
সংগৃহীত ছবি
সমন্বিত কার্যক্রমের মাধ্যমে সুস্থ জাতি গঠনে প্রকল্পের সাথে সংশ্লিষ্টদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালনে আন্তরিকতার সাথে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ এবং মহিলা ও শিশু বিষয়ক উপদেষ্টা শারমীন এস মুরশিদ।
আজ মংগলবার (১৫ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর একটি হোটেলে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এর আয়োজনে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধীনে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির ‘‘সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশুযত্ন কেন্দ্রের মাধ্যমে শিশুর প্রারম্ভিক বিকাশ ও সুরক্ষা এবং সাঁতার সুবিধা প্রদান (আইসিবিসি) প্রকল্পের বেজলাইন জরিপ ও নলেজ, অ্যাটিচুড ও প্রাকটিস এনালিসিস এর ফলাফল বিষয়ক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ একথা বলেন ।
বিশেষ অতিথি ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, স্বাগত বক্তব্য দেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ও আইসিবিসি প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোঃ আব্দুল কাদির। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিসের জনস্বাস্থ্য বিভাগের পরিচালক কেলি লারসন, বাংলাদেশ প্রারম্ভিক শিশু বিকাশ নেটওয়ার্কের চেয়ার পারসন ড. মনজুর আহমেদ, সিনারগোস বাংলাদেশের কান্ট্রি ডাইরেক্টর এষা হোসেন,
মুল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সিআইপিআরবি উপ-নির্বাহী পরিচালক ড. আমিনুর রহমান। বাংলাদেশ শিশু একাডেমির মহাপরিচালক ও মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব দিলারা বেগম অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য দেন। নীতি নির্ধারক প্রতিনিধি, পানিতে ডোবা প্রতিরোধ কার্যক্রম বাস্তবায়নকারী প্রকল্পের প্রতিনিধি, উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার প্রতিনিধি, কমিউনিটি প্রতিনিধি, গণমাধ্যম প্রতিনিধি ও শিশুদের জন্য কাজ করে এমন দেশী এবং আন্তর্জাতিক বেসরকারি সংস্থার প্রতিনিধিগণ সেমিনারে অংশ নেন।
সার্বিক সহযোগিতায় ছিল বাংলাদেশ শিশু একাডেমি ও সিনারগোস বাংলাদেশ ।
উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, “শিশুদের সার্বিক কল্যাণ সরকারের অন্যতম লক্ষ্য যা পূরণে আইসিবিসি প্রকল্পের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রকল্প অন্যান্য বড় প্রকল্পের জন্য অনন্য উদাহরণ হয়ে থাকবে। কেননা এর মাধ্যমে সুরক্ষিত পরিবেশে শিশুদের নির্ভয়ে বেড়ে ওঠার পরিবেশ নিশ্চিত করা হয়েছে।”
উপদেষ্টা শারমীন এস. মুরশিদ বলেন, যেসব জেলার শিশুরা এই প্রকল্পের আওতার বাইরে আছে তাদেরকে কিভাবে নিরাপদ রাখা যায় সে ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়ার তাগিদ দেন তিনি।
তিনি বলেন, শিশুর সামগ্রিক বিকাশ, যত্ন ও সুরক্ষা নিশ্চিত করা, তাদের শারীরিক, মানসিক বিকাশের লক্ষ্যে যাবতীয় সেবাসমূহ নিশ্চিত করা, এক থেকে পাঁচ বছরের শিশুদের চাইল্ড কেয়ারে এবং ছয় থেকে দশ বছরের শিশুদের সাঁতার প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা এবং শিশুদের
সুরক্ষা নিশ্চিত করা ও জীবন মানের উন্নয়ন, এছাড়াও শিশু যত্ন কেন্দ্রের সাথে সম্পৃক্ত অভিভাবকদের জীবনমান উন্নয়ন সাধন নিশ্চিত করতে সরকার বদ্ধপরিকর ।
মমতাজ আহমেদ তাঁর বক্তব্যে বলেন, “জাতির ভবিষ্যৎ প্রজন্মের সুরক্ষিত জীবন গড়তে আইসিবিসি প্রকল্প চলমান থাকা এবং সারা দেশে ছড়িয়ে দেয়া জরুরি।”
