ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৯ মার্চ ২০২৪

English

বৃত্তের বাইরে

ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করে স্বাবলম্বী চরাঞ্চলের নারীরা

ফাহমিনা তন্বি:

প্রকাশিত: ২১:২০, ২৪ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ২১:৩৬, ২৪ নভেম্বর ২০২২

ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করে স্বাবলম্বী চরাঞ্চলের নারীরা

ভার্মিকম্পোস্ট তৈরি করে স্বাবলম্বী চরাঞ্চলের নারীরা

ফরিদপুর সদরের চর মাধবদীয়া ইউনিয়নের হাফেজডাঙ্গি  গ্রামের বাসিন্দা রওশন আরা (৩২)। তিন সন্তানের জননী। স্বামী অটোরিক্সা চালক। রওশন আরা একসময় শুধু ঘরের কাজ করতো। সংসারে অভাবে অনটনে লেগেই থাকতো। স্বামীর একার রোজগারে সংসার চালাতে কষ্ট হতো তার। চাইলেই সন্তানদের আবদার মিটাতে কষ্ট হতো। ছোট ছোট ইচ্ছেগুলো একসময় চাইলেই  পূরণ করতে পারতো না। কিন্তু আজ রওশন আরা জৈব কেচোঁ সার (ভার্মিকম্পোস্ট) উৎপাদন  এবং বিভিন্ন ফসল চাষ করে করে উপার্জন করছেন। হয়েছেন আত্ননির্ভরশীল। একজন স্বাবলম্বী নারী।

সম্প্রতি ফরিদপুর সদর ঘুরে দেখা যায়, শুধু রওশন আরাই নয়, ভার্মিকম্পোস্ট বা জৈব কেচোঁ সার উৎপাদন করছেন ফরিদপুরের অনেক নারীই।কেঁচো সার উৎপাদন করে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি নিজের ভাগ্য বদল ও স্বাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দেড় শতাধিক কৃষাণী নারী।এদিকে কৃষাণীদের তৈরিকৃত কেঁচো সার দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এলাকাতে। তা দেখে এখন উপজেলার অনেক যুবক ও নারীরা বিষমুক্ত এ জৈব সার (ভার্মিকম্পোস্ট) উৎপাদনে ঝুঁকছেন।গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষক ও নিজেদের চাহিদা পূরণ করে এখন উপজেলার বিভিন্ন এলাকার কৃষকদের চাহিদা পূরণ করছে কৃষাণীদের উৎপাদিত কেঁচো সার।

সরেজমিনে দেখা যায়, ফরিদপুর সদরের চর মাধবদীয়া ইউনিয়নের হাফেজডাঙ্গি গ্রামে জৈব কেঁচো সার(ভার্মিকম্পোস্ট) উৎপাদন ও বিভিন্ন সবজি -ফসল চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন প্রায় দেড় শতাধিক নারী । ঘরের কাজের পাশাপাশি স্বল্প পুঁজি ও কম পরিশ্রমে কেঁচো সার উৎপাদন করে পরিবারের আর্থিক স্বচ্ছলতা বাড়ছে বলেও জানিয়েছেন তারা।

সরেজমিনে এসব উপকারভোগী নারীদের সাথে কথা বলে জানা যায়,  বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)` তাদের অংশীদার স্থানীয় উন্নয়ন সংস্থা বেনিফিশিয়ারিশ ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম  (বিএফএফ)-এর সহায়তায় উঠান বৈঠকের মাধ্যমে চচর মাধবদীয়া ইউনিয়নের হাফেজডাঙ্গি  গ্রামে প্রায় দেড় শতাধিক  নারী আত্মনির্ভরশীল হচ্ছে। এই সকল নারীরা ৮ টি দলে (কাশফুল, সুখেেরমূল, জবা, সূর্যমুখী এরকম আরও ৮টি দলে)  বিভক্ত হয়ে একেকটি দলে প্রায় ২০/২৫ জন একতত্রিত হয়ে কৃষি কাজে আত্মনির্ভরশীল হয়ে স্বাবলম্বী হওয়ার জন্য ফসল চাষ করে থাকেন।


