ঢাকা, বাংলাদেশ

শনিবার, , ১৯ জুলাই ২০২৫

English

বিদেশ

ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত

উইমেনআই২৪ ডেস্কঃ

প্রকাশিত: ১৩:২৫, ১৯ জুলাই ২০২৫

ভারতীয় নার্সের মৃত্যুদণ্ড স্থগিত

সংগৃহীত ছবি

ইয়েমেনের এক নাগরিককে হত্যার দায়ে নিমিশা প্রিয়া নামে এক ভারতীয় নার্সকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেওয়া হয়েছিল। বুধবার এই রায় কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আপাতত তার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করেছে ইয়েমেন কর্তৃপক্ষ। ইয়েমেনি নাগরিক তালাল আব্দো মাহদি নামে এক ব্যক্তিকে হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হন নিমিশা প্রিয়া। তালাল আব্দো মাহদির ভাই বিবিসিকে বলেছেন যে, মৃত্যুদণ্ড ছাড়া অন্য কোনো শাস্তিই তারা মানতে রাজি নন।

বিবিসি অ্যারাবিককে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে খুন হওয়া মাহদির ভাই আব্দেলফাতাহ্ মাহদি বলেন, মীমাংসার ব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুব স্পষ্ট। আল্লাহর তৈরি আইন ‌‘কিসাস’-ই কার্যকর করতে হবে, অন্য কোনো কিছু নয়।


আব্দেলফাতাহ্ মাহদি বিবিসি অ্যারাবিককে ওই সাক্ষাৎকার দেওয়ার পরেই অবশ্য নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা আপাতত স্থগিত করেছে ইয়েমেনের কর্তৃপক্ষ। এর আগে ক্ষতিপূরণ হিসাবে নিমিশা প্রিয়ার আত্মীয়স্বজন ও সমর্থকরা মাহদির পরিবারকে ‘ব্লাড মানি’ দিতে এক মিলিয়ন বা ১০ লাখ মার্কিন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ সংগ্রহ করেন এবং পরিবারকে সেটা ‘অফার’ও করা হয়েছে।

কিন্তু মৃতের পরিবার কোনো সমঝোতাতেই রাজি নয় বলে স্পষ্ট করেছে এবং তারা ক্ষমা না করলে নিমিশা প্রিয়ার কোনোভাবে বাঁচা সম্ভব নয়।


মৃত তালাল আব্দো মাহদি ভারতীয় নার্স নিমিশা প্রিয়ার ব্যবসায়িক অংশীদার ছিলেন। ২০১৭ সালে তালাল আব্দো মাহদির টুকরো টুকরো করা মরদেহ একটি পানির ট্যাংক থেকে উদ্ধার করা হয়। এরপরই তাকে হত্যার অভিযোগে নিমিশা প্রিয়াকে গ্রেফতার হতে হয় এবং সে দেশের আদালত তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়।

ভারতীয় গণমাধ্যমে যা বলা হচ্ছে
বিবিসি অ্যারাবিককে আব্দেলফাতাহ্ মাহদি বলেছেন যে তারা পরিবার ‘শুধু যে একটি নারকীয় অপরাধের শিকার হয়েছে তা নয়, দীর্ঘ এবং ক্লান্তিকর আইনি প্রক্রিয়ার মধ্যে দিয়েও পরিবারকে যেতে হয়েছে। এটা তো একটা ভয়াবহ এবং জঘন্য অথচ সুস্পষ্ট অপরাধের ঘটনা।’

তার কথায়, ভারতীয় গণমাধ্যমে সত্যের অপলাপ ঘটানোর প্রচেষ্টা চলছে দেখে আমরা ব্যথিত। সাজাপ্রাপ্ত একজনকে পরিস্থিতির শিকার বলে তুলে ধরা হচ্ছে যাতে ওই অপরাধকে ন্যায্যতা দেওয়া যায়। আমরা স্পষ্টভাবে বলছি যে, এখানে জনমত প্রভাবিত করার চেষ্টা হচ্ছে।

