ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, , ০৭ জুন ২০২৫

English

আইন আদালত

ষোড়শ সংশোধনী ছিল ‘উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত’, রিভিউয়ের রায় প্রকাশ

উইমেনআই প্রতিবেদকঃ

প্রকাশিত: ২০:১৬, ৫ জুন ২০২৫

ষোড়শ সংশোধনী ছিল ‘উদ্দেশ্যেপ্রণোদিত’, রিভিউয়ের রায় প্রকাশ

সংগৃহীত ছবি

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী ছিল ‘উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইন’ ছিল বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। বৃহস্পতিবার (৫ জুন) সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ৫০ পাতার এ রায় প্রকাশিত হয়।

এর আগে, আপিল বিভাগের রায়ের রিভিউ (পুনর্বিবেচনা) আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন ছয় বিচারপতির বেঞ্চ সর্ব সম্মতিক্রমে গত বছরের ২০ অক্টোবর এ রায় দেন।

রায়ে পৃথক পর্যবেক্ষণ সহকারে সর্বসম্মতিক্রমে দেওয়ানি রিভিউ আবেদনটি নিষ্পত্তি করা হয়। ফলস্বরূপ, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে পুর্নবহাল করা হয়। এই রায়ের মাধ্যমে সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ পুনর্বহাল করে সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের হাতে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

রায়ে ছয়জন বিচারপতি পৃথক পৃথকভাবে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন। প্রধান বিচারপতি ব্যতীত রায় প্রদানকারী অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম, বিচারপতি জুবায়ের রহমান চৌধুরী, বিচারপতি সৈয়দ মো. জিয়াউল করিম, বিচারপতি মো. রেজাউল হক, বিচারপতি এস. এম ইমদাদুল হক।

এ মামলায় আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল জব্বার ভূইয়া, আরশাদুর রউফ ও অনীক আর হক। রিটের পক্ষে ছিলেন মনজিল মোরসেদ। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল।

রায়ের পর্যবেক্ষণে প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদ বলেছেন, এই রিভিউ আবেদনে উত্থাপিত বিষয়বস্তুর মধ্যে একটি সাধারণ বিষয়ও রয়েছে। যার মধ্যে সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কর্তৃত্ব অব্যাহত রয়েছে। যেমন- প্রয়োজনে বিচারকদের আচরণবিধির মূল্যায়ন ও সংশোধন করা। ৯৬ অনুচ্ছেদের বর্তমানে পুর্নবহাল করা ধারা (৪) (ক) এর অধীনে বিবেচনা করা এই বিষয়টি সর্বাগ্রে একটি অপরিহার্য উপাদান। প্রকৃতপক্ষে, সংবিধানে বিচারিক আচরণের সাংবিধানিকতা, যা নিজেই একটি জীবন্ত দলিল এবং তা চিরস্থায়ী পুনঃউদ্ভাবনের অনুমতি দেয়।
‘এটাও ঠিক যে, সংবিধানের মূল চেতনা এবং সংবিধানের অক্ষর এই ধরনের বর্ণনার বাইরেও প্রাধান্য লাভ করে। অন্যথায়, সংবিধান নিজেই ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। এই প্রেক্ষাপটে বিবেচনা করলে আচরণবিধিকে শুধুমাত্র সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের অন্তর্নিহিত ক্ষমতার ওপর নির্ভর করে বৃদ্ধি এবং পরিবর্তনের অনুমতি দেওয়ার জন্য বিবেচনা করা উচিত— যা প্রয়োজনে বিদ্যমান বিধানগুলোও পুনর্বিবেচনা করতে পারে।’
প্রধান বিচারপতি আরও বলেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে পুনরুজ্জীবিত করা হলো। এই রিভিউ আবেদনটি উপরোক্ত পর্যবেক্ষণের সঙ্গে নিষ্পত্তি করা হয়েছে। তবে যেকোনও বিভ্রান্তি দূর করার জন্য এবং বিতর্কিত রায়ের কার্যকরী অংশের কার্যকারিতায় প্রয়োজনীয় অস্পষ্টতা এবং বিরোধ দূর করার জন্য, ৯৬ অনুচ্ছেদের ২-৮ ধারাগুলি সম্পূর্ণরূপে পুনর্বহাল করার ঘোষণা করা হলো।

