একটি হত্যা এবং রাত্রির ছায়াবাজি
প্রকৃতি ফাটানো চিতকারে রাতের
ঘর কেঁপে ওঠে। স্ত্রীর পাশে শুয়ে ধড়ফড় করে জেগে ওঠে লোকটা।
দুহাতে মশারী সরিয়ে, ধীরে মেঝেতে
নামে সে। উত্তপ্ত গলায় পানি ঢালে। সতর্ক কান খাড়া করে
দম আটকে শুনতে পায়, মর্মান্তিক বাইরের গোঙ্গানীর শব্দ।
লোকটা অনুভব করে কেউ যেন সিরিঞ্জ
দিয়ে দেহের কেউ মধ্যে বরফ ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
নিজেকে বিন্যস্ত করে কাঁপতে কাঁপতে সে
জানালার কাছে যায়। ধীর হাতে জানালার পাল্লা খুলে কিছু পরে
পাথর বনে যায়। তার দেহের চেতনা লোপ পেলে নিথর চোখে
দেখে, ল্যাম্পপোস্টের নিচে ভয়ংকর পাঁচটি যুবক একটা ছেলেকে কোপাচ্ছে।
কতা ক,চুতমারানির পুত। অহন জবান বন্ধ ক্যান?
যুবকদের রোষ থামে না,
এখন বুঝছস? যার আল্লাহ নাই, তারে কেউ বাঁচায় না?
আরও কর বিজ্ঞান বিজ্ঞান? দ্যাখ আইসা বাঁচায় কীনা?
ছেলেটা অস্ফুটে বলে,এই তোমাদের শান্তি?
যুককেরা ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে,আবার হেই কতা?ওই
চাপাতির ধার নাই? ওরে আরও টুকরা কর,,।
ছায়া আঁধারে ছেলেটাকে চাপাতি দিয়ে
কোপাতে কোপাতে তারা পাশের চিপা নর্দমার মধ্যে ঢুকাতে থাকে।
এর বহু আগেই ছেলেটার আহত কত নিভে যায়।
ফিনকি দেয়া রক্তে রাতের রাস্তা ভেজা।
চারপাশে আরও কিছু জানালার পাল্লা কাঁপছে।
লোকটার পেছনে মশারির নিচে ঘুমন্ত স্ত্রী, ভীতু লোকটা
কথায় কথায় টিটকারি দেয়,কত স্বপ্ন আছিল,
একটা মরদরে বিয়া করমু,জানতাম,
যদি হালায় বিলাইয়েরও অধম,,
পুরো রাত্রির নিস্তব্ধতা কন্ঠে চেপে বসলে
সে হাসফাস করে জানালার ওপারে চোখ পাতে,
খাড়া ল্যম্পপোস্টের ঝিমন্ত আলোয় পুরো রাত্রি
রহস্যময়। কাঁপতে কাপতে পাল্লা লাগিয়ে মেঝেতে বসে পড়ে।
তরে শালা ডেরেনের লগে মিশায়া দিমু,
কথা কসনা ক্যান মাংগীর পুত?
ব্লগ লেখনের সময় তো দুনিয়ার কথা বাইর অয়,,
সবাই প্রেতের মতো হাসতে থাকে।
লোকটার মনে হয়,তার হাড়গোড় কেউ
কুচি কুচি করে ড্রেনের মধ্যে ঢুকিয়ে দিচ্ছে।
একজন টুসকি দিয়ে সিগেরেটের শেষ পাছা শূন্যতার দিকে উড়িয়ে বলে,
এক মায়ের এক পোলা না?
দে,ওর মা,রে একটা ফোন দে।
লোকটার আক্ষরিক অর্থেই দেয়ালে পিঠ ঠেকে।
চোখের সামনে নানারকম বুদবুদ উড়ছে।
এরা মানুষ? ছেলেটা এদের কারও পান্তায় ঘি
ঢালেনি,কোন ক্ষতি করেনি,,এরপরও নিজেদের
ক্ষোভ মেটাতে একটা খুন এই পর্যায়ে যায়?
জ্বরজ্বর বোধে লোকটা অনুভব করে দশটা
হাত দশদিক থেকে সাপের মতো প্যাচিয়ে প্যাচিয়ে
সমস্ত অস্তিত্বর নিশ্বাস বের করতে চাইছে যেন।
সামনেই আবছা আয়নায় আবছা প্রতিভাত হচ্ছে,
এরা ধীরে ধীরে মাথা থেকে মানুষের মুখোশ
খুলে ফেলছে। এরা কে? পিশাচ?
ছেলেটার ভয়াবহ মৃত্যু চোখের সামনে পাক
খেলে লোকটার মধ্যে অদ্ভুত এক ক্রোধ ভর করে,
ঘরে তখনও ঝিমরাত্রি।
সে নিজেকে ছিটকে নিয়ে ছুটতে থাকে। মাথার ওপর
থেকে বিচ্ছুরিত সকালের রোদ তার মুখ গনগনে করে।
স্ত্রীর তাচ্ছিল্য আজ তাকে যাতনায় ডুবিয়ে দেয়,,
বিড়বিড় করে, মরতে তো একদিন হবেই, তারচেয়ে
সম্মান নিয়ে বাঁচি।
ভেতরে ভয় তান্ডবে রূপ নেয়।
লোকটার অস্তিত্ব, তার অনুভব, ক্ষোভ একাকার হয়ে,
জনারণ্যে দাঁড়িয়ে বলে, আমি সব দেখেছি,
আমি এই হত্যার সাক্ষী।