একটা বিবাদ – যে কারণেই হয়ে থাক, যত বড়ই হোক সেই বিতর্ক, তা কোনোভাবেই একটা হত্যাকে ন্যায্যতা দিতে পারে না। এর ওপরে এই ঘটনায় তো দেহটিকে টুকরো করে, বিকৃত করে লুকিয়ে ফেলা হয়েছিল বলে জানান মাহদি।

বিবিসি আরবিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার পর মাহদি নিজের ফেসবুকে এ নিয়ে একটি বিস্তারিত পোস্ট করেছেন বলে জানিয়েছে আরবি ভাষার সংবাদ পোর্টাল আল-কুদ্স। তার আগেই অবশ্য ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল যে, নিমিশা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড আপাতত স্থগিত করছে তারা।

ওই পোর্টালের প্রতিবেদন অনুযায়ী মাহদি তার পোস্টে লিখেছেন, মৃত্যদণ্ড পিছিয়ে যাওয়ায় আমরা হতাশ। আমরা এটা আশা করিনি। আদালত তো জানে যে আমরা কোনো ধরনের সমঝোতা করতে রাজি নই।


তিনি বলেন, যতক্ষণ না মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হচ্ছে ততক্ষণ আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাব। কোনোরকম চাপের কাছে আমরা নতি স্বীকার করব না। রক্ত নিয়ে ব্যবসা করা যায় না। ন্যায়বিচার পেতে যতই সময় লাগুক আমরা কোনো সমঝোতা করব না।

আল কুদ্স জানিয়েছে, মাহদি তার ফেসবুক পোস্টে ভারতীয় গণমাধ্যম নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ওই পোস্টে তিনি লিখেছেন, ভারতীয় সংবাদ মাধ্যমে লেখা হচ্ছে যে তালাল নাকি নিমিশার পাসপোর্ট আটকে রেখেছিল আর তার ওপরে শোষণ চালিয়েছে। এর মধ্যে বিন্দুমাত্রও সত্যতা নেই। নিমিশা কোনো আদালতের শুনানিতে এরকম দাবি জানায়নি, তার আইনি পরামর্শদাতারাও এরকম কিছু বলেননি। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে তথ্য বিকৃত করছে দেখে আমাদের খারাপ লাগে।

মধ্যস্থতা এবং আলোচনা নিয়ে মাহদি লিখেছেন, মধ্যস্থতা আর আলোচনায় কোনো নতুন কিছু নেই। অনেক বছর ধরেই এই ঘটনায় মধ্যস্থতার প্রবল প্রচেষ্টা চলছে। আমাদের অবস্থানে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমাদের দাবি খুব স্পষ্ট। অপরাধীকে সাজা পেতেই হবে। এছাড়া আমরা আর কোনো কিছুই চাই না।


ভারত সরকারের অবস্থান
ভারতের সরকার বারবার বলে থাকে যে নিমিশা প্রিয়ার ঘটনায় তারা ইয়েমেনের সরকারের সঙ্গে যেমন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রেখে চলেছে, তেমনই ওই নার্সের পরিবারের পাশেও তারা সবসময় রয়েছে।

ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদের প্রশাসন ছাড়াও ভারত এই বিষয়ে সৌদি আরব, ইরান এবং ইয়েমেনের আরও কয়েকটি প্রতিবেশী রাষ্ট্রের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে, যাতে তাদের মাধ্যমে হুথি বিদ্রোহীদের প্রশাসনের ওপরে কিছুটা প্রভাব বিস্তার করা যায়।

ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সওয়াল তার সাপ্তাহিক ব্রিফিংয়ে বৃহস্পতিবার বলেন, এটা খুবই সংবেদনশীল বিষয় এবং ভারত সরকার যথাসম্ভব সহায়তা করছে। আমরা পরিবারটিকে (নিমিশা প্রিয়ার) আইনি সহায়তা দিয়েছি, একজন আইনজীবী নিয়োগ করেছি। নিয়মিত কূটনৈতিক সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়েছে এবং বিষয়টি সমাধানের জন্য স্থানীয় প্রশাসন এবং পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন প্রিয়ার পরিবার যাতে হাতে আরও কিছুটা সময় পায়, সে ব্যাপারে সম্প্রতি প্রচেষ্টা চালিয়েছিল সরকার। তবে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কিছু সংবাদমাধ্যম লিখছে যে ইয়েমেনে ভারতের কূটনৈতিক অবস্থান খুব একটা জোরালো নয়, যে কারণে এই বিষয়টি সমাধান করতে বেগ পেতে হচ্ছে।

