ঢাকা, বাংলাদেশ

শুক্রবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

English

মতামত

ভাষাসংগ্রামের ১৮৩৫ সালের অদেখা ইতিহাস! 

সোহেল সানি

প্রকাশিত: ১১:১১, ৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩

ভাষাসংগ্রামের ১৮৩৫ সালের অদেখা ইতিহাস! 

সাংবাদিক সোহেল সানি

"যে সকল দেশ ভাগ্যবান তাহারা চিরন্তন স্বদেশকে দেশের ইতিহাসের মধ্যেই খুঁজিয়া পায়, বালককালেই ইতিহাসই দেশের সহিত তাহাদের পরিচয় সাধন করাইয়া দেয়। আমাদের ঠিক তাহার উল্টা। দেশের ইতিহাসই আমাদের স্বদেশকে আচ্ছন্ন করিয়া রাখিয়াছে। মামুদের আক্রমণ হইতে লর্ড কার্জনের সাম্রাজ্যগর্বখোদগারকাল পর্যন্ত যে কিছু ইতিহাসকথা তাহা ভারতবর্ষের পক্ষে বিচিত্র কুহেলিকা, তাহা স্বদেশ সম্বন্ধে আমাদের দৃষ্টির সহায়তা করেনা, দৃষ্টি আবৃত করে মাত্র। তাহা এমন স্থানে কৃত্রিম আলোক ফেলে যাহাতে আমাদের দেশের দিকটাই আমাদের চোখে অন্ধকার হইয়া যায়।"

পরাধীন ভারতবর্ষে ইউরোপীয় এবং ইংরেজি শিক্ষিত ভারতীয়দের রচিত ইতিহাসের দিকে লক্ষ্য রেখে, অনেক দুঃখে কথাগুলো বলেছিলেন বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ। এদেশে কে কবে রাজা হল, কতদিন রাজত্ব করল, এর বেশি ইতিহাস-চেতনা কতদূরই বা অগ্রসর হতে পেরেছে! প্রকৃত ইতিহাসটাই যদি অন্ধকারে আবৃত থেকে গেল, তাহলে কী নিয়ে আমাদের শিক্ষা, আর কেনই বা গর্ব! অথচ আমরা জানি ইতিহাস চর্চার আসল উদ্দেশ্য শিক্ষা, যে শিক্ষা জাতিকে চালনা করে, তাকে নিয়ে যায় অগ্রগতির পথে। মিথ্যা ইতিহাসের কুহেলিকা অপসারণ করে, সত্য ইতিহাসের আলোকে স্বদেশকে উজ্জ্বল করে দেখানোই তো আমাদের ব্রত হওয়া উচিত। ইতিহাসের যথার্থ হৃদয়াঙ্গম ছাড়া স্বাধীনতার স্বাদ গ্রহণ যেমন অবাস্তব, সাধারণ মানুষের অনুকূলে শোষণমুক্ত স্বদেশ গড়ে তোলার পরবর্তী সংগ্রামও সঠিক পথে চালিত হওয়া অসম্ভব।

আমার লেখনীর প্রতিপাদ্য বিষয় আঠারো শতকের ভাষা সংগ্রাম নিয়ে হলেও সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া আমাদের স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীদের পাঠ্যক্রমে ভাষা আন্দোলন ও স্পর্শকাতর কতগুলো বিষয়ে যেসব তথ্য উপাত্ত উপস্থাপন করা হয়েছে, তা ভুলে ভরাই শুধু নয়, ইতিহাসেরই চরম অবমাননা। এ ইতিহাস বিকৃতি এমন একটি সময়ে যখন স্বাধীনতার সপক্ষই রাষ্ট্রক্ষমতায় সমাসীন। এ জন্য ব্যথাটাও তীব্র। 

