শাহীন মোলহেম: রাজধানীর শেরে বাংলা কিডনী ইনিস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক নেফ্রোলজীস্ট ডা. বাবরুল আলম বলেন, সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর দিক নির্দেশনায় এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রীর উদ্দ্যোগে একনেক মিটিংয়ে প্রতিটি জেলায় ১০ বেড এবং মেডিকেল কলেজে ৫০ বেড বিশিষ্ট ডায়ালাইসিস ইউনিট প্রকল্প পাশ হয়েছে।
সরকারে এই উদ্দ্যোগেকে বাস্তবায়নে সহযোগিতা করতে বাংলাদেশ রেনাল এসোসিয়েশন বদ্ধ পরিকর বলে জানিয়েছেন তিনি। অন্যান্য দেশের ন্যয় বাংলাদেশেও কিডনি রোগের ভয়াবহতা উল্লেখযোগ্য। দেশে প্রায় ১৬ কোটি মানুষের জন্য ১৮৩ জন কিডনী বিশেষজ্ঞ রয়েছে। ২৫ জন ট্রান্সপ্ল্যান্ট সার্জন, ডায়ালাইসিস নার্স ৩০০ জন। প্রত্যেক বিশেষজ্ঞকে সেই হিসাবে প্রতিদিন ৭০০-৮০০ জন রোগী দেখতে হচ্ছে।
এছাড়া পৃথিবীতে বর্তমানে ৮৫০ মিলিয়ন মানুষ বিভিন্ন ধরনের কিডনী রোগে ভুগছে। প্রতিবছর ২.৪ মিলিয়ন মানুষ দীর্ঘ মেয়াদী কিডনী রোগ এবং ১.৭ মিলিয়ন মানুষ আকস্মিক কিডনী রোগে মৃত্যু বরন করে। ডা. বাবরুল আলম বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় দুই কোটি মানুষ কোন না কোন কিডনী রোগে ভুগছে। দেশে প্রতি বছর প্রায় ৫০ হাজার রোগী দীর্ঘ মেয়াদী কিডনী রোগে আক্রান্ত হচ্ছে যারা এক সময় সম্পূর্ণ কিডনী বিকল পর্যায়ে উপনীত হয়। তখন ডায়ালাইসিস বা কিডনী সংযোজন ব্যতীত বাঁচার কোন উপায় থাকেনা। কিন্তু এ দুটো পদ্ধতিই অত্যন্ত ব্যয় বহুল হওয়াতে শত করা প্রায় ৮০ জন রোগী কিছু দিনের মধ্যে মৃত্যু বরণ করে।
তিনি আরো বলেন, আমাদের দেশে প্রতি বছর ২৫হাজার রোগীর ডায়রিয়া, বমি, অতিরিক্ত রক্ত ক্ষরণ, প্রসবকালীন জটিলতা, ম্যালেরিয়া, ও বিভিন্ন ঔষধের পার্শ্ব প্রতিক্রিয়ায় হঠাৎ করে কিডনী অকেজো হয়ে যায়। এদের সঠিক চিকিৎসা দিতে পারলে শতকরা ৭০ ভাগ ক্ষেত্রে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসা সম্ভব। পানি শুন্যতার জন্য যথা সময়ে স্যালাইন দিতে হবে, রক্ত ক্ষরণ হলে অতি দ্রুত রক্ত দিতে হবে, ইনফেকশন হলে যথাযথ চিকিৎসা নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ঔষধ সেবন করতে হবে।
ইন্টারন্যাশনাল সোসাইটি অব নেফ্রোলজী আগামী ২০২৫ সালের মধ্যে আকস্মিক কিডনী বিকলের কারণে মৃত্যুর হার শুণ্যের কোঠায় নামিয়ে আনারকার্যক্রম শুরু করেছে। কারণ এই আকস্মিক কিডনী রোগ শুরুতেই প্রতিরোধ করানা গেলে ভবিষ্যতে তা ক্রনিক কিডনী ডিজিজে রূপান্তরীত হবে। ধীর গতিতে কিডনী অকেজো হওয়ার (ক্রনিক কিডনী ডিজিজ) প্রধান কারণ গুলো হচ্ছে ডায়াবেটিস, নেফ্রাইটিস ও উচ্চ রক্তচাপ, এদের মধ্যে প্রতি বছর প্রায় ৩০হাজার রোগীর কিডনী প্রায় একেবারেই অকেজো হয়ে যাচ্ছে।
এসব রোগীদের বাঁচিয়ে রাখতে হলে ডায়ালাইসিস ও কিডনী সংযোজন (ট্রান্সপ্ল্যান্ট) করা প্রয়োজন অথচ ডায়ালাইসিস ও ট্রান্সপ্ল্যান্ট উভয়ই ব্যয় বহুল চিকিৎসা। একজন রোগীর ডায়ালাইসিস করতে প্রতিবছর ২-৩ লাখ এবং ট্রান্সপ্ল্যান্ট পরবর্তী প্রতি বছর ১-১,৫০,হাজার/ টাকা প্রয়োজন হয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের শতকরা ৯৫ ভাগ রোগীর এই ব্যয়ভার বহন করা সম্ভব নয়, ফলে সঠিক চিকিৎসার অভাবে ধীরে ধীরে মৃত্যুর দিকে ধাবিত হচ্ছে।
বাংলাদেশে প্রায় ১২-১৫ হাজার লোক ডায়ালাইসিস ও ১হাজার জন লোক কিডনী সংযোজন করে বেঁচে আছে। প্রতি বছর বিভিন্ন ট্রান্সপ্ল্যান্ট সেন্টারে ১০০ এর অধিক রোগীর কিডনী সংযোজন করা হয়।
বঙ্গবন্ধু শেখমুজিব মেডিক্যাল বিশ্ব বিদ্যালয়ে ১৯৮২ সালে সর্ব প্রথম ও ১৯৮৮ সাল থেকে নিয়মিত ট্রান্সপ্ল্যান্ট কার্যক্রম চলছে। এ পর্যন্ত এখানে প্রায় ৬৫০ রোগীর কিডনী সংযোজন করা হয়েছে। প্রতি সপ্তাহের শনিবার একটি করে কিডনী সংযোজন করা হয়। এই হাসপাতালে খুব কম খরচে প্রায় ১ লক্ষ ৭০ হাজার টাকা ব্যয়ে কিডনী সংযোজন করা হয়। এই হাসপাতাল ছাড়াও ন্যাশনাল ইন্সিটিটিউট অব কিডনী ডিজিজেস এন্ড ইউরোলজী, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কিডনী ফাউন্ডেশন এন্ড রিসার্স ইনস্টিটিউট, বারডেমসহ আর ও কিছু বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কিডনী সংযোজন হচ্ছে। বাংলাদেশে আনুমানিক ১৩০ এর অধিক ডায়ালাইসিস সেন্টারের প্রায় ১২-১৫হাজার রোগী ডায়ালাইসিস করছেন। বিপুল কিডনী অকেজো রোগীর সংখ্যার তুলনায় এ সুযোগ খুবই অপ্রতুল। সরকারী হাসপাতালে নাম মাত্র মূল্যে ডায়ালাইসিস দেওয়ার ব্যবস্থা আছে।
উইমেনআই২৪ডটকম//জ// ০৭-০৫-২০২২//০৬.১১ পি এম