কিসাস কী?
কিসাস একটি আরবি শব্দ। এর অর্থ প্রতিশোধ বা বদলা নেওয়া। ইসলামি আইন অনুযায়ী, শারীরিক আঘাত সংক্রান্ত অপরাধের শাস্তি দেওয়ার পদ্ধতিই কিসাস। নারী ও পুরুষ – উভয়ের ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতি ব্যবহৃত হয়। সহজ কথায়, কিসাস হলো প্রাণের বদলে প্রাণ, চোখের বদলে চোখ নেওয়া। অর্থাৎ একজনকে যতটা আঘাত করা হয়েছে, অপরাধীকেও ঠিক ততটাই আঘাত পেতে হবে।

আইনজীবী মুফতি ওসামা নদভি বিবিসি হিন্দিকে জানিয়েছেন, কিসাস হলো ন্যায়বিচারের ইসলামি নীতি। ইচ্ছাকৃত হত্যা বা আঘাত করার সমপরিমাণ শাস্তি দেওয়াই ন্যায়বিচার। তিনি বলেন, কিসাস শব্দটা আরবি, যার আক্ষরিক অর্থ হলো ধাওয়া করা বা পিছু নেওয়া। কুরআনে একাধিকবার কিসাস-এর উল্লেখ রয়েছে।


আবার কিসাস অনুযায়ী ক্ষমা করাও সঙ্গত, কিন্তু একমাত্র পীড়িত পরিবার চাইলেই তা সম্ভব। নদভি বলেন, যদি কেউ চোখ উপড়িয়ে নেয়, তাহলে কিসাস হলো অপরাধীরও চোখ উপড়িয়ে নেওয়া হবে। যে যেরকম অপরাধ করেছে, তার সাজা হবে ঠিক সেই একই। এই নীতি অনুযায়ী নারী ও পুরুষদের একই শাস্তির বিধান আছে।

তবে নারীদের ক্ষেত্রে মানবিক কিছু ছাড়ও দেওয়া হয়। যেমন কোনো নারী যদি হত্যা করে থাকেন এবং তিনি যদি নিজের সন্তানকে স্তন্যপান করানোর পর্যায়ে থাকেন, তাহলে সেই শিশু কিছুটা বড় হয়ে যাওয়া পর্যন্ত ওই নারীর শাস্তি স্থগিত রাখা হবে।

তার কথায়, এটা কোনো একটি দেশের আইন নয়, এটা কুরআনের আইন। তবে এই আইন কার্যকর করতে গেলে কোনো দেশকে ইসলাম ও শরিয়া অনুযায়ী চলতে হবে। শরিয়া আইন চালু না থাকলে সাজার এই পদ্ধতি বলবৎ করা যায় না বলে ব্যাখ্যা করেন নদভির।

নিমিশা প্রিয়ার পুরো ঘটনাটি কী?
দক্ষিণ ভারতের রাজ্য কেরালা থেকে নিমিশা প্রিয়া ২০০৮ সালে রাজধানী সানার একটি সরকারি হাসপাতালে নার্সের চাকরি নিয়ে ইয়েমেনে পাড়ি দিয়েছিলেন। কিন্তু ২০১৭ সালে তালাল আব্দো মাহদির লাশ উদ্ধার হওয়ার পর তাকে গ্রেফতার হতে হয়।

এখন ৩৪ বছর বয়সী নিমিশা প্রিয়া ইয়েমেনের রাজধানী সানার সেন্ট্রাল জেলে বন্দি রয়েছেন। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে, সিডেটিভ বা ঘুমের ওষুধের ওভারডোজ দিয়ে তিনি তালাল আব্দো মাহদিকে হত্যা করেছেন এবং পরে তার দেহটিকে টুকরো টুকরো করে পানির ট্যাংকে ফেলে দিয়েছেন।