২০২৩ সালে নতুন কারিকুলাম চালু হওয়ার পর জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের ইতিহাস বই নিয়ে তুমুল বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণীর পাঠ্য বইয়ে ৭১ পৃষ্ঠায় "ভাষা আন্দোলন" শিরোনামে আন্দোলনের বর্ণনায় কোথাও বঙ্গবন্ধুর অবদানের কথা নেই। বইয়ের তিন জায়গায় কোথাও বাঙালি, হ্রস্ব ইকার দিয়ে, কোথাও বাঙালী দীর্ঘ ঈ কার দিয়ে, আবার কোথাও লেখা হয়েছে বাঙালি। ষষ্ঠ শ্রেনীর ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান বইয়ে "ছেলেবেলার মুজিব" শিরোনামে ৭ পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুর বাবা লুৎফর রহমান ছিলেন সরকারী অফিসের কেরানী। একই পৃষ্ঠার দুই জায়গায় কেরানী কথাটা লেখা হয়েছে। অথচ তিনি ছিলেন আদালতের সেরেস্তাদার। এ ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর বাবার নামের সঙ্গে "শেখ" শব্দটিও উল্লেখ নেই। বাঙালী বানান একই বইয়ে একেকরকম প্রমাণ করে উদাসীনতা আমাদের কতটা চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যাকাণ্ডকে রাষ্ট্রের কাঁধে চড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। 

রাষ্ট্রীয়ভাবেই শুধু নয়, ইতিহাসের পাঠক্রমে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান একুশ বছর ধরে উপস্থাপিত হয়েছেন, সাবেক মরহুম শেখ মুজিবুর রহমান রূপে। কারাবন্দী ছাত্রলীগ প্রতিষ্ঠাতা শেখ মুজিবের গোপন চিরকুটের নির্দেশনায় গাজীউল হকের নেতৃত্বে ভাষা সংগ্রাম পরিষদের নেতারা ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে "একুশে ফেব্রুয়ারীর" অমরগাঁথা রচনা করেছেন - সালাম-রফিক-বরকত-জব্বার- শফিকের রক্তের আখরে। অথচ, নবম শ্রেণীর পাঠ্যক্রমে সেই ভাষা আন্দোলনের অধ্যায়ে শেখ মুজিবের নামটিই অনুপস্থিত। 

আমাদের মধ্যে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে বাঙালী জাতীয়তাবাদের যে জাগরণ সৃষ্টি হয়েছিল, তা ১৯৪৭ সালের দ্বিজাতিতত্ত্বের উগ্র সাম্প্রদায়িকতার কাছে চরম হেনস্তার শিকার হলেও মাত্র এক বছরের ব্যবধানে ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। নব্য পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা একমাত্র উর্দু -এর বিপরীতে। উর্দুর বিরুদ্ধে নয় বরং বিপরীতে। "রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই" মানে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা উর্দুর পাশাপাশি বাংলাও চাই। 

 চেতনার গভীরে দেশের মাটি ও মানুষের নিবিড় পরিচয় থেকেই বাঙালীদের মধ্যেও জন্ম নিয়েছিল স্বাদেশিকতা। পলাশীর প্রহসনের পর যখন ইংরেজরা যখন সিদ্ধান্ত নিল তারা শাসনও করবে শোষণও করবে তখন ভারতের দিকে দিকে বিদ্রোহ শুরু হয়। ফকির-সন্ন্যাসী -ওয়াহাবী-সাঁওতাল-সিপাহী অসংখ্য বিদ্রোহ সংগ্রামের ধারায় বাংলা তথা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন বিংশ শতাব্দীর প্রথমার্ধে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করছিল। যার মধ্যে বাংলা ভাষারও একটা সংগ্রাম রয়েছে। সেই ভাষা সংগ্রামের ইতিহাসকথার তথ্য উপাত্ত উপস্থাপনের আগে দাবি করবো অতীত সংগ্রাম এবং ভাষা ও সংস্কৃতির ঐতিহ্য চেতনা ছাড়া স্বাধীনতা অর্জন যেমন সম্ভব নয়, স্বাধীনতাকে সুসংহত করাও অসম্ভব।  
 
