
ছবি সংগৃহীত
পাকিস্তান ও সৌদি আরব নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা বিষয়ে পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়াতে একটি ‘যৌথ কৌশলগত প্রতিরক্ষা চুক্তি’ স্বাক্ষর করেছে। রিয়াদে সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ বুধবার সন্ধ্যায় এটি স্বাক্ষর করেন। চুক্তি অনুযায়ী, “কোনো একটি দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসনকে উভয় দেশের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে।” দুই দেশই এ চুক্তি ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করেছে।
মূল বিষয় এবং ঘোষণা
-
কোথায় স্বাক্ষর: রিয়াদ (আল ইয়ামামা প্রাসাদ)
-
স্বাক্ষরকারী: সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান ও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ
-
চুক্তির মূল ধারা: এক দেশের বিরুদ্ধে যেকোনো আগ্রাসনকে উভয়ের বিরুদ্ধে আগ্রাসন হিসেবে গণ্য করা হবে; প্রতিরক্ষা সহযোগিতা ও যৌথ প্রতিরক্ষার ব্যবস্থা শক্তিশালী করা হবে।
-
উদ্দেশ্য: দুই দেশের প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বৃদ্ধি, অঞ্চল ও বিশ্বজুড়ে শান্তি প্রতিষ্ঠায় যৌথ অঙ্গীকার।
প্রেক্ষাপট ও ব্যাখ্যা
-
চুক্তি এমন সময়ে হয়েছে যখন কাতারের দোহায় ইসরায়েলি হামলার পর মধ্যপ্রাচ্যে নিরাপত্তা উদ্বেগ বাড়েছে।
-
দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের সামরিক সহযোগিতার ইতিহাস রয়েছে — ২০১৫ সালে সৌদি নেতৃত্বের সন্ত্রাসবিরোধী জোট ও তৎকালীন বিশেষ বাহিনীর নেতৃত্বে পাকিস্তানি জেনারেল (অব.) রাহিল শরিফের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।
প্রতিক্রিয়া ও প্রশ্নবোধ
-
ভারত: ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গণতান্ত্রিক ও আঞ্চলিক স্থিতিশীলতার ওপর সম্ভাব্য প্রভাব মূল্যায়ন করছে বলে একটি প্রতিক্রিয়া এসেছে।
-
পাকিস্তানি ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা: চুক্তির ঘোষণার পরে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও সংবাদমাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে— কেউ এটিকে ‘গেম চেঞ্জিং’ বললে, কেউ বলছেন এটি পশ্চিমাদের স্থিতি পরিবর্তন করতে পারে।
-
পারমাণবিক সুরক্ষার ধোঁয়াশা: চুক্তি-ঘোষণায় পারমাণবিক সুরক্ষা সংক্রান্ত সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি। পারমাণবিক অস্ত্র বিষয়ক বিশ্লেষকরা মনে করেন, এটি যদি আনুষ্ঠানিকভাবে পাকিস্তানের পক্ষ থেকে সৌদিকে পারমাণবিক সুরক্ষা বা শ্রেণিবদ্ধ নিশ্চয়তা বোঝায়—তার সম্ভাবনা কম; তবুও চুক্তির অস্পষ্টতা সৌদি আরবের উদ্দেশ্য পূরণ করতে পারে।
-
জিজ্ঞাসা ও উদ্বেগ: প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক জালমে খলিলজাদসহ কিছু বিশ্লেষক প্রশ্ন তুলেছেন—চুক্তি কি কোনো গোপন শর্ত রাখে? এটা কি কেবল আরব সুরক্ষা সংকটের প্রতিক্রিয়া, নাকি পারমাণবিক সম্পর্কিত পুরনো গুজবগুলোর আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি? এসব প্রশ্নে এখনও স্পষ্টতা নেই।
বিশ্লেষণ: অর্থ ও প্রভাব
-
চুক্তি যদি কার্যকরভাবে বাস্তবায়িত হয়, তা ইসলামাবাদের প্রতিরক্ষা জালকে শক্তিশালী করবে এবং সৌদির নিরাপত্তা ধারা পাল্টে দিতে পারে।
-
মধ্যপ্রাচ্যে ও উপসাগরীয় অঞ্চলে নিরাপত্তা স্থিতিশীলতার ওপর এর সাংঘাতিক সমীকরণ থাকতে পারে—বিশেষত ভারত, ইরান ও অন্যান্য প্রতিবেশী দেশগুলোর প্রতিক্রিয়া বিবেচনায় নেওয়া জরুরি।
-
পারমাণবিক স্থিতিশীলতার দিক থেকে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার অভাবে বিশ্বজুড়ে উদ্বেগ ও অনুমান বৃদ্ধি পেতে পারে, যা কূটনৈতিকভাবে অতিরিক্ত চাপ তৈরি করতে পারে।
শেষ কথা
চুক্তিটি দুই দেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল নিরাপত্তা মানচিত্রে একটি বড় পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হলেও, পারমাণবিক সুরক্ষা সংক্রান্ত পরিষ্কার ব্যাখ্যার অভাবে বহুমুখী প্রশ্ন ও উদ্বেগ রয়ে গেছে। চুক্তির বিস্তারিত শর্তাবলী প্রকাশ না হলে অঞ্চলীয় ও বৈশ্বিক প্রতিক্রিয়ার প্রকৃত পরিধি বোঝা কঠিন হবে।
ইউ