
ফাইল ছবি
গোপালগঞ্জে একটি রাজনৈতিক সমাবেশকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সংঘর্ষ, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রকাশ্যে গুলি চালনার ঘটনায় পাঁচজন নাগরিক নিহত এবং বহু মানুষ আহত হওয়ার ঘটনায় হিউম্যান রাইটস ফোরাম বাংলাদেশ (এইচআরএফবি) গভীর উদ্বেগ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছে ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের । এ ধরনের ঘটনা নাগরিক নিরাপত্তা, সংবিধানপ্রদত্ত মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকারের ওপর সরাসরি আঘাত হানে।
গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ পৌর পার্কে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) এক রাজনৈতিক সমাবেশ শেষে স্থানীয় একটি রাজনৈতিক দলের একটি অংশ এই সমাবেশে হামলা চালায়। সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়লে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জনতার ওপর অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ ও প্রকাশ্যে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করে। এতে দীপ্ত সাহা (২৫), রমজান কাজী (১৮), সোহেল মোল্লা (৪১), ইমন (২৪) এবং পরবর্তীতে গতকাল ১৮ জুলাই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রমজান মুন্সী (২৮) নামের আরও এক নাগরিকের মৃত্যু হয়। আহত অনেকেই গুলিবিদ্ধ অবস্থায় বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন , যাদের কারও কারও অবস্থা সংকটাপন্ন।
এইচআরএফবি মনে করে, জনসমক্ষে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি মোকাবেলার সিদ্ধান্ত শুধু অমানবিক নয়, তা বাংলাদেশের সংবিধানের ৩১ অনুচ্ছেদের সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ডের সরাসরি লঙ্ঘন। এই ধরনের অতিমাত্রায় বলপ্রয়োগ কোন অজুহাতেই গ্রহণযোগ্য নয়, বরং এটি স্পষ্টতই রাষ্ট্রের জবাবদিহিতার অভাবের বহিঃপ্রকাশ বলেই বিবেচিত হয়ে থাকে।
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিও চিত্রে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বে থাকা বাহিনীর সদস্যরা জনতার দিকে গুলি ছুঁড়ছে। এ দিকে , পুলিশের মহা পরিদর্শক গনমাধ্যমে জানিয়েছেন , গোপালগঞ্জে পুলিশ কোন মরনাস্ত্র ব্যবহার করে নাই । অন্যদিকে,আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, তারা ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে’ হস্তক্ষেপ করেছে, এবং আত্ম রক্ষার্থে বল প্রয়োগে বাধ্য হয়েছে।‘ কিন্তু কোনো প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহারের বিষয়ে স্পষ্ট ব্যাখ্যা আই এস পি আর দেয়নি।
এইচআরএফবি মনে করে, সংঘর্ষ-পরবর্তী সময়ে যাদের আটক করা হয়েছে, তাদের যথাসময়ে আদালতে উপস্থাপন করতে হবে এবং অবশ্যই তাদের সঙ্গে ন্যায় ও আইন সঙ্গত আচরণ নিশ্চিত করতে হবে। বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে, যেন কোনো নিরপরাধ নাগরিক হয়রানির শিকার না হয়। একই সঙ্গে দীর্ঘস্থায়ী কারফিউ বা অনির্দিষ্টকাল গণপরিবহন ও চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জনজীবন স্তব্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্তও পুনর্বিবেচনা করা প্রয়োজন।
এইচআরএফবি দৃঢ়্ভাবে মনে করে ,এ ধরনের প্রতিটি মৃত্যু ও নির্যাতন অনাকাঙ্ক্ষিত এবং প্রচলিত আইনে এ সকল নির্যাতন ও মৃত্যুর বিচার হওয়ার দাবি রাখে । নিহত পরিবারের পক্ষ থেকে অন্তত একটি পরিবার গনমাধ্যমে এই মর্মে অভিযোগ করেছেন যে, পরিবারের পক্ষ থেকে মৃত দেহের ময়না তদন্ত করতে চাওয়ার পরেও হাসপাতাল ও পুলিশ প্রশাসনের কোন সহযোগিতা না পেয়ে লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই দফন করতে হয়েছে । পরিবারের উথাপিত অভিযোগ অত্যন্ত গুরুতর, একই সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কর্তব্যে গফলতি সহ প্রচলিত আইনি ব্যবস্থা লঙ্ঘনের নজিরবিহীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। নিহত পাঁচ নাগরিকের মৃত্যু সহ ঘটে যাওয়া সার্বিক পরিস্থিতিতে অবিলম্বে একটি বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করতে হবে। সেইসাথে রাজনৈতিক সমাবেশে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ব্যর্থতার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনায় নিয়ে এর অন্তর্নিহিত কারন উদ্ঘাটন করতে হবে। ।