কেলি লারসন বলেন, “সরকারের প্রচেষ্টা ও সহযোগিতায় সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠান একযোগে কাজ করলে শিশু সুরক্ষা বিষয়ক কার্যক্রমগুলোর সক্ষমতা বাড়বে। শিশুদের নিরাপত্তায় সরকারি এই উদ্যোগে সহায়তা করতে পেরে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছে।”
ড. মনজুর আহমেদ বলেন, "শিশুদের সুন্দর ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে আইসিবিসি প্রকল্প অন্যতম ফলপ্রসূ সমবেত পদক্ষেপ। শিশু বিকাশে কর্মরত প্রতিষ্ঠানসমূহকে সঠিক দিক-নির্দেশনা দিতে সামগ্রিক শিশু বিকাশ নীতিমালা থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন।"
এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
এষা হোসেন বলেন, “ আইসিবিসি প্রকল্প সরকারি ও বেসরকারি উদ্যেগের কার্যকরী মেলবন্ধন।"
তিনি প্রকল্পটির এ পর্যন্ত অর্জিত বিভিন্ন সাফল্য তুলে ধরে এর দ্বিতীয় পর্যায়ে বাস্তবায়িত হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে সুপারিশ করেন।
সেমিনারে বেইসলাইন এন্ড কেএপি এনালাইসিস সার্ভে এন্ড অনগোয়িং ড্রয়িং প্রিভেনশন রিসার্চ এক্টিভিটিস শীর্ষক মূল প্রবন্ধে ড. আমিনুর রহমান শিশুযত্ন সম্পর্কে তার প্রধান যত্নকারীর জ্ঞান, মনোভাব ও আচরণ যাচাই সংক্রান্ত ফলাফল তুলে ধরেন। যার মধ্যে রয়েছে শিশুদের সুষ্ঠুভাবে দেখাশোনা করা, সুস্বাস্থ্য, পর্যাপ্ত পুষ্টি, নিরাপত্তা ও সুরক্ষাসহ শিশুদের পানিতে ডোবা ও অন্যান্য ইনজুরিতে মৃত্যুর সার্বিক অবস্থা ইত্যাদি । এসকল বিষয়ে উন্নতি সাধনের জন্য কার্যকরী পদ্ধতিসমূহ তুলে ধরেন।
১ লাখ ৩৩ হাজার ৩৮৭ বাড়ির ৫ লাখ ২৫ হাজার ৬৪৯ জনসংখ্যার উপর গবেষণা চালিয়ে বাংলাদেশের ১৬টি জেলার ৪৫টি উপজেলায় আইসিবিসি প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সমীক্ষায় প্রাপ্ত তথ্যে বলা হয় যে, বাংলাদেশের ৫ বছরে কম বয়সী শিশুদের মৃত্যুর সবচেয়ে বড় ঝুঁকি পানিতে ডুবে মারা যাওয়া। এই মৃত্যুর ঘটনাগুলো ঘটে সাধারণত বাড়ির ২০ মিটারের মধ্যে অবস্থিত জলাধারে এবং দিনের প্রথম ভাগে। গ্রামাঞ্চলে পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার এই হার শহরের চাইতে বেশি, যার সম্ভাব্য কারণ হতে পারে যে সেখানে পুকুর আর ডোবার মত ছোট ছোট জলাধারের সংখ্যা বেশি।
১ থেকে ৫ বছরে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর মধ্যে পুকুরে ৬৮ শতাংশ, খাদে ১৫ শতাংশ, খালে ৭ শতাংশ, নদীতে ৫ শতাংশ এবং অন্যান্যভাবে ৫ শতাংশ মারা যায়। বাড়ির ২০ মিটার দূরে পানিতে ডুবে শিশু মারা যায় ৪৬ শতাংশ।
এজন্য ৫ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য ৮ হাজার টি সমাজভিত্তিক সমন্বিত শিশু যত্ন কেন্দ্র স্থাপন এবং পরিচালনা করা। ২ লাখ শিশুকে এই প্রকল্পের আওতায় সেবা প্রদান করা হবে। ৬ থেকে ১০ বছরের শিশুদের জন্য ১৬০০ টি ভেনুতে সাঁতার শেখানো হবে। নিরাপদ ও সাশ্রয়ী শিশু-যত্ন প্রদানের ক্ষেত্রে সুস্পষ্ট ভূমিকা পালনের বাইরেও কেন্দ্রগুলো শিশুদের পাশাপাশি তাদের মা-বাবাদের জন্য শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে উঠবে, খেলার মাধ্যমে ভালোভাবে শেখা, ভালো অনুশীলন গুলোকে সংগ্রহ করে ছড়িয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হবে। এটি শিশুদের মানসিক বিকাশ, সামাজিক বিকাশ , স্বাস্থ্যবিধি ও পুষ্টি বিষয়ক উন্নয়নের মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে।
দিলারা বেগম সমাপনী বক্তব্যে অতিথিদের সুপারিশমালায় প্রকল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার পাথেয় হিসেবে কাজ করবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। এ লক্ষ্যে তিনি সংশ্লিষ্ট সকল প্রতিষ্ঠানের কাছে আন্তরিক সহযোগিতা চেয়ে এবং সকলকে ধন্যবাদ জানিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষণা করেন।
//এল//