নিমিশা প্রিয়া অবশ্য এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। আদালতে তার আইনজীবী দাবি করেন, মাহদি নিমিশা প্রিয়ার ওপর শারীরিক নির্যাতন চালাতেন, তার সব টাকাপয়সা ছিনিয়ে নিয়েছিলেন, পাসপোর্ট পর্যন্ত আটকে রেখেছিলেন – এমনকি বন্দুক দিয়েও প্রিয়াকে ভয় দেখাতেন।

শুনানিতে তিনি আরও বলেন, নিমিশা প্রিয়ার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল মাহদিকে অচেতন করে তার কাছ থেকে নিজের পাসপোর্ট উদ্ধার করা – কিন্তু ভুলবশত সিডেটিভের ডোজ বেশি হয়ে গিয়েছিল।

কিন্তু ২০২০ সালে ইয়েমেনের একটি স্থানীয় আদালত ভারতীয় ওই নার্সকে দোষী সাব্যস্ত করে তাকে মৃত্যুদণ্ডের সাজা দেয়। নিমিশা প্রিয়ার পরিবার এই রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সে দেশের সুপ্রিম কোর্টের শরণাপন্ন হয়, কিন্তু ২০২৩ সালে শীর্ষ আদালতও তাদের সেই আপিল খারিজ করে দেয়।

ইয়েমেনের রাজধানী সানার নিয়ন্ত্রণ এখন হুথি বিদ্রোহীদের হাতে। হুথিদের সুপ্রিম পলিটিক্যাল কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট মাহদি আল-মাশাত চলতি বছরের জানুয়ারির গোড়ার দিকে এই মৃত্যুদণ্ডের আদেশে তার অনুমোদন দেন।

নিমিশার দরিদ্র মা কেরালায় গৃহপরিচারিকার কাজ করে সংসার চালাতেন, মেয়ের জীবন বাঁচানোর চেষ্টায় তিনি গত বেশ কয়েক বছর ধরে ইয়েমেনেই মাটি কামড়ে পড়ে আছেন।

নিহত তালাল আব্দো মাহদির পরিবারের সঙ্গে কথাবার্তা বলা ও আলাপ-আলোচনার জন্য ইয়েমেনের একজন সমাজকর্মী স্যামুয়েল জেরোমকে তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন।

ইন্টারন্যাশনাল অ্যাকশন কাউন্সিল’ নামে একটি লবি গ্রুপও গড়ে তোলা হয়েছে, ভারতে ও ভারতের বাইরে থেকে নানা দেশ থেকে তারা ক্রাউডফান্ডিং-এর মাধ্যমে অর্থও সংগ্রহ করছেন।


সূত্র: বিবিসি বাংলা

//এল//

খুলনায় হোটেল থেকে ৫ ব্যক্তির মরদেহ উদ্ধার

জামায়াত আমিরকে দেখতে হাসপাতালে বিএনপি মহাসচিব

লাইনচ্যুত পাহাড়িকা এক্সপ্রেস, চট্টগ্রাম রুটে ট্রেন চলাচল বন্ধ

তাবলিগ জামাতে গিয়ে যুবকের মৃত্যু

গোপালগঞ্জে প্রাণহানির ঘটনা: এইচআরএফবি এর ২৩ বিশিষ্ট নাগরিকের বিভাগীয় তদন্তের দাবি

ডিজিটাল অধিকার ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে জনসহযোগিতা চাইলেন উপদেষ্টা মাহফুজ

নাসীরুদ্দীনের বক্তব্যে ক্ষুব্ধ বিএনপি, এনসিপির সভা পণ্ড

জামায়াতের সমাবেশে দাওয়াত পায়নি বিএনপি

দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশের রূপরেখা দিলেন জামায়াত আমির

মঞ্চে অসুস্থ হয়ে পড়ে গেলেন জামায়াত আমির

গোপালগঞ্জে হতাহতের ঘটনায় সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি

জাতিসংঘ মানবাধিকার মিশন চালু: সরকারের ব্যাখ্যা

নতুন কোনো গডফাদারবাদের উত্থান ঘটতে দেব না: নাহিদ

বিলম্ব না করে দ্রুত নির্বাচনের আহ্বান ফখরুলের