প্রকাশিত রায়ের প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৭২ সালে প্রণীত মূল সংবিধানে উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কাছে ছিল। ১৯৭৫ সালের ২৪ জানুয়ারি সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে এ ক্ষমতা রাষ্ট্রপতির হাতে অর্পণ করা হয়। পরে জিয়াউর রহমানের শাসনামলে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা দেওয়া হয় সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাছে।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে সেটা বাতিল করে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে। বিলটি পাসের পর একই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশিত হয়।

এরপর ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর ষোড়শ সংশোধনীতে বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা ফিরিয়ে দেওয়া হয় সংসদকে। পরে সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে একই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের ৯ জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ৯ নভেম্বর এ সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থি ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট।

শুনানি শেষে ২০১৬ সালের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে ষোড়শ সংশোধনী বাতিল করে রায় দেন বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী, বিচারপতি কাজী রেজাউল হক ও বিচারপতি মো. আশরাফুল কামালের হাইকোর্টের বিশেষ বেঞ্চ।

ওই রায়ের মাধ্যমে জিয়াউর রহমানের সামরিক শাসনামলে প্রতিষ্ঠিত সুপ্রিম জুডিসিয়ালয়াল কাউন্সিল ফিরিয়ে আনে সুপ্রিম কোর্ট। সেই সঙ্গে বিচারকদের জন্য একটি আচরণবিধিও ঠিক করে দেওয়া হয়।

রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পাওয়ার পর ২০১৭ সালের ৪ জানুয়ারি এ বিষয়ে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। ওই আপিলের শুনানি শেষে ২০১৭ সালের ৩ জুলাই হাই কোর্টের রায় বহাল রেখে সর্বসম্মতিক্রমে চূড়ান্ত রায়টি দেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে সাত বিচারপতির পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।

একই বছরের ১ আগস্ট ৭৯৯ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশিত হয়। ২০১৭ সালের ২৪ ডিসেম্বর আপিল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষ ৯০৮ পৃষ্ঠার রিভিউ আবেদন করে।

গুরুত্বপূর্ণ মামলাটির শুনানিতে আপিল বিভাগ আদালতের বন্ধু (অ্যামিকাস কিউরি) হিসেবে ১০ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীর বক্তব্য শোনেন। তাদের মধ্যে কামাল হোসেনসহ ৯ জনই সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের পক্ষে অর্থাৎ ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের পক্ষে মত দেন।

কামাল হোসেনের সঙ্গে একই মত পোষণকারীরা হলেন- টি এইচ খান, এ এফ এম হাসান আরিফ, এম. আমীর উল ইসলাম, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম আই ফারুকী ও আব্দুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া। অপরদিকে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনের পক্ষে অবস্থান জানান শুধু আজমালুল হোসেন কিউসি।

আদালত মোট ১২ জন আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিলেও তাদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রফিক-উল হক ও শফিক আহমেদ মতামত দেননি।

তাদের বাইরে ‘ইন্টারভেনার’ হিসেবে সংবিধানের এই সংশোধনের পক্ষে যুক্তি দেখান সাবেক আইনমন্ত্রী ও সংসদ সদস্য আবদুল মতিন খসরু।

রিভিউ আবেদনের রায়ের পর্যবেক্ষণে জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলামও প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর আগে, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদে বিচারিক জবাবদিহি নিশ্চিত করার জন্য সুপ্রিম জুডিসিয়াল কাউন্সিলের কাঠামোর জন্য নির্দেশিকা প্রদান করা হয়েছিল। কোড ৩৮(ক) এবং (খ) এর মতো রায়ে অনুরূপ বিধি যুক্ত করা অপ্রয়োজনীয় বলে মনে হয় এবং বিভ্রান্তি তৈরি করতে পারে। যার ফলে নিয়মগুলো (আইন) কীভাবে বোঝা এবং প্রয়োগ করা হয়- তাতে দ্বন্দ্ব দেখা দিতে পারে। ফলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা প্রভাবিত হয় এবং এটি অবশ্যই সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদের ওপর একটি প্রভাব ফেলে।

তিনি বলেন, সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ এই ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষেত্রে একটি ভিত্তিপ্রস্তর হিসেবে কাজ করে- যাতে বিচার বিভাগ অযাচিত প্রভাবমুক্তভাবে কাজ করে এবং জবাবদিহি বজায় রাখে। তবে, এর বিধানগুলোকে প্রতিলিপি বা অগ্রাহ্য করে এমন কোনও অতিরিক্ত বিচারিক ঘোষণা অসাবধানতাবশত এর কর্তৃত্বকে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে এর ব্যাখ্যা এবং প্রয়োগে অস্পষ্টতা তৈরি হতে পারে।