স্বাধীনতার প্রকৃত মূল্যবোধ ক্রম-অপসৃয়মান বলেই  সাম্প্রদায়িকতা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারছে। 

মাতৃভাষা বাংলার জন্য বাঙালির লড়াই-সংগ্রামের ইতিহাসটা যেখান থেকে শুরু বা শেষ বলা হচ্ছে, আসলে ঠিক নয়। যেমন কিছুটা  বিকৃত এবং  খণ্ডিত বটে? আমরা ভাষা সংগ্রামকে পাকিস্তানের আমল অর্থাৎ ১৯৪৮-১৯৫২ সালের গন্ডিতে সীমিতকরণ করে ফেলছি। বিদেশি মনীষীরা এ জন্যই আমাদের  বাঙালীকে বলে থাকেন আত্মবিস্মৃত জাতি। বাঙালিদের এই বদনাম আজও পরিপুষ্ট। ইতিহাসের আসল সত্য বা মিথ্যা থেকে আমরা বাঙালিরা বহুদূরে অবস্থান করছি। ইংরেজ আমলেও যে মাতৃভাষার জন্য লড়ার ইতিহাস রয়েছে, তা দেখা কতজনই বা পেয়েছি? অথচ, ওই অজানা অধ্যায়টাকে সন্নিবেশিত করা হলে আমাদের ভাষা আন্দোলন বা সংগ্রামের ইতিহাস আরও সমৃদ্ধ হতে পারে।

জাতিসংঘের ইউনেস্কো কর্তৃক বাংলাকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা হিসাবে মর্যাদাদানের পর বিশ্ববাসী জেনে গেছে, পৃথিবীতে একটি মাত্র দেশ আছে নাম তার বাংলাদেশ আর একটি মাত্র জাতি আছে - নাম তার বাঙালী, যে বাঙালীরা রক্ত দিয়ে  মাতৃভাষা বাংলার অধিকার অর্জন করেছিল। ১৯১৩ সালে সাহিত্যে নোবেল প্রাইজ অর্জন করে রবীন্দ্রনাথ বিশ্বের কাছে প্রথম  বাঙালীর শ্রেষ্ঠত্ব তুলে ধরেছিলেন আর স্বাধীন বাংলাদেশ এর স্থপতি বঙ্গবন্ধু জাতিসংঘে ভাষণ দিয়ে বিশ্ববাসীর কাছে বাংলা ভাষার  পরিচয় করে দিয়েছিলেন। ১৮৮৫ সালে সিপাহী বিদ্রোহের পর ইংরেজ কোম্পানি পুরনো ঢাকার "আন্টাঘর ময়দান"-এ মহারানী ভিক্টোরিয়ায় কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের সঙ্গেও গভীরভাবে জড়িয়ে আছে আমাদের বাংলা ভাষা।  সমস্ত ভারতবর্ষের ক্ষমতা নিজ হাতে গ্রহণ করতে যে "হস্তান্তর পত্র" রচিত হয়েছিল - তার ভাষা ছিল ইংরেজী ও বাংলা।

