ছবি: শওগাত আলী সাগর...
১.‘সাহায্য নয়, কবি হেলাল হাফিজ যাতে তাঁর বাকীটা জীবন যত্নে এবং আনন্দে থাকতে পারেন, সে রকম একটি থাকার জায়গার সন্ধান দিন’-এই আহ্বান জানিয়ে ফেসবুকে একটি পোষ্ট দিয়েছেন সাংবাদিক মুন্নী সাহা। প্রেম এবং দ্রোহের কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে তাঁর গুণমুগ্ধদের অনেকেই উদ্বিগ্ন হচ্ছেন। সবার উদ্বেগের জায়গাই হচ্ছে কবি যেনো তাঁর বাকিটা জীবন ‘যত্নে এবং আনন্দে’ থাকতে পারেন।
২. জীবনের একটি পর্যায়ে এসে ‘যত্ন এবং আনন্দের’ সংজ্ঞা, প্রকৃতি বদলে যায়। কবি হেলাল হাফিজ একাকী মানুষ বলে তাঁর জন্য এই সংজ্ঞা ভিন্ন হয়ে যায় না। মূলত: আমি আপনি আমরা যখন তাঁর আজকের বয়সে পৌঁছুবো – তখন আমাদের জন্যও এটি সত্য হয়ে উঠবে।
৩. হেলাল হাফিজ জনপ্রিয় কবি, তাঁর গুণমুগ্ধ ভক্তের সংখ্যা প্রচুর, ফলে তাঁর বিষয়টা আলোচনায় এসেছে। সমাজে অসংখ্য হেলাল, হাফিজরা এমন পরিস্থিতিতে আছেন। সেগুলো আমরা হয়তো জানতেই পারি না।
৪. একটা সময় ছিলো যখন পরিবারের সবাইকে আয় রোজগারের পেছনে দৌঁড়াতে হতো না। তখন ঘরেই প্রিয়জনদের দেখভাল করার ব্যবস্থা ছিলো। এখনকার বাস্তবতা ভিন্ন। এখন বাচ্চাদের জন্যও ডে কেয়ার/চাইল্ড কেয়ারের প্রবর্তন হয়েছে।
৫. পশ্চিমের দেশগুলোয় যে সিনিয়র হোমস/ নার্সিং হোম, কেয়ার হোমের প্রচলন ঘটেছে, সেটি কিন্তু বয়োজেষ্ঠ্যদের বাকিটা জীবন ‘যত্নে এবং আনন্দে’ কাটানোর ব্যবস্থার তাগিদ থেকেই। স্বাতন্ত্র্যবোধে বেড়ে উঠা নাগরিকরা কারো মুখাপেক্ষি হতে চান না বলে, বুড়ো বয়সে নিঃসঙ্গ হতে চান না বলে তারা আগ থেকেই এইসব কেয়ার হোম, সিনিয়র হোমে নিজের জন্য জায়গা ঠিক করে নেন। অনেককে অবশ্য অন্য বাস্তবতায়ও সিনিয়র হোমস এ যেতে হয়। বাংলাদেশে এই ধরনের ব্যবস্থা থাকলে কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে মুন্নী সাহা এবং কবির অন্যান্য ভক্তদের উদ্বিগ্ন হতে হতো না।
৬. বাংলাদেশে যদিও সিনিয়র হোম, কেয়ার হোম নিয়ে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব আছে। কিন্তু যারা পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তারাই কেবল জানেন বাস্তবতা কতো কঠোর। দেশের বয়োজ্যেষ্ঠ নাগরিকদের শেষ জীবন সম্মানের সাথে ‘যত্নে এবং আনন্দে’ কাটানোর ব্যবস্থা নিশ্চিত করা নিয়ে রাষ্ট্রকে অবশ্যই ভাবতে হবে। কবি হেলাল হাফিজকে নিয়ে উৎকণ্ঠা যেনো সেই বার্তাটিকেই প্রবলভাবে সামনে নিয়ে এসেছে।
......শওগাত আলী সাগরের ফেসবুক পোস্ট থেকে সংগৃহীত....
ইউ