এবিষয়ে কৃষাণী রওশন আরা বলেন, জৈব কেঁচো সার উৎপাদন করে নিজেদের জমিতে ব্যবহার এবং পাশাপাশি অন্যদের কাছে বিক্রিও করে টাকা রোজগার করে আজ আমি একজন স্বাবলম্বী নারী।

তিনি বলেন, প্রথমে কৃষি জমিতে এসব ফসল চাষ করতে যেতে সংকোচ বোধ হতো, লজ্জা পেতাম। এক সময় প্রথাগত সংস্কার ভেঙ্গে এখন কিন্তু স্বতস্ফুর্তভাবে মাঠে কাজ করছি। কেঁচো সার উৎপাদনের আয়-রোজগার দিয়ে স্বামী ও তিনটি সন্তান নিয়ে বেশ ভালো আছি।

রওশন আরও বলেন, জৈব সার ছাড়াও  রওশন বন্ধকী জমি নিয়ে বিভিন্ন ফসল যেমন- ধান, ভুট্টায়,সরিষা, পাট, হলুদ, মরিচ এবং মাছ চাষ করি । আমাদের এখন সরকারের কাছে একটাই দাবি কৃষাণীর অধিকার। রওশন আরার মতো অনেক নারী মাঠে জমিতে ফসল চাষ করছেন তাদেরও সরকারের কাছে অনেকগুলোর দাবির মধ্যে একটি অন্যতম দাবি হলো কৃষাণীর অধিকার। 


বেনিফিশিয়ারিশ ফ্রেন্ডশিপ ফোরাম  (বিএফএফ) এর নির্বাহী পরিচালক এএনএম ফজলুল হাদী সাব্বির বলেন, প্রান্তীক নারীদেরকে কৃষি কাজের মাধ্যমে স্বাবলম্বী করার লক্ষ্যে বন্ধকী জমি নিয়ে এবং বিভিন্ন পরামর্শ, সরকারি কৃষিকর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে বিএফএফ`  চর মাধবদীয়া ইউনিয়েন ৮টি দলের মাধ্যমে (একেকটি দলে ২০/২৫ জন)  নারী কৃষকরা মিলে জৈব কেচোঁ সার উৎপাদন এবং সবজি, ধান, পাট,সরিষা, ভুট্টা  প্রভৃতি চাষের জন্য এসব নারী কৃষকদেরকে সহযোগিতা করে থাকে। এছাড়াও এসকল কৃষক নারীদের জন্য  অ্যাডভোকেসি , কৃষি সমবায়, অ্যাওয়ারনেস প্রােগ্রাম, গর্ভরমেন্ট থেকে সুপারিশে ৪% সুদে লোন পাওয়া ক্ষেত্রে সহযোগিতা করছে বিএফএফ।

এ বিষয়ে ফরিদপুর সদরের কৃষি সম্প্রাসরণ অধিদপ্তরের কৃষি কর্মকর্তা আনোয়ার হোসেন বলেন, দেশের ৩৩ শতাংশ  নারীর নামে জমি আছে। সরকার খাসজমি বন্দোবস্ত ৫০ শতাংশ নারীর জন্য রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। চর মাধবদীয়ায় স্বল্প পরিসরে হলেও এখানে ভার্মিকম্পোস্ট বা জৈব কেচোঁ সার উৎপাদন করা হচ্ছে। এ সারের ব্যবহার যতই বাড়বে ততই ক্ষতিকর রাসায়নিক সারের ব্যবহার কমে আসবে । ভার্মিকম্পোস্টকে কেন্দ্র করে উদ্যোক্তা তৈরির প্রচেষ্টা রয়েছে আমাদের।বিভিন্ন এনজিওর সহযোগিতার পাশাপাশি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর ও  এসব কৃষক নারীদের প্রশিক্ষণ এবং পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছে।

