শাহীন মোলহেম: রাজধানীর দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের রিভারভিউ প্রকল্পে মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্র, ওয়েসিস বাংলাদেশ পুলিশের একটি সমাজ কল্যাণমূলক উদ্যোগ। এখানে গত ৮ মাসে ৫০ জন রোগী সুস্থ হয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছেন বলে জানালেন, প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত পরিচালক গোলাম মোর্শেদ।
গোলাম মোর্শেদ বলেন, ‘সম্পূর্ণ অলাভজনক এ প্রতিষ্ঠানটি পরিচালিত হচ্ছে পুলিশ কল্যাণ ট্রাস্টের অধীনে।’ তিনি বলেন, ‘দেশের অত্যাধুনিক মাদক নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্র এটি।সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত অত্যন্ত নান্দনিক,উন্নত ব্যবস্থাপনায় চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় এখানে।’
পরিচালক বলেন, ‘পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বিপিএম বার এর প্রচেষ্টায় প্রকল্পটির বাস্তবায়ন করেছেন, ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমান বিপিএম (বার) পিপিএম(বার) ও একদল চৌকস দক্ষ কর্মীবাহিনী। এখানে মাদকাসক্তদের উন্নত বিশ্বের অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিৎসাসেবায় স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ওয়েসিস কাজ করছে। মুলত প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ পুলিশের দায়বদ্ধতা থেকেই ওয়েসিস প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যা পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে ইতিমধ্যে সাফল্যের মুখ দেখেছে। এখানে বিনামুল্যে কাউন্সিলিং করা হচ্ছে। স্বনামধন্য টেকনিশিয়ান ও বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সমন্বয়ে গড়ে উঠেছে কেন্দ্রটি। তুলনামূলক কম খরচে বিশ্বমানের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।’ মাদকাসক্তদের উন্নত চিকিৎসার জন্য আর বিদেশে যাওয়ার প্রয়োজন নেই বলে জানান তিনি।
তিনি জানান, ৬০ শয্যার হাসপাতালটিতে রয়েছে ২২টি কক্ষের মধ্যে পুরুষদের জন্য ১৬টি কক্ষে ৪৬টি বেড। মহিলাদের জন্য ৬ কক্ষে ১৪টি বেড। ডাবল কেবিনে ২৮টি, ট্রিপল কেবিনে ১৫টি এবং জেনারেল ওয়ার্ডে আছে ১১টি বেড। এছাড়া জেনারেল ট্রিপল বেড আছে ছয়টি। জেনারেল ওয়ার্ড ছাড়া সব ওয়ার্ড বা কক্ষ শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত। এখানে রয়েছে ২৪ ঘণ্টা মেডিসিন সেবাসহ বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা প্রদান করা হয় বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের মাধ্যমে যার নম্বর ০১৯৩০৪০৪০৪০।
তিনি আরো জানান, এখানে প্রতি ফ্লোরের সিঁড়িতে আছে বিশেষ লকের ব্যবস্থা। কোনো রোগী ইচ্ছা করলেই এক ফ্লোর থেকে অন্য ফ্লোরে অবাধে চলাচল করতে পারবে না। কেন্দ্রটির ভবনের ছাদে রয়েছে বাগান। ছাদবাগানে প্রাকৃতিক পরিবেশে খোলা আকাশের নিচে রোগীরা বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ইয়োগা ও মেডিটেশন করেন। এখানে ছাদবাগানের পাশে রয়েছে ব্যায়ামাগার। ষষ্ঠ তলায় আছে নার্সিং স্টেশন। পঞ্চম তলায় বিশেষ কেবিন ও ইনডোর গেমসের ব্যবস্থা। সেখানে আছে টেবিল টেনিসসহ নানা ধরনের খেলার সরঞ্জামাদি। আছে লাইব্রেরি। চতুর্থ তলায় রয়েছে ফায়ার ফাইটিং ব্যবস্থা, সাধারণ ওয়ার্ড এবং সাধারণ কেবিন। ভবনের তৃতীয় তলায় আছে কেবিন ব্লক, ডাইনিং ও বিশেষ নার্সিং স্টেশন। দ্বিতীয় তলা প্রশাসনিক ব্লক। রয়েছে প্যাথলজি বিভাগও। আছে সাইকোলজি কাউন্সিলিং ও ফ্যামিলি কাউন্সিলিং এবং স্যাম্পল কালেকশন রুম। ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও পুনর্বাসন কেন্দ্রে জনবল ৮৫ জন। এর মধ্যে এসপি পদমর্যাদার একজন পরিচালক, একজন অতিরিক্ত পরিচালক, ডাক্তার, নার্স সহ আরো জনবল রয়েছে। অত্যাধুনিক কেরানীগঞ্জের প্রতিষ্ঠানটি আধুনিক পুলিশের আইকন খ্যাত ঢাকা রেঞ্জের ডিআইজি হাবিবুর রহমানের সার্বিক তত্তাবধানে বাস্তবায়ন করা হয়েছে। প্রকল্পটি শুরুর আগে তিনি বিভিন্ন মাদক নিরাময় কেন্দ্র ঘুরে দেখেছেন।
পরিচালক বলেন, ‘ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দ্রে দেশের খ্যাতনামা চিকিৎসক, মনোরোগ চিকিৎসক, সাইকোলজিস্ট,সাইকোথেরাপিস্ট, ইয়োগো এক্সপার্ট এবং অভিজ্ঘ অ্যাডিকশন কাউন্সেলরগণের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দেওয়া হয় । নারী রোগীদের জন্য রয়েছে বিশেষ আয়োজন: বিশেষজ্ঞ নারী চিকিৎসক ও প্রশিক্ষিত নার্স এবং স্বতন্ত্র চিকিৎসা ফ্লোর রয়েছে। রয়েছে পৃথক ব্যায়ম ও বিনোদনের সু-ব্যবস্থা।’ সম্পন্ন ব্যক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষা করে চিকিৎসা সেবা দিয়ে আসছে ওয়েসিস মাদকাসক্তি নিরাময় ও মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শ কেন্দট্রি বলে জানালেন তিনি।
উইমেনআই২৪//ইউ//১৪-০৫-২০২২//১:৩৪ পিএম//