মুজতবা আহমেদ মুরশেদ: রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা ধারণা যখন আগ্রাসী হয় মার্কিন চিন্তায় কিংবা ন্যাটোর ধারায়, তখন রাশিয়ার মতো সুপার পাওয়ার এমন প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করবে, এতো জানা।
রাশিয়া যদি আমেরিকার সীমান্ত ঘেঁষে কিউবাকে পারমাণবিক শক্তিতে সাজাতো, তাহলে আমেরিকা কি এমন করতো না? আমেরিকা কি তখন ছাড় দিতো?
নিশ্চই নয়। ১৯৬২ র "কিউবা মিসাইল ক্রাইসিস" ভুলেনি নিশ্চই বিশ্ববাসী।
ন্যাটো (NATO) উন্নয়ন সংক্রান্ত জোট নয়। পরিপূর্ণভাবেই একটা সামরিক জোট। তার বিপক্ষ সামরিক জোট ছিলো তদানিন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের নেতৃত্বে ওয়ারশ (WARSAW). এখন ওয়ারশ নেই, তাহলে আমেরিকার কি প্রয়োজন তার নেতৃত্বে চলা সামরিক জোটকে সম্প্রসারিত করে ইউক্রেনকেও সদস্য বানিয়ে রাশিয়ার নিরাপত্তা স্তরকে হুমকিতে টানা? ইউক্রেনে তখন ন্যাটোর সৈন্যদল তথা মার্কিন সৈন্য ঘাঁটি গাড়বে। আনবিক বোমা মজুদ করবে। এটা মানবে কেনো রাশিয়া?
একইসাথে দেখা দরকার, আমেরিকার টোপ দিলেও রাশিয়ার মতো সুপার পাওয়ারের পাশে বাস করে কি প্রয়োজন ইউক্রেনের মতো দেশের সরাসরি শত্রুজাল বিস্তার করার?
আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ছাত্র হিসেবে আমার কাছে সম্ভাব্য উত্তরগুলো এরকম :- ১. আমেরিকার অর্থনীতি পুনরুদ্ধার আকাঙ্ক্ষা, ২. চিনকে আটকিয়ে বিশ্ব অর্থনীতিতে নিজের র্যাঙ্ক এক নম্বরে ফিরিয়ে আনা এবং ৩. বিশ্বে মোড়লীপণা বজায় রাখার বাসনা। সে প্রেক্ষিতে উল্লেখ করা যায়, ন্যাটোর প্রয়োজনীয়তা আর নেই। এমন কথা জোরেশোরে উঠেছিলো। ন্যাটো না থাকলে আমেরিকা আরোও দুর্বল। সুতরাং এখুনি প্রমান করা দরকার ন্যাটোই ইউরোপের রক্ষাকবচ। তা না হলে রাশিয়া ইউরোপের গণতান্ত্রিক দেশগুলোকে গিলে খাবে। এমন মনস্তত্ত্ব জোরসে প্রচার শুরু করলো আমেরিকা সুকৌশলে।
একইসাথে এর আরোও একটি অন্যতম ঘনিষ্ঠ কারণ বলে যা আমার মনে হয়, তা হলো সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের "আমেরিকায় হোয়াইট সুপ্রিমেসি" নীতির প্রভাবের কাছে জো বাইডেন এখনো ম্লান। দেশের ভেতর যেমন করে জো বাইডেন এখনো জনপ্রিয়তায় প্রতিরোধের মুখে। বিশেষত, ট্রাম্পের সমর্থকদের ক্যাপিটাল হিল আক্রমণ করে আগুন ধরিয়ে বিশ্বে আমেরিকার গণতান্ত্রিক বস সাজবার অধিকার ও ভাবমূর্তিকে আঘাত করেছে। ওটার একটি ভয়াবহ নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া হয়েছে, বলা যায় এর একটি Spillover Effect হয়েছে সারা বিশ্বে আমেরিকার ভেতরের গলিত পুঁজ বেড়িয়ে ছড়িয়ে পড়ায়।
এর থেকে পুনরুদ্ধার তাদের জন্যে জরুরি। এমন বাজে অবস্থা থেকে নিজের এবং দলের শক্তি বিকাশ তাদের চাই। তাহলে কি করা দরকার? সহজ হিসেব যুদ্ধ লাগাও। যুদ্ধ ঘটাতেও ন্যাটো সম্প্রসারণে আগ্রাসী আমেরিকা। কেননা, দাবার চালের মতো এ থেকে যুদ্ধ অনিবার্য। আমেরিকার মূল ভূখণ্ড থেকে বহুদূরে প্রকট যুদ্ধ হলে ১. একদিকে অস্ত্র বাণিজ্যে আর্থিক লাভ, মুনাফা। ২. অন্যদিকে নিজেদের রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার বাড়ানো।
এ দুটো হলে আমেরিকার বর্তমান ক্ষয়িষ্ণু চেহারার কালো ছাপ মুছে আবারো উজ্জ্বল হবে বলে তাদের সামরিক ও কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা বিবেচনা করছে। তারমানে এক ঢিলে অনেকগুলো পাখি মারো।
এতো হলো আমেরিকার রূপ। কিন্তু উল্টোদিকে এখানে দাবাখেলার যে ঘুটি ইউক্রেন প্রকারান্তরে সেদেশের প্রেসিডেন্ট জেলেনেস্কি কি করলো? আসলে সে হলো মস্তিষ্কবিহীন আবেগে চলা ক্লাউন। এটাই স্পষ্ট, কোনো দেশের শীর্ষ নেতা যখন রাজনৈতিক প্রজ্ঞা বিবর্জিত হয় ইউক্রেইনের জেলেনেস্কির মতো, তখন সে দেশ বিপন্ন হয় সুপার পাওয়ারের হাতে।
যুদ্ধ কতখানি ভয়াবহ আর বেদনাদায়ক তা কী বলার অপেক্ষা রাখে? ইউক্রেনে দিনরাত রাশিয়ান বোমা আর মিসাইলে শত শত নিরিহ মানুষ ঢলে পড়ছে মৃত্যুর কোলে। এটা ঘটছে খোদ ইউরোপের কেন্দ্রে! অবিশ্বাস্য! যতবার ধ্বংসের ছবি দেখি ততবার বিষণ্ণ হয়ে পড়ি। চোখ টলটল করে অশ্রুজলে। সুন্দর দেশটা এখন ধ্বংসস্তূপ। চারদিকে মৃতদেহ আর করুন মানুষের মুখ হাহাকারে, আর্তনাদে ভরা।
এ যুদ্ধ থামুক। যুদ্ধ পক্ষের নেতাদের শুভ বুূদ্ধির উদয় হোউক।
১৯ এপ্রিল ২০২২। ঢাকা।
কবি এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক মুজতবা আহমেদ মুরশেদ
উইমেনআই২৪//ইউ//২১-০৪-২০২২//০২:০৩ পিএম//