আনোয়ার হোসেন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রদর্শনীতে ৩০% কোটা শুধ নারীদের জন্য রয়েছে। আমরা তাদেরকে কৃষি ফসল উৎপাদনে সার্বিক কারিগরি সহায়তা ও পরামর্শ দিয়ে থাকি। একই সাথে যারা ইতিমধ্যে জৈব কেচোঁ সার উৎপাদন করছেন এবং যারা এটি করতে আগ্রহী ও নতুন উদ্যোক্তাদের আমরা হাতে কলমে প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি।

উন্নয়ন কর্মীরা বলছেন, প্রায় ৫ থেকে ৬ কোটি নারী বিভিন্ন ধরনের কৃষি উৎপাদনের সাথে সরাসরি জড়িত। বাংলাদেশের নারীদের একটি বড় অংশ বাস করেন গ্রামে। কৃষিকাজে তারা সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। কিন্তু তাদের অর্থনৈতিক অবদানের মূল্যায়ন বা স্বীকৃতি তারা পাচ্ছেন না।

এ ব্যাপারে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা এসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম এ্যান্ড ডেভলপমেন্ট (এএলআরডি)`র সহকারী কর্মসূচী কর্মকর্তা সানজিদা রিপা বলেন, এএলআরডি তার সহযোগী সংস্থার মাধ্যমে জাতীয় এবং স্থানীয় পর্যায়ে নারীর ভূমি, কৃষি অধিকার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে আসছে।
তিনি বলেন, কমপক্ষে ৬০ থেকে ৭০ ভাগ কাজ নারীদের হাতে সরাসরি করেন নারীরা। ফসল উৎপাদনের ক্ষেত্রে বীজ সংরক্ষণ থেকে শুরু করে মাঠে ফসল ফলানো, মাঠ থেকে ফসল আনার পরে সেটিকে প্রক্রিয়াজাত করে ঘরে তোলার ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়ায় নারীর ভূমিকা অনেক বেশি।  আর এসব কাজে নারীদের ভূমিকাই প্রধান।কিন্তু নারীকে মোটেও মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। তাদের অবমাননা করা হয়েছে। পরিসংখ্যানে তাদের তুলে ধরা হয়নি পুরুষতান্ত্রিক সমাজে।কৃষিকাজ নারীর অবদানের স্বীকৃতি দিতে হবে। জাতীয়ভাবে কৃষি নীতি হলে নারীদের কৃষক হিসেবে মর্যাদা দিতে হবে।`

//এল//

কোন দূর্নীতিকে প্রশ্রয় দেব না: বিএসএমএমইউ ভিসি

বিএসএমএমইউতে সভা ও জাতীয় সম্মেলন  অনুষ্ঠিত 

 ইন্টার্ন চিকিৎসকরাই একটি হাসপাতালের প্রাণ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

এক চুমুতে আড়াই বছরের জেল!

ঢাবির কলা ও সামাজিক বিজ্ঞান ইউনিটে প্রিয়ন্তি প্রথম

ডিজিটাল সুরক্ষা বিষয়ক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন

নারীর নিরাপদ কর্মক্ষেত্র নিশ্চিতে পুরুষদের সম্পৃক্তের আহ্বান

ঢাবির সব ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ

মায়ের উৎসাহে চাকরি ছেড়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন শায়লা

চালক ছাড়াই ট্রেন চললো ৭০ কিলোমিটার!

ইসলামী ব্যাংকে বঙ্গবন্ধুর জীবনাদর্শের উপর আলোচনা

বিশ্বে প্রতিদিন ১০০ কোটি টন খাবার নষ্ট হয়: জাতিসংঘ

রাজধানীতে শিশু অপহরণ বেড়েছে: ডিবি প্রধান

কর্মবিরতি প্রত্যাহার ইন্টার্ন চিকিৎসকদের

ঠাকুরগাঁওয়ে রোজাদার ও শিশুদের মাঝে ইফতার বিতরণ