
জাতীয় পার্টির লগো ....................... ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন এলেই জাতীয় পার্টি আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসে। সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান নিয়েও শুরু হয় নানামুখী জলপনা কল্পনা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়েও চলছে নতুন করে মনোনয়ন জলপনা-কল্পনা।
দ্বাদশ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিল তো বটেই, প্রতীক বরাদ্দের সময়ও চলে এসেছে। কিন্তু এখনো জাতীয় পার্টির অস্থিরতা দূর হয়নি। জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী বিরোধী দলীয় নেত্রী দলটির বর্তমান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদসহ তাদের সন্তান সাদ এরশাদ এই নির্বাচনে অংশ নেননি।
এদিকে সাদ এরশাদ এর আসনে এবার নির্বাচন করছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। শেষ বেলায় এসে জি এম কাদের এর নেতৃত্ব এখন হুমকির মুখে পড়েছে। জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু’র নেতৃত্ব যে কোন সময় জবাবদিহিতার মুখোমুখি হতে পারে ইঙ্গিত মিলেছে দলীয় সুত্রে।
জাতীয় পার্টির একাধিক সুত্রে জানা গেছে মহাসচিব ও চেয়ারম্যানের ভ’মিকায় নির্বাচন কেন্দ্রীক কোন রকম সমস্যার সন্মুখীন হলে শেষ মুহুর্তে দলটিতে নেতৃত্বের পরিবর্তন আসলেও আসতে পারে।
দলীয় সুত্রে আরো জানা গেছে এজন্যই কি চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা শেরিফা কাদেরকে ১২ ডিসেম্বর তরিগরি করে প্রেসিডিয়াম সদস্য ঘোষণা দেওয়া হয়েছে? দলের ভিতরে এসব নিয়ে চুড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য আগামী ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা কি হতে যাচ্ছে দলটির ভিতরে? কারণ ১৭ ডিসেম্বর দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন। জাতীয় পার্টির প্রধান পৃষ্টপোষক রওশন এরশাদের এবং জি এম কাদের এর মধ্যে চলমান নেতৃত্বের দাবি নিয়ে দলের মধ্যে চলছে দ্বন্ধ। দেবর-ভাবী দু’জনের দাবি তাদের স্বাক্ষরেই জাতীয় পার্টির প্রার্থীরা দলীয় মনোনয়ন পাবেন। কিন্তু নির্বাচন কমিশন জানিয়েছেন, আইনত জি এম কাদের স্বাক্ষরিত দাখিলকৃত মনোনয়ন পত্র গ্রহণযোগ্য বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
এদিকে জি এম কাদেরর স্বাক্ষরিত মনোনয়নপত্র দাখিলকে জি এম কাদেরের অধীনে থাকার সমতুল্য বিবেচনায় শেষ পর্যন্ত প্রার্থিতার প্রতিযোগিতার দৌড়ে অংশ গ্রহণ করেন নাই রওশন এরশাদ। সেই সঙ্গে মনোনয়নয় পত্র গ্রহণসহ জমা দেননি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ ও রওশন এরশাদের পুত্র সাদ এরশাদও। এদিকে মঙ্গলবার (১২ ডিসেম্বর) রওশন এরশাদের নেতৃত্বে জাতীয় পার্টি রওশন পহ্নী পরিচিত নেতারা আওয়ামী লীগ সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছেন গণভবণে। এসময়ে রওশন এরশাদ প্রধানমন্ত্রীকে জিএম কাদের’র নেতৃত্বে জাতীয় পার্টিকে জোটে না, নেওয়ার অনুরোধ করেছেন বলে জানা গেছে।
অন্যদিকে দলীয় একাধিক সুত্র বলেছেন, রওশন এরশাদের সঙ্গে জাতীয় পার্টি থেকে মাইনাস প্রক্রিয়াসহ দলীয় বেশকিছু সিদ্ধান্তকে কেন্দ্রকরে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে মতানৈক্যের কারণে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানসহ মহাসচিব’র দায়িত্ব প্রাপ্ত আসনের অবস্থা টলমলে হয়ে উঠেছে বলে সুত্রের দাবি।
জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীকে সামনে রেখে খোজাঁ হচ্ছে নতুন মহাসচিব এবং চেয়ারম্যান জি এম কাদের থাকলেও তার হাতে থাকবে না একক ক্ষমতা দলীয় সিদ্ধান্তে। দলীয় সুত্রে আরো জানা গেছে চলমান এঅবস্থায় সাবেক মন্ত্রী জাতীয় পার্টির কো-চেয়ারম্যান ব্যারিষ্টার আনিসুল ইসলাম মাহামুদ পার্টির নির্বাচন পরিচালনাসহ সার্বিক দায়িত্বে প্রকাশ্যে আসলেও আসতে পারেন বলেও সম্ভবনা দেখছেন কেউ কেউ। অন্যদিকে উকণ্ঠের মধ্যে রয়েছেন চেয়ারম্যান। তবে তিনি শেষ পর্যন্ত ১৭ ডিসেম্বর চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিবেন এমনটাও জানা গেছে।
সাংবিধানিকভাবে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের সময়ও এগিয়ে এসেছে, ইতিপূর্বে জাতীয় পার্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে পূর্বের মতোই আসন ভাগাভাগি করেই নির্বাচন করবে না এককভাবে ভোট করবে? সেই বিষয়েও এখনো চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন নাই জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের দলীয় সুত্রে প্রকাশ। অপরদিকে কেন্দ্রীয় নেতাদের বেশীর ভাগ নেতাই মনে করছেন, এককভাবে নির্বাচনে গেলে দুই-তিনটি আসনের অধিক আসন পাওয়ার সম্ভবনা নিয়েও দ্বিধাদ্বন্ধে রয়েছেন!
