছেন এসব ব্যবসায়। কর্মসংস্হান সৃষ্টি করেছেন দেশ বিদেশের মানুষের জন্য। তাঁর প্রতিষ্ঠানে এখন প্রত্যক্ষ আর পরোক্ষভাবে কাজ করে যাচ্ছেন বিভিন্ন দেশের দু'শত শ্রমিক।
তাঁর গার্মেন্ট ব্যবসা বিস্তৃত আমিরাত ছেড়ে মধ্যপ্রাচ্য বিভিন্ন দেশ ইরান, সিরিয়া, জর্দান, ওমান কুয়েত, কাতার, মিশর ও আফ্রিকায়। পেয়েছেন আর্থিক স্বচ্ছলতা আর পাশাপাশি রেমিট্যান্স প্রবাহ বৃদ্ধি করে দেশের অর্থনীতির চাকাকেও সচল রাখতে ভূমিকা রাখছেন তিনি।
শেফালী আকতার আঁখির গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করে দেশ বিদেশের শ্রমিকরাও সন্তুষ্ট। দেশীয় শ্রমিকরা ভিন্ন দেশের শ্রমিকদের সঙ্গে কাজ করতে নানা সমস্যার কথা জানান। কিন্তু ভিন্ন দেশের শ্রমিক থেকে নিজ দেশের শ্রমিক দিয়ে কাজ করাইতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন বলেন জানান তিনি।
তাঁর গার্মেন্টে প্রস্তুত বিভিন্ন ধরনের পোশাক যেমন শার্ট, টি-শার্টসহ ও বিভিন্ন ধরনের ইউনিফরম আমিরাতের বিভিন্ন প্রদেশের বাজারগুলোর চাহিদা পূরণ করে মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশসহ আফ্রিকার মিশর ও সুদানেও রপ্তানি হচ্ছে। এসব দেশে তাঁর গার্মেন্ট পণ্যের চাহিদাও রয়েছে প্রচুর। বাংলাদেশি শ্রমিকদের দক্ষতা কাজে লাগাতে ভিসা প্রক্রিয়া আরো সহজ করার দাবি জানান দুই সন্তানের জননী শেফালী আকতার আঁখি।
তাঁর প্রত্যাশা, সরকার এয়ারপোর্ট ও দেশে প্রবাসী হয়রানি বন্ধের যথাযথ ব্যবস্হা গ্রহণ করবে।
//জ//