দেশের স্থিতিশীলতা, শান্তি ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ রক্ষার স্বার্থে এইচ আর এফ বি সকল পক্ষকে সংযম ও দায়িত্বশীল ভূমিকা পালনের আহ্বান জানায়। এই ধরনের হামলা , বলপ্রয়োগ, গুলিচালনা ও প্রাণহানির ঘটনা গণতন্ত্র, মানবাধিকার এবং নাগরিক নিরাপত্তার ওপর গভীর আঘাত। এ ঘটনার পুর্নাঙ্গ নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু তদন্ত, দায়ীদের বিচার নিশ্চিত এবং ক্ষতিগ্রস্ত্রদের ক্ষতিপূরণ প্রদান করতে হবে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরণের ঘটনা না ঘটে সে ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।রা
এইচআরএফবি এর ২৩ বিশিষ্ট নাগরিক হলেন : ১। ড. হামিদা হোসেন, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি ৷ ২। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি
৩। রাজা দেবাশীষ রায়, এক্সপার্ট, এইচআরএফবি
৪। অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না, চেয়ারপারসন, আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক), সচিবালয় এবং ভারপ্রাপ্ত আহবায়ক, এইচআরএফবি
৫। শাহীন আনাম, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি, এবং নির্বাহী পরিচালক, মানুষের জন্য ফাউন্ডেশন
৬। জাকির হোসেন, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং প্রধান নির্বাহী, নাগরিক উদ্যোগ
৭। সারা হোসেন, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট)
৮। রঞ্জন কর্মকার, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, স্টেপস টুয়ার্ডস ডেভেলপমেন্ট (স্টেপস)
৯। সালেহ আহমেদ, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং নির্বাহী পরিচালক, বন্ধু সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সোসাইটি
১০। সঞ্জীব দ্রং, স্টিয়ারিং কমিটি সদস্য-এইচআরএফবি এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরাম
১১। ড. ইফতেখারুজ্জামান, নির্বাহী পরিচালক, ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি), সদস্য, এইচআরএফবি
১২। ডা. ফওজিয়া মোসলেম, সভানেত্রী, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ (বিএমপি), সদস্য, এইচআরএফবি
১৩। শামসুল হুদা, নির্বাহী পরিচালক, অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্মস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), সদস্য, এইচআরএফবি
১৪। খুশী কবির, সমন্বয়ক, নিজরা করি, সদস্য, এইচআরএফবি
১৫। সরদার জাহাঙ্গীর হোসেন, নির্বাহী পরিচালক, এসিড সারভাইভার্স ফাউন্ডেশন (এএসএফ), সদস্য, এইচআরএফবি
১৬। শিপন কুমার রবিদাস, সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ দলিত ও বঞ্চিত জনগোষ্ঠী অধিকার আন্দোলন (বিডিইআরএম) কেন্দ্রীয় কমিটি, সদস্য, এইচআরএফবি
১৭। সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ, নির্বাহী পরিচালক, বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ (বিলস), সদস্য, এইচআরএফবি
১৮। দেওয়ান জামান, নির্বাহী পরিচালক, ফেয়ার, সদস্য, এইচআরএফবি
১৯। পল্লব চাকমা, নির্বাহী পরিচালক, কাপেং ফাউন্ডেশন, সদস্য, এইচআরএফবি
২০। রোকেয়া রফিক বেবী, নির্বাহী পরিচালক, কর্মজীবনী নারী, সদস্য, এইচআরএফবি
২১। গীতা দাস, সভানেত্রী, নারীপক্ষ, সদস্য, এইচআরএফবি
২২। আবদুস সাত্তার দুলাল, সভাপতি, ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স অব ডিজাবল্ড পিপলস অর্গানাইজেশনস (ন্যাডপো), সদস্য, এইচআরএফবি
২৩। আশরাফুন্নাহার মিষ্টি, নির্বাহী পরিচালক, ওমেন উইথ ডিজাবিলিটিজ ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন, সদস্য, এইচআরএফবি
ইউ