অঙ্গদান করা সারা ইসলামের মৃত্যু নাই: বিএসএমএমইউ উপাচার্য
অকাল প্রয়াত দেশের প্রথম ব্রেন ডেথ রোগী সারা ইসলামের দান করা কর্নিয়া প্রাপ্ত দুই রোগী ভাল আছেন। তাঁরা সারা ইসলামের কর্নিয়ায় চোখের আলো ফিরে পেয়েছেন। আজ রোববার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মোঃ শারফুদ্দিন আহমেদ সারার কর্নিয়া গ্রহীতা দুই রোগীর চক্ষু পরীক্ষা করে এসব জানিয়েছেন।
সারা ইসলামের দুটি কর্নিয়া বসানো রোগী শিক্ষিকা ফেরদৌস আক্তার (৫৬)ও মোহাম্মদ সুজনের (২৩) চোখ পরীক্ষা করেন আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন চক্ষু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. মো.শারফুদ্দিন আহমেদ। এসময় উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশে চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী সারা ইসলামের মত্যু নাই। সারা ইসলামের অঙ্গদানের মাধ্যমে ২ জন কিডনী ফেলিউর রোগী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে। তাদের কিডনীর কার্যকারিতা শুরু হয়েছে। অন্য ২ জন রোগী যাদের চোখে সারা ইসলামের কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হয়েছে তারা দেখতে পাচ্ছেন।
উপাচার্য বলেন, এভাবে সারা ইসলাম অঙ্গদান করে চারজনের মাঝে বেঁচে আছেন। সারা ইসলামকে আমরা সব সময় কৃতজ্ঞার সাথে স্মরণে রাখবো। সারা ইসলাম যে দৃষ্টান্ত রেখে গেলেন তা আমরা সকলেই অনুসরণ করতে পারি। দেশে ক্যাডাভেরিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন করা গেলে রোগীদের বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা অনেকটাই কমে যাবে এবং অনেক অর্থের সাশ্রয় হবে। একই সাথে অনেক রোগী যারা জীবনের আশা ছেড়ে দিয়েছেন তারা নতুন জীবন লাভ করবেন। ভবিষ্যতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে হার্ট ট্রান্সপ্ল্যান্টও সফলভাবে সম্পন্ন হবে বলে আমি বিশ্বাস করি। মানুষের জীবন বাঁচাতে অঙ্গদান কার্যক্রমকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
এসময়ে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ডা. ছয়েফ উদ্দিন আহমদ, প্রক্টর ও রেনাল ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল, কমিউনিটি অফথালমোলজী বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান, ইউরোলজী বিভাগের সহযোগী ডা. মোঃ ফারুক হোসেন, চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ প্রমুখ।
অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ আরো বলেন, ১৯ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে সারা ইসলাম ব্রেন ডেথ হবার পরপরই তাঁর দুই কিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাডাভেরিক সেলের আহ্বায়ক ও রেনাল ট্রান্সপ্লান্টেশনের অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলালের নেতৃত্বে তার দুটি কিডনি বের করেন আনেন। একটি কিডনি অধ্যাপক ডা. মোঃ হাবিবুর রহমান দুলাল শামীমা আক্তার নামের এক রোগীর দেহে সফলতার সঙ্গে প্রতিস্থাপন করেন। সারা ইসলামের অপর কিডনিটি বিএসএমএমইউ’র ইউরোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. খুরশিদুল আলমের নেতৃত্বে হাসিনা আক্তার নামের অপর এক রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়। তারা ভাল আছেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে ফেরদৌসী আক্তারের চোখে অস্ত্রপচারের নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিটি অফথালমোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমান। ফেরদৌসী আখতার ২০১৬ সালে এক অজানা ভাইরাসে তাঁর ডান চোখে সমস্যা দেখা দেয়। কিছুই দেখতে পেতেন না। স্থানীয় বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি ক্লিনিকে চোখ দেখালেও সমাধান মেলেনি। পরে সহযোগী অধ্যাপক ডা. মোহাম্মদ শীষ রহমানের কাছে চিকিৎসা নিতে আসেন। সাত বছর আগে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দেন এ চিকিৎসক। তবে কর্নিয়া সংকটে এটি এতদিন করা সম্ভব হয়নি। কর্ণিয়া জোগাড় করতে অগ্রিম ৫০ হাজার টাকা দিয়েও রেখেছিলেন এ শিক্ষিকা। সারাহর কর্ণিয়া দানের সম্মতি পেয়েই চিকিৎসক শীষ রহমান। ফেরদৌসকে ফোন করে ঢাকায় আসতে বলেন। এরপর তাঁর ডান চোখে কর্ণিয়া প্রতিস্থাপন করা হয় । ডান চোখে এখন স্বাভাবিকভাবে দেখতে পাচ্ছেন।
মোহাম্মদ সুজনের চোখের অস্ত্রোপচারের নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের চক্ষু বিজ্ঞান বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. রাজশ্রী দাশ। মোহাম্মদ সুজন এখন ভাল আছেন। উল্লেখ্য চলতি মাসের ১৮ জানুয়ারি দিবাগত রাতে দেশে প্রথম ব্রেন ডেন রোগী ঘোষিত সারা ইসলাম কিডনি অন্য দুজন রোগীর দেহে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা হয়। এটি দেশের চিকিৎসাসেবায় মাইলফলক। দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২০ বছরের তরুণী ফাইন আর্টসের মেধাবী শিক্ষার্থী সারা ইসলাম তিনি তাঁর অঙ্গদান করে যান। তার অঙ্গদানের মাধ্যমে চারজন মানুষ নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছেন বলে জানালেন অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
//এল//