বিচারপতি মো. সৈয়দ জিয়াউল করিম প্রধান বিচারপতির পর্যবেক্ষণের সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, আমার মতে, ষোড়শ সংশোধনী ছিল একটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আইন। এটি রাষ্ট্রের তিনটি অঙ্গ যথা- নির্বাহী বিভাগ, আইনসভা এবং বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতা পৃথকীকরণ এবং সংবিধানের দুটি মৌলিক কাঠামো, ৯৪(৪) এবং ১৪৭(২) দ্বারা নিশ্চিত বিচার বিভাগের স্বাধীনতা লঙ্ঘন করে। একইসঙ্গে এটি সংবিধানের ৭ (খ) অনুচ্ছেদ দ্বারাও আঘাতপ্রাপ্ত হয়।

সংবিধানের মৌলিক বিধানাবলি সংশোধন অযোগ্য সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ৭-খ তে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১৪২ অনুচ্ছেদে যা কিছুই থাকুক না কেন, সংবিধানের প্রস্তাবনা, প্রথম ভাগের সব অনুচ্ছেদ, দ্বিতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ, নবম-ক ভাগে বর্ণিত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সাপেক্ষে তৃতীয় ভাগের সব অনুচ্ছেদ এবং একাদশ ভাগের ১৫০ অনুচ্ছেদসহ সংবিধানের অন্যান্য মৌলিক কাঠামো সংক্রান্ত অনুচ্ছেদগুলোর বিধানাবলি সংযোজন, পরিবর্তন, প্রতিস্থাপন, রহিতকরণ কিংবা অন্য কোনও পন্থায় সংশোধনের অযোগ্য হবে।

প্রধান বিচারপতির সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি মো. রেজাউল হক। তবে রায়ের পর্যবেক্ষণে তিনি বলেন, যেকোনও চাকরিতে প্রত্যেকেরই পদত্যাগ করার সহজাত অধিকার রয়েছে। কাউকেই তার স্বাধীন ইচ্ছার বিরুদ্ধে চাকরি চালিয়ে যেতে বাধ্য করা যাবে না। অতএব, সংবিধানের ৯৬(৮) অনুচ্ছেদের অধীনে সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারকের পদত্যাগ সংক্রান্ত বিধান পুনরুজ্জীবিত করা, যেমনটি প্রধান বিচারপতি পর্যবেক্ষণসহ বলেছেন, এটি একটি প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।

‘ফলস্বরূপ, প্রধান বিচারপতির চূড়ান্ত পর্যবেক্ষণকে সমর্থন করে, এই পুনর্বিবেচনা আবেদনটি উপরোক্ত পর্যবেক্ষসহ সংবিধানের ৯৬ অনুচ্ছেদ সম্পূর্ণরূপে পুর্নবহাল করে নিষ্পত্তি করা হলো। একইসঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের বিজ্ঞ বিচারক কর্তৃক বেঞ্চের তৃতীয় বিচারক হিসেবে প্রদত্ত অবমাননাকর মন্তব্যগুলো এতদ্বারা বাতিল করা হলো।’
 

//এল//

প্রধান উপদেষ্টার ভাষণের পর সারজিসের পোস্ট

ঘোষিত সময়ে নির্বাচনে আপত্তি নেই: এনসিপি

চড়-কাণ্ডে জড়ালো নাম, মুখ খুললেন তামিম ইকবাল

ফিরোজায় কাটবে খালেদা জিয়ার ঈদ, দেশবাসীকে জানালেন শুভেচ্ছা

‘বন্দর বিদেশিদের দেওয়ার বিরোধিতাকারীদের প্রতিহত করুন’

হাটে নেই পর্যাপ্ত পশু, বেড়েছে ক্রেতার চাপ

লন্ডনে নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করলেন তারেক রহমান

করোনা নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জরুরি সতর্কবার্তা

এপ্রিলের প্রথমার্ধে নির্বাচন : প্রধান উপদেষ্টা

আগামী মাসেই ‘জুলাই সনদ’: প্রধান উপদেষ্টা

ঢাকায় বেড়েছে গোয়েন্দা নজরদারি

কুরবানির খুশির ঈদে পরিমিত খাওয়ায় থাকুক প্রশান্তি

বিশ্বজুড়ে আজ পালিত হচ্ছে ঈদ উল আযহা

ঢাকা ও বিভাগীয় শহরগুলোতে কখন কোথায় ঈদের জামাত

লক্ষ্মীপুরে ১১ গ্রামে ঈদুল আজহা উদযাপন