যে কারণে ইংরেজরাই আন্টাঘরের নামকরণ করেছিল "মহারানী ভিক্টোরিয়া পার্ক।"স্বাধীনতা পরবর্তীতে  দিল্লীর শেষ বাদশার নামে "বাহাদুর শাহ পার্ক" নামকরণ করা হয়। এরও আগে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর শাসনামলে ১৮৩৫ সালে মাতৃভাষা বাংলার সংগ্রামের সূত্রপাত ঘটে। কলকাতা হিন্দু কলেজের ছাত্র উদয় চাঁদ সর্বপ্রথম মাতৃভাষা বাংলাকে জাতীয় বা সরকারি ভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি জানান এক প্রবন্ধে। বিস্ময়কর যে, কলকাতা কলেজের শিক্ষক হয়েও হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিওর মতো একজন প্রগতিবাদী ইংরেজই বাঙালী ছাত্রদের মধ্যে দেশপ্রেম ও বিদ্রোহের চেতনা জাগিয়ে তুলেছিলেন। তার অনুগামীরাই বিখ্যাত ‘ইয়ং বেঙ্গল’ নামের সংগঠনটির আত্মপ্রকাশ ঘটিয়েছিল। উদয় চাঁদ যেমন বাংলা ভাষাকে শিক্ষা ও সরকারি কাজকর্মে বাহন হিসেবে নেওয়ার দাবি জানান, তেমনি একই সময়ে আরেক ছাত্র কৈলাসচন্দ্র দত্ত এক প্রবন্ধে স্বপ্ন দেখেছিলেন যে, শতবর্ষ পরে ভারতবর্ষে ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সশস্ত্র গণবিদ্রোহের মুখে পড়বে এবং বিতাড়িত হবে এবং একদিন বাংলা ভাষা তার সুমহান মর্যাদায় আসীন হবে। 

ডিরোজিও ইংরেজি ভাষায় এমন একটি দেশাত্মবোধক কবিতা রচনা করেছিলেন, যার চেতনা ছড়িয়ে দিতে সেটাকে বঙ্গানুবাদ করেছিলেন  দ্বিজেন্দ্রনাথ ঠাকুর। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বড়দাদা ছিলেন তিনি। ‘বেঙ্গল স্পেক্টেটর’ নামক একটি দ্বিভাষিক মুখপত্র প্রকাশের আগেই ‘ইয়ং বেঙ্গল’ গোষ্ঠী এদেশে প্রথম রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে ‘বেঙ্গল ব্রিটিশ ইন্ডিয়া সোসাইটি’। দেখাদেখি বোম্বাইয়ে এক স্কুলশিক্ষক ফার্দুনজি নৌরজি ইয়ং বোম্বে পার্টি এবং মাদ্রাজে গজালু লক্ষ্মীনারায়ণ বাসু চেট্টি মাদ্রাজ ইয়ং পার্টি নামে সংগঠন গড়ে তোলেন।

ভারতে শিক্ষা প্রবর্তনের জনক মেকলে নিজেই খোলামেলাভাবে স্বীকার করেন, ভারতে ইংরেজি ভাষার মাধ্যমে উচ্চশিক্ষার দরজা খোলার নেপথ্যে তাদের একটি মাত্র উদ্দেশ্য ছিল- পাশ্চাত্য সভ্যতার অন্ধ অনুরাগী এক শিক্ষিত ভারতীয় ভদ্রবেশী সমাজ গড়ে তোলা, যারা বিপুল দরিদ্র দেশবাসীর জীবন থেকে থাকবে বিচ্ছিন্ন এবং ইংরেজ শাসনের অনুগত।

রবীন্দ্রনাথের ভাষায়- ‘শহরবাসী একদল মানুষ সেই সুযোগে শিক্ষা পেলে, মান পেলে, অর্থ পেলে তারাই এনলাইটেন্টড আলোকিত। সেই আলোর পেছনে বাকি দেশটাতে লাগল পূর্ণগ্রহণ। স্কুলের বেঞ্চিতে বসে যাঁরা ইংরেজি পড়া মুখস্থ করলেন, শিক্ষাদীপ্ত দৃষ্টির অন্ধতায় তারা দেশ বলতে বুঝলেন শিক্ষিত সমাজকে। সেই দিন থেকে জলকষ্ট বলো, পথকষ্ট বলো, রোগ বলো, অজ্ঞানতা বলো, জমে উঠলো নিরানন্দ, নিরালোক, গ্রামে গ্রামে।’

ইংরেজ ভক্তির মোহ দ্রুত ছুটে গিয়ে দেশপ্রেমের প্রথম জাগরণ ধারালোভাবে প্রকাশ পেল মাইকেল মধুসূদন দত্তের কবিতায়- ‘হে বঙ্গ ভান্ডারে তব বিবিধ রতন/ তা সবে অবোধ আমি অবহেলা করি/ পরধন লোভে মত্ত করিনু ভ্রমণ’ বা ‘রেখো মা দাসেরে মনে, এ মিনতি করি পদে।’

