নৈনিতাল ম্যালরোডে দুর্গা প্রসেশন
নব জাগরণের যুগে জন্মানো মনীষীদের মধ্যে স্বামী বিবেকানন্দ ছিলেন তুলনারহিত। পুনা শহরে একবার দেখা হয়েছিল লোকমান্য তিলকের সঙ্গে তাঁর, সেই সাক্ষাৎকারকে স্মরণ করে পুনে শহরে আছে পাশাপাশি লোকমান্য তিলক ও স্বামী বিবেকানন্দের বিশাল কাটআউট যা দেখে গর্ব হয় যে কোনো বাঙালির। মুম্বাই -এ গেট ওয়ে অফ্ ইন্ডিয়ার কাছে আছে মারাঠি বীর শিবাজির মূর্তির পাশাপাশি স্বামী বিবেকানন্দের মূর্তি। এখান থেকেই চিকাগো মহাধর্ম সম্মেলনে জাহাজযাত্রা করেছিলেন স্বামীজি, সেই ঘটনার স্মরনে এই সম্মান। নৈনিতাল লেক এলাকা জুড়েও স্বামীজিকে স্মরণ মহা গৌরবে। লেকের এক কোনে মল্লিতালের দিকে আছে নয়নাদেবী বা নৈনি দেবীর মূর্তি ও মন্দির যিনি আসলে মা দুর্গা। এই মন্দিরে দু দুবার এসেছিলেন স্বামীজি আলমোড়া ও মায়াবতী যাওয়ার পথে। একবার এসেছিলেন ১৮৯০ সালে সঙ্গে স্বামী অখন্ডানন্দকে নিয়ে। দ্বিতীয়বার ১৯৯৮ সালে। সঙ্গে মার্গারেট মিস মার্গারেট নোবেল ( তখনো নিবেদিতা হননি) মিসেস ওলিবুল মিস যোসেফিন ম্যাকলাউড মিসেস প্যাটারসন। এইসময় দুজন নাচনি মেয়ে প্রথমে দেখা করেন পশ্চিমী ব্যক্তি বর্গের কাছে তাঁরা প্রত্যেকে নিরুৎসাহিত করেন মেয়ে দুটিকে। মন্দিরে স্বামীজি পৌঁছোলে তারা আবার দেখা করলে স্বামীজি তাদের কাজের নিন্দা তো করলেন না বরং আশীর্বাদ করে উৎসাহ দিলেন। এই ঘটনা উপস্থিত প্রত্যেকের মনে স্পর্শ করে ও শিহরণ জাগায়। স্বামীজির ছবি ও ঘটনার বিবরণকে সুন্দর ফ্লেক্সে সাঁটানো আছে মন্দিরের গায়ে এবং তাঁর আগমনকে প্রচার করা আছে লেকের বিভিন্ন স্থানে।
সকাল সকাল আমরা স্নানাদি সেরে তাল্লিতালে গিয়ে একটি ছোট গাড়ির সঙ্গে কথা বলি পরবর্তী পাঁচ দিনের জন্য। দেড় কিমি ম্যাল রোড ছেড়ে লেক লাগোয়া রোডে হাঁটতে হাঁটতে কফি খেয়ে আসি মল্লিতালে। ক্রেতার চেয়ে পসারীদের ভিড় বেশি। এতো বেড়ানো হয়, কি-ই বা কিনব? ওয়ালনাট কিনে খেলাম চোখ বুঁজে, কিনি একটি টুপি। মাঠ সহ মহল্লাটা বিরাট। খুব জমে সন্ধের আগে থেকে। আগেই আর এক দফা বোটিং হয়ে গেছে ভিন্ন জোনে। খুঁজে পাওয়া গেল একটি বাঙালি রেস্তোরাঁ। সময় লাগলো কিন্তু অনেকটা ন্যায্য দামে এবং গরম গরম খেলাম। 