ফাইল ছবি
নারী নির্যাতন রুখতে পশ্চিমবঙ্গে নতুন বিল পেশ করতে যাচ্ছে রাজ্যটির সরকার। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসককে ধর্ষণ ও খুনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে নতুন আইন তৈরির উদ্যোগ নিয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিধান সভায় ‘অপরাজিতা নারী ও শিশু বিল (পশ্চিমবঙ্গ ফৌজদারি আইন সংশোধনী বিল ২০২৪) পেশ করতে যাচ্ছে তৃণমূল সরকার।
প্রশাসনের সূত্র জানিয়েছে, ভারতীয় ন্যায় সংহিতা ও ভারতীয় নাগরিক সুরক্ষা সংহিতা, যৌন নির্যাতন, ধর্ষণ ও গণধর্ষণ সংক্রান্ত যে আইন রয়েছে বাংলার ক্ষেত্রে তার কিছু সংশোধন আনা হচ্ছে। নারী ও শিশুদের নিরাপত্তা ও চটজলদি বিচারের জন্য শুধুমাত্র বাংলার ক্ষেত্রে কয়েকটি ধারা/বিধি যোগ করা হচ্ছে।
জামিন অযোগ্য ধারায় যেগুলো যুক্ত হতে পারে তা হলো-
ধর্ষণে শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও জরিমানা অথবা মৃত্যুদণ্ড।
গণধর্ষণের ক্ষেত্রে জরিমানা ও আমৃত্যু কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড।
ধর্ষণের অভিযোগের পাশাপাশি ধর্ষণকারীর দ্বারা আঘাতের কারণে মৃত্যু হলে অভিযুক্তের মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা।
কোমায় চলে গেলে মৃত্যুদণ্ড ও জরিমানা।
সূত্রটি জানায়, নতুন বিলে নারী, শিশুদের সুরক্ষায় তৈরি হবে ‘অপরাজিতা টাস্ক ফোর্স’। জেলায় জেলায় এই টাস্ক ফোর্স কাজ করবে। এর নেতৃত্বে থাকবেন ডিএসপি পদমর্যাদার কর্মকর্তারা। নারী কর্মকর্তাদের এক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে। নির্যাতনের শিকার ব্যক্তির পরিচয় প্রকাশ করলে তিন থেকে পাঁচ বছরের জেল ও জরিমানার বিধান থাকবে নতুন বিলে। তবে এই মামলা জামিনযোগ্য।
বিধান সভায় উঠতে যাওয়া এই বিল নিয়ে বিজেপির পরিষদীয় দলেরও আলোচনায় অংশ নেওয়ার কথা রয়েছে। ‘অপরাজিতা’ বিলটি বিধানসভায় পাশ হয়ে যাওয়ার পর, সেটি আইনে পরিণত করতে রাজ্যপালের কাছে পাঠানো হবে বলে জানা গেছে।
এদিকে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের জনপ্রতিনিধি ও নেতাদের সংযত থাকার নির্দেশ দেওয়ার পর চিকিৎসক ও নারীদের নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছেন দলটির কয়েকজন। ঘটনায় চরম অস্বস্তিতে পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্ব।
১ সেপ্টেম্বর (রবিবার) সোনারপুর দক্ষিণের তারকা বিধায়ক লাভলি মৈত্র দলের কর্মসূচিতে যোগ দিয়ে বলেন, ডাক্তাররা কী মানুষ! তারা কসাইয়ে পরিণত হচ্ছেন।
ওই দিন অশোকনগর পৌরসভার প্রাক্তন কাউন্সিলার অতীশ সরকার বলেন, যারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি তৈরি করে ব্যক্তি আক্রমণ করবে, তাদের পরিবারের নারীদের ছবি বিকৃত করে দরজার সামনে ঝুলিয়ে দেওয়া হবে। যা খোলা যাবেনা।
একই দিন কোন্নগর শহর ও নবগ্রাম মহিলা তৃণমূলের উদ্যোগে ধর্নামঞ্চে যোগ দেন বিধায়ক কাঞ্চন মল্লিক। সেখানে ধর্ষকদের ফাঁসি দাবি করার পরক্ষণেই আন্দোলনকারী চিকিৎসকদের কর্মবিরতি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। বলেন, অনেক সরকারি কর্মচারী কর্মবিরতিতে রয়েছেন। তারা সরকারের থেকে বেতন নিচ্ছেন তো নাকি? বোনাস নেবেন তো, না সেটা প্রত্যাহার করবেন?
এই তিন মন্তব্যে নিন্দার ঝড় ওঠে পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে। সোশ্যাল থেকে টিভি নিউজের টকশো প্রতিবাদে মুখর হলে সোমবার রাতে দলের কর্মীদের মন্তব্য করা নিয়ে কড়া সিদ্ধান্ত নেন মমতার ভাতিজা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়।
তৃণমূলের সর্ব ভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক গণরোষ কমাতে পার্টির নেতা-কর্মীদের বিনয়ী হওয়ার বার্তা দিয়েছেন।
পিসি মমতার সংযত হওয়া আর ভাতিজা অভিষেকের বিনয়ী হওয়ার নির্দেশে বিভ্রান্ত বিরক্ত তৃণমূলের একাংশ। যা নিয়ে টিপ্পনী-ট্রল চলছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
এর আগে ২৮ আগস্ট মেয়ো রোডে তৃণমূল ছাত্র পরিষদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিতীতে ধর্ষণ রুখতে কঠোর আইনের পক্ষ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন মমতা। তিনি বলেছিলেন, ধর্ষকের একমাত্র শাস্তি ফাঁসি। আর কিছু নয়।
সেই মঞ্চ থেকেই তিনি জানিয়েছিলেন, রাজ্য বিধানসভায় ধর্ষকের ফাঁসি নিশ্চিত করতে বিল নিয়ে আসবে রাজ্য।
আর তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও জানিয়েছিলেন, সংসদে ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রাইভেট মেম্বার বিল আনবেন।
ইউ