১৮৪১ সালে ফোর্ট উইলিয়াম কলেজের প্রধান পণ্ডিত ইশ্বর চন্দ্র  বিদ্যাসাগর মাতৃভাষা বাংলাতে সর্বপ্রথম রচনা করেন ছোটদের পড়বার মতো বই- বর্ণপরিচয়, কথামালা, বোধোদয়, বেতালপঞ্চবিংশতি। বাংলাদেশের ছেলেমেয়েদের সামনে তিনিই খুলে দেন এক নতুন পৃথিবীর দরজা। পৃথিবীর সব ধর্মের ভেতরে একটি মৌলিক ঐক্য আছে- ১৮২৮ সালে ব্রাহ্মসমাজ জাতীয়তাবাদী চেতনার উন্মেষ ঘটানোর ক্ষেত্রে রাজা রামমোহন এক জীবন্ত ইতিহাস।

‘১৮৭৬ সালের ১২ সেপ্টেম্বর চূচুরায় বসে বঙ্কিমচন্দ্র রচনা করেন ‘বন্দেমাতরম’ গানটি। ১৮৯৬ সালে কলকাতা কংগ্রেস অধিবেশনে নিজে সুর দিয়ে গেয়েছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। জাতীয়তার ভাবোদ্দীপক ধ্বনি বন্দেমাতরম সর্বজন পরিচিতি লাভ করে। বহু স্বাধীনতা সংগ্রামী ওই ধ্বনি উচ্চারণ করে মারা যান হাসতে হাসতে। চরমপন্থী বাল গঙ্গাধর তিলকের নেতৃত্বে ভারতীয় কংগ্রেস  এটাকে জাতীয় সঙ্গীতরূপেও গ্রহণ করেছিল। কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর স্বাধীন  ভারত ১৯৪৭ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীন হলে নোবেল জয়ী বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জনগণমন’ গানটিকেই জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করেন। যে সঙ্গীতে বঙ্গদেশের কথাও উল্লেখ রয়েছে। তবে রবীন্দ্রনাথ যে বঙ্গকে বুকে ধারণ করতেন, সেই বঙ্গের অঙ্গচ্ছেদ ঘটানো হয় দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে ১৯৪৭ সালে।

১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গ হলে তার বিরুদ্ধে রবীন্দ্রনাথ ‘আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি’ গানটি রচনা করেন। তার ফলে স্বদেশি আন্দোলন তীব্রতর হয়ে ওঠে। রবীন্দ্রনাথ কলকাতায় ‘বঙ্গভবন’ নামে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপনও করেন। তখনও স্বাধীন বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার "বঙ্গভবন" হয়ে ওঠেনি। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ এর অভ্যুদয় হলে "গভর্নর হাউস" এর নামকরণ করা হয় "বঙ্গভবন।"

প্রসঙ্গত, ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস ১৯০৫ সালের বঙ্গভঙ্গকে ‘বঙ্গমাতার অঙ্গচ্ছেদ’ বলেছিল। আন্দোলনের মুখে ১৯১১ সালে ব্রিটিশ পার্লামেন্ট "বঙ্গভঙ্গ রদ আইন" পাশ করে দুই  বাংলাকে আবার এক করেছিল। আবার সেই কংগ্রেসই ১৯৪৭ সালে বাংলাকে দুই টুকরো করে। কংগ্রেস পশ্চিম বাংলাকে স্বাধীন ভারতের অংশ করে নেয় আর মুসলিম লীগ পূর্ব বাংলাকে স্বাধীন পাকিস্তানের অংশ করে নেয়। যখন ছিলেন না রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ভারত বিভক্তির  আগেই ১৯৪০ সালে মহাপ্রয়াণ ঘটে তাঁর। কায়েদে আজম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পাকিস্তানের ভাগে অন্তর্ভুক্ত হওয়া পূর্ববাংলার বাঙালিদের ওপর প্রথমেই আঘাত আসে মায়ের ভাষার ওপর। তারপর দীর্ঘ ২৩ বছরের সংগ্রাম শেষে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটায়।