দলীয় একাধিক সুত্রে আরো জানাগেছে, জাতীয় পার্টির বর্তমান সংসদ সদস্যদেরও নিজ এলাকায় কোন রকম জনসমর্থনসহ দলীয় নেতা-কর্মীও নেই এবং জনসম্পৃক্ততাও নেই। রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাধারণ মানুষ মানুষ মনে করছেন রওশন এরশাদ এবং প্রয়াত এরশাদকে যতোটা বিশ্বাস করা গিয়েছে এবং করা যায় জি এম কাদেরকে করা যায় না! রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও বিভিন্ন পেশার মানুষেরাসহ জাতীয় পার্টির একাধিক সুত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগকে রাজনৈতিকভাবে ভোটের মাঠে বেকায়দায় ফেলার সিদ্ধান্তও নিয়েছেন জি এম কাদের। আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারক ও শর্তক কারণ তাদের কাছেও সময় সময় তথ্য যাচ্ছে বলে ও জানা গেছে ১৭ ডিসেম্বর জি এম কাদের নির্বাচন থেকে সরে না গেলেও নির্বাচনের আগ মুর্হুতে নির্বাচন থেকে স্বরে যেতে পারেন, সুষ্ঠু পরিবেশের নামে আওয়ামী লীগের বিরেুদ্ধে অভিযোগ তুলে ? অপর দিকে রওশন এরশাদের গণভবণের বৈঠকের পর থেকেই জি এম কাদের আওয়ামী লীগকে বেকায়দায় ফেলার চিন্তা করতে গিয়ে এখন জাতীয় পার্টিকেই বিপাকে ফেলে দিয়েছেন,বলে একাধিক নেতা নাম প্রকাশে অইচ্ছুক কয়েকজন প্রেসিডিয়াম সদস্যরা জানিয়েছেন।
জাতীয় পার্টির একাধিক সূত্র জানিয়েছে, সম্প্রতি আওয়ামী লীগের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নির্বাচনে ৭৫টি আসন চেয়ে বসেন জি এম কাদের ও মুজিবুল হক চুন্নু। বলেন, অন্তত ৪০টি আসনের আশ্বাস মিললে জাপা সমঝোতা করবে আওয়ামী লীগের সঙ্গে নির্বাচনে যেতে। জাপার এমন চাহিদাকে পাত্তাই দেননি আওয়ামী লীগ নেতারা। তারা ২০টিরও কম আসনে ছাড় দেওয়ার ইঙ্গিত দেন। পরে শেখ হাসিনার সঙ্গে রওশন এরশাদের বৈঠক হলে আসন নিয়ে সমঝোতার পথ থেকেই সরে দাঁড়িয়েছে আওয়ামী লীগ। বর্তমান পরিস্থিতিতে জাতীয় পার্টির অনেক নেতার মাথায় রীতিমতো আকাশ ভেঙ্গে পড়ার মতো অবস্থা দাড়িঁয়েছে।
জাতীয় পার্টির এক প্রেসিডিয়াম নেতা নাম প্রকাশে অইচ্ছুক জানিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কারণেই জাতীয় পার্টি টিকে আছে। বিএনপি নির্বাচনে এলে জাতীয় পার্টির অস্বিত্ব বিলীন করে দিতে হবে না । জনগণ-ই বিলীন করে দেবে ।
তাই আমরা যারা প্রার্থী হয়েছি ও মাঠে রয়েছি, তারা জি এম কাদেরের আদেশ-নির্দেশের তোয়াক্কা করব না, নিজেদের অস্তিত্বের প্রশ্নে। জাতীয় পার্টির কো- চেয়ারম্যান বলেছেন, সোজাভাবে পথ চললে নির্বাচনের আগে নেতৃত্বে পরির্বতন আসবে বলে মনে হচ্ছে না। তবে বাঁকা পথে চললে পরিবর্তন আসতেও পারে।
এরকম লক্ষণ দলের মধ্যে দেখাও যাচ্ছে। যেমন জি এম কাদের পার্টির চেয়ারম্যান হলেও তার ভূমিকাটি পালন করছেন ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ। অন্যদিকে মহাসচিব পদে থাকলেও মুজিবুল হক চুন্নু মূলত পার্টির মুখপাত্রের ভূমিকা পালন করছেন। অদৃশ্য অনেক শক্তিই এখন পার্টিতে বড় ধরনের ভূমিকা রাখছে। আজ বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ করে জি এম কাদের সাহেবের মুঠো ফোন বন্ধ পাওয়া গিয়েছে। এদিকে মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু সাহেব ফোন ধরেন নাই।
//জ//