ছবি সংগৃহীত
জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে খরস্রোতা যমুনা নদীর বুকে জেগে উঠা বালুচরে বাদাম চাষে বাম্পার ফলন হয়েছে। চরাঞ্চলে শুরু হয়েছে বাদাম তোলার মহোৎসব। ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় চরাঞ্চলের চাষিদের মুখে ফুটেছে তৃপ্তির হাসি। এখানকার বেলে মাটি বাদাম চাষের জন্য উপযোগী হওয়ায় বাম্পার ফলন হয়েছে।
গত বছর বাদামের বাম্পার ফলন হওয়ায় এবং বাজারে ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর আরো অধিক পরিমাণ জমিতে বাদাম চাষ করেছেন চাষিরা। তবে অধিকাংশ চাষির অভিযোগ কৃষি অফিস থেকে পায়নি কোন সরকারী প্রণোদনার বীজ-সার, পায়নি কোন সহযোগীতা বা পরামর্শ। কৃষি অফিস থেকে কোন প্রকার সহযোগীতা ও সরকারী প্রণোদোনা না দিলেও কৃষকের কেনা বীজের বাদাম ক্ষেত স্থানীয় সংসদ সদস্য কে দিয়ে পরিদর্শন করিয়েছে উপজেলা কৃষি অফিস।
উপজেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, প্রতি বছরের মতো এবারও বিভিন্ন ইউনিয়নের চরাঞ্চলে ১৯৫ হেক্টর জমিতে বাদামের চাষাবাদ হয়েছে। তবে শুধু বাদামই নয় এসব চরাঞ্চলে বাদামের পাশাপাশি চাষ হয়েছে মুসুর ডাল, খেসারি, ছোলা, মাসকালাই ও গম। তবে কোন কোন এলাকায় বাদামের চাষ হয়েছে সেই তথ্য দিতে পারেনি উপজেলা কৃষি অফিস।
সরেজমিনে গিয়ে চরগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, বিস্তীর্ণ বালুভূমিতে দোল খাচ্ছে হাজারো সবুজ বাদামগাছ। বালুর নিচে লুকিয়ে থাকা বাদামের ফলন দৃশ্যমান না হলেও কিছু বাদাম বালু ভেদ করে উঁকি দিচ্ছে। কৃষকদের কেউ কেউ বাদাম ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন। আবার কেউ কেউ ক্ষেত থেকে বাদাম তুলে বিক্রির জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন। যেদিকে চোখ যায় শুধু সবুজের সমারোহ। উপজেলার পিংনা ইউনিয়নের ডাকাতিয়া মেন্দা, নলসন্ধা, আওনা ইউনিয়নের কুমারপাড়া, কুলপাল, কাওয়ামারা, আওনার চর, জেডি ঘাট, পোগলদিঘা ইউনিয়নের দামোদরপুরসহ বিভিন্ন দূর্গম চরাঞ্চলে বাদামের বাম্পার ফলন হয়েছে।
বাদাম চাষি, উজ্জল মিয়া, রনি আহাম্মেদ বলেন, প্রতি বছর বন্যায় আমাদের অনেক ক্ষতি হয়। বন্যার ক্ষতি পুষিয়ে বন্যা-পরবর্তী সময়ে জেগে উঠা চরে বাদাম চাষ করি। এবার আমি ২৪০ টাকা কেজি করে বাদামের বীজ কিনে আমার ১০ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। প্রতি বিঘাতে ৮ থেকে ১০ মন করে বাদাম আসবে। খরচ বাদ দিয়ে বিঘাপ্রতি প্রায় ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা থাকবে বলে আশা করি। আমরা আমাদের নিজেদের অভিজ্ঞতায় চাষ করি। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে আমাদের কোন সরকারী বীজ বা সহযোগিতা পরামর্শ দেয়নি।
চরাঞ্চলের বাদাম চাষি রাশিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমি ৩ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করে ভালো লাভবান হয়েছিলাম। বাদামের দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর আমি বর্গা নিয়ে ৫ বিঘা জমিতে বাদাম চাষ করেছি। বাদামের কচিপাতা চাষিরা গরু-ছাগলের খাবার হিসেবে খাওয়াই। এতে গরু-ছাগল স্বাস্থ্যবান হয়। তবে অন্য ফসলের মতো বাদাম চাষে তেমন একটা সার ও কীটনাশক প্রয়োগ করতে হয় না। বীজ রোপণের দুই থেকে তিন মাসের মধ্যেই বাদাম তুলে সংগ্রহ ও বাজারে বিক্রি করা হয়।’
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ অনুপ সিংহ বলেন, এ‘ বছর আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ও পোকার আক্রমণ না হওয়ায় বাদামের ফলন ভালো হয়েছে। আমরা সব সময় কৃষকের সাথে যোগাযোগ রাখছি। আমরা কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে চরাঞ্চলের বাদাম চাষিদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বাদামের বীজ বিতরণ করেছি। তবে চাষিদের অভিযোগ অস্বীকার করে কৃষি অফিসার আরও বলেন, আমাদের সরকারী বীজ ও সারের পরিমান কৃষকদের থেকে অনেক কম। তাই আমরা সব কৃষকদের দিতে পারি না।’
ইউ