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্বকবির "আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি" সুমধুর এই সঙ্গীতটিকেই স্বাধীন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীতরূপে গ্রহণ করেন। জাতীয় কবি নজরুল ইসলামের "চল চল চল" রণসঙ্গীত শুধু নয়, তাঁর কাছ থেকে পাওয়া "জয়বাংলা" শ্লোগানটিকে বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান এবং পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় শ্লোগান রূপে ব্যবহার করেন। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জয়বাংলা শ্লোগানটিও নিষিদ্ধ হয়ে যায়। দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদৌলতে গত বছর রাষ্ট্রীয় শ্লোগান রূপে আবারও ফিরে এসে জয়বাংলা। এক লাখ ৯৪ হাজার বর্গমাইলের বাংলা নেই। ৫৫ হাজার বর্গমাইলের বাংলাদেশই কেবল স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। বাকীটা ভারতে খন্ড বিখন্ড পরাধীন। যার মধ্যে রয়েছে পশ্চিম বাংলা। 

১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের বিজয়ে শেরেবাংলা পূর্ববাংলার মুখ্যমন্ত্রী হয়ে পশ্চিমবাংলার মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বলেছিলেন, "বাংলা এক এবং অভিন্ন সত্তা,ভাষা ও সংস্কৃতিতেও পরস্পর অবিচ্ছেদ্য অংশ। কোন মিথ্যার প্রাচীর তাকে বিচ্ছিন্ন করতে পারবে না।" মূহুর্তে পাকিস্তানের গর্ভনর জেনারেল গোলাম মোহাম্মদ ও  কেন্দ্রীয় প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী শেরেবাংলাকে দেশদ্রোহী ও দুশমন বলে কুখ্যাতি দিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে বরখাস্ত করেন। যাহোক বাংলার বিভক্তি না হলে বাঙালীর সাহিত্য, সংস্কৃতি তথা মাতৃভাষা বাংলা পৃথিবীর বুকে আরও দ্যুতি ছড়াতে পারো। 

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ইতিহাস গবেষক।
 

//জ//

বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা

টাঙ্গাইল শাড়িসহ ১৪টি জিআই পণ্যের সনদ বিতরণ

জিআই স্বীকৃতি পেল রাজশাহীর মিষ্টি পান

চুয়াডাঙ্গায় হিটস্ট্রোকে সার্জেন্টের মৃত্যু

দীর্ঘ তাপপ্রবাহে রেকর্ড, কতদিন থাকবে জানাল অধিদপ্তর

শিক্ষক নিয়োগে চুক্তি ১৪ লাখ টাকায়, ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেপ্তার

এই গরমে কাঁচা আম খেলে যেসব উপকার পাবেন

রোজ ৫০টি চড়-থাপ্পড়েই বাড়বে নারীদের সৌন্দর্য!

নুসরাত ফারিয়াকে নিয়ে মেলবোর্নের পথে জায়েদ খান

মিলারদের কারসাজিতে বাজারে সয়াবিন তেলের সংকট: ক্যাব

শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস: ঢাবি শিক্ষার্থীসহ গ্রেফতার ৫

চুয়েট বন্ধ ঘোষণা, শিক্ষার্থীদের হল ছাড়ার নির্দেশ

বগুড়ায় বোরো ধানের সোনালী রঙে কৃষকের হাসি

বঙ্গোপসাগরে কার্গো জাহাজ ডুবি

হাতিয়ায় সৈকতে দেখা মিলল ‘ইয়েলো বেলিড সি স্নেক’