'কে কে' হোটেলে চা প্লেটের এক প্লেট চিকেন ৫৮০ টাকা, চা ৪০ টাকা রুম ভাড়া ৬৭৫০ টাকা দুরাত। দশমির দিন দুপুর থেকেই শুরু নৈনি মন্দির চত্বরে থেকে দুর্গা প্রতিমার বিসর্জন নিয়ে শোভাযাত্রা। অনেক সময় নিল শোভাযাত্রার আয়োজন কারণ এলাকার প্রত্যেক বালিকা স্কুল থেকে মেয়েরা সুন্দর সেজেগুজে যোগদান করে। ব্যান্ড পার্টিও ছিল অনেক। সব মিলিয়ে মনে রাখার মতেো দৃশ্য। কিন্তু হাতে সময় কম। ভাবছি রোপওয়ে চড়ব বা চিড়িয়াখানা দেখব। সব-ই ওপরে। শেযে চিড়িয়াখানায় গেলাম হাইঅলটিচুডে। এক এক ধাপ পেরচ্ছি আর দেখছি ফুল ফুটে আছে নানা রঙের। টিকিট ঘরের কাছে গিয়ে মা-মেয়ে বলে আর পারবে না উঠতে। অগড্যা একা উঠতে থাকি। টিকিট ১০০ টাকা হলেও সিনিয়র সিটিজেনের লাগেনা। এক এক ধাপে এক একরকম জন্তু জানোয়ার। বাংলার বাইরে 'বেঙ্গল' শব্দটা দেখলেই মন আনচান করে। তৃতীয় ধাপে গিয়ে দেখি দাপিয়ে বেড়াচ্ছে হৃষ্টপুষ্ট 'দি রয়েছে বেঙ্গল টাইগার'। এতই দাপাচ্ছে যে স্ন্যাপ নেওয়া গেল না। চেন্নাই এমনকি দার্জিলিং চিড়িয়াখানায়ও দেখেছি 'দি রয়্যাল বেঙ্গল টাইগার'। সব জায়গায় তাদের জন্য অনেকটা হায়গা বরাদ্দ আলিপুরের থেকে। । তাই থাকে স্থাস্থ্যবান। যেখানেই যাই বই কিনি যদি পাই। এখানেও কিনি। ওরা নেয় মোমবাতি। মোমবাতির কারখানা আছে নৈনিতালে। রাতে আর একবার দেখে নিই আলো দিয়ে সাজানো লেকের অপূর্ব দৃশ্য। বাঙালিরা যে পরিমানে উৎসাহী,রাতেও বোটিং করতেন য়দি না সময় বাঁধা থাকত বোটিং সময় সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৫টা। রাতে জানা গেল নির্ধারিত গাড়ি চলে গেছে রানিক্ষেত। পরদিন সকালে আবার গাড়ি ঠিক করে যাত্রা শুরু। যাওয়ার পথে পড়ে বাওয়ালি। অসামান্য হিমালয়ের দৃশ্য! কিন্তু নামা হয়নি। কৈঁচি মোড়ে গাড়ির ছাদে প্রাতরাশ। এরকম অন্য জায়গায়ও দেখেছি গাড়িকে অচল রেখে ছাদে খাওয়ার ব্যবস্থা, দোতলায় রান্নাবান্না। তোলা হল কিছু অনিন্দ্য সুন্দর দৃশ্য। পথে পড়ল এক বাবাজির মন্দির। খুব ভিড়। বাবাকে পুজো দিতে এসেছে এলাকার।মানুষ। প্রসাদ ছোলা। মন্দিরটি এন এইচ - ১১২ লগোয়া কোশীর এক উপনদীর ধারে। আরো কিছুদূর গিয়ে নদীর স্রোতে চলল জলকেলি। ফর্সা মিনারেল ওয়াটার কেউ কেউ ভরছে বোতলে। আরো এগিয়ে কোশী নদীর ব্রিজ পেরিয়ে রানিক্ষেত ঢোকার মুখে প্রাকৃতিক দৃশ্য দিয়ে ঘেরা একটি রেস্তোরাঁয় সারা হল মধ্যাহ্ন -ভোজ।
//এল//