ছবি: আহসান রাজীব বুলবুল
২০২৩ সাল শুরু হতে না হতেই আব্বা খুবই অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন। মাঝখানে কিছুদিনের জন্য সুস্থ হলেও তা আর বেশি দিন টিকেনি। মার্চের ১৩ তারিখে বাবার নিরবিচ্ছিন্ন স্নেহ ভালোবাসার বন্ধন চিরতরে হারালাম।শেষ সময়ে কাছ থেকে দেখতে না পারা আর পাশে না থাকার কষ্ট মায়ের ক্ষেত্রেও ও হয়েছে। প্রবাসীদের এই একটি কষ্ট সবার ক্ষেত্রেই সমান।
মনে পড়ে ছোট বেলায় রোজার ঈদে, জামা কাপড় কিনতে, আব্বা সাথে করে বাজারে নিয়ে যেতেন। রাজবাড়ী কাপড় বাজারে একটি লাল শার্ট খুবই পছন্দ হয়েছিল। শার্টটা ভালো মানাবে বলে আব্বাও আমার সাথে একমত হয়েছিলেন।দামদর সবকিছু ঠিক থাকলেও পরে আর শার্ট টি আর কেনা হয়নি। যতদূর মনে পড়ে ঐ একই রকম শার্ট খুঁজতে আরো দুই একটি দোকানে গিয়েছিলাম।
সেদিন পরিবারের অন্যান্য প্রয়োজনীয় জিনিস কিনে বাড়ি এসে আব্বাকে বললাম,আয়নায় শার্ট টা আমাকে অত ভালো লাগছিল না। মফস্বল সাংবাদিক বাবা আমার দিকে অনেকখন তাকিয়ে ছিলেন কিন্তু কি উত্তর দিবেন বুঝতে পারছিলেন না। শুধু দোয়া বা আশির্বাদের দূষ্টিশক্তি ছুঁড়ে দিয়েছিলেন। রোদ আসে গাছকে বাঁচাতে, মারতে না। যেমনি বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়ে কাঁদলে কান্না দেখা যায় না।
জামা কাপড় বা ফ্যাশান আমাকে কখনোই টানে না। যদিও এর জন্য আমাকে অনেক কথা শুনতে হয়। অফিসিয়াল ড্রেসে থাকলে মনে হয় কেউ বেঁধে রেখেছে। টাই স্যুট, প্যান্ট বরাবরই আমার কাছে কৃত্রিমতা মনে হয়।
আর বিশেষ করে কখনো শার্ট কিনতে গেলে ঐ লাল শার্টের কথা খুব মনে পড়ে। যদিও ঐ দিনের ঘটনা কেউ জানার আগে আমরা বাপ বেটা সুন্দর ভাবে সমাধান করেছিলাম।
কানাডার যে প্রতিষ্ঠানে চাকরি করি সেখানেও প্রায় বার বছর। প্রতিষ্ঠানটিতে এ বছর প্রথম সারির সেরা একজন হয়েছি। যার অনুপ্রেরণা ও পুরস্কার স্বরুপ আমেরিকার হাওয়াই স্টেটের কোনা সিটিতে সংবর্ধনা ও এক সপ্তাহের ফ্যামিলি টিপের সুব্যবস্থা।
আজ অনেক দিন পর ছাত্র জীবনের পুরস্কারের কথা মনে পড়ছে । ১৯৯৯ বা ২০০০ সালের দিকে। সে বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জহুরুল হক হলের খেলাধুলা এবং বার্ষিক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে অনেকগুলো পুরস্কার পেয়েছিলাম। এরমধ্যে ছিল কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতা, ১৬০০ মিটার দৌড়, যেমন খুশি তেমন সাজো। প্রত্যেকটি ক্যাটাগরিতে ছিল সাফল্য।
প্রশান্ত মহাসাগরের ৩৮ হাজার ফিট উপর দিয়ে উড়ে চলছে বিমান, গন্তব্য আমেরিকার হাওয়াই স্টেটের কোনা সিটি। পাইলট আর বিমান ঞু এর জরুরী ঘোষণায়, হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে গেল।"পরবর্তী এক ঘন্টা সিট বেল্ট না খোলার এবং সতর্কতার নির্দেশ" মহাসাগরের উপর এমতাবস্থায় মহান রাব্বুল আলামীনের সাহায্য চাওয়া ছাড়া কি আর করা? এরমধ্যে স্মৃতির জানালায় উঁকি দিচ্ছে কতশত কথা।
যাহোক ফিরে আসি মূল কথায়, হাওয়াই যাওয়ার প্রস্তুতির জন্য গত সপ্তাহে একদিন 'ডে অফ' নিয়েছিলাম । কেনাকাটার মূহুর্তে এক বন্ধু ফোন করেছিল তাঁর নিজের একটি কাজে,কথা প্রসঙ্গে বলল হাওয়াই যাচ্ছি,হাওয়াই শার্ট না কিনলে কেমনে হয়? ব্যস কথামত শুরু হয়ে গেল হাওয়াই শার্ট খোঁজা। পেয়েও গেলাম। কিন্তু ছোটবেলার ঐ লাল শার্টের স্মৃতি এখনো আমাকে নাড়া দেয়।
আসলে ছোট্ট বয়সে শিক্ষা অর্জন আর যৌবনের ধর্ম পালন খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। অফিসের কৃতিত্বের ঘোষণা টি পাওয়ার পর বেশ কিছুদিন আবেগ প্রবণ হয়েছিলাম। আব্বা আম্মা'র কথা খুব বেশি মনে পড়েছে। খবরটা শুনলে হয়তো তাঁরা অনেক বেশি খুশি হতেন। মহান রাব্বুল আলামীন তাদের ক্ষমা করে বেহেশত নসিব করুন।
কৃতজ্ঞতা মহান রাব্বুল আলামীনের কাছে। কৃতজ্ঞতা আমার প্রতিষ্ঠান টির কাছে। কৃতজ্ঞতা সহধর্মিনী লায়লা নুসরাত সেরনিয়াবাত ছেলে সিফাত রাজীব এর কাছে। যাদের ধৈর্য বরাবরই আমাকে সাফল্যের পথ দেখায়। পরিশেষে ক্ষণে ক্ষণে বিমানের বাম্পিংয়ে মনে পড়ছে--- "আমার বন্ধু দয়াময়, তোমারে দেখিবার মনে লয়।।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
//এল//