আঞ্জুম রুহি : 'এলিজা কার্সন' নামের একজন স্বপ্নচারিনীর গল্প শুনে বুকটা মোঁচড় দিয়ে উঠলো। এই মেয়ে কয়েকবছর পর চিরতরে পৃথিবী থেকে মঙ্গল গ্রহের বুকে হারিয়ে যাবে..! "স্বপ্নচারী কি এমনও হয়..?" মঙ্গল গ্রহে গিয়ে পৃথিবীতে আর ফিরে আসবে না যে মেয়েটি, তিনি হলেন ১৮ বছর বয়সী মার্কিন 'এলিজা কার্সন' নাসার কনিষ্ঠতম সদস্য। মানুষ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের নাগরিক হওয়ার স্বপ্ন দেখে কিন্তু 'এলিজা কার্সন' স্বপ্ন দেখে মঙ্গল গ্রহের নাগরিক হওয়ার। যদিও সে জানে হয়তো কখনো সে আর পৃথিবীতে ফিরে আসবে না…!
আর ১২ বছর পর সে পৃথিবী থেকে চিরদিনের জন্য মঙ্গলগ্রহে হারিয়ে যাবে। এই মেয়ের আগ্রহ আর ডেডিকেশন দেখে মাত্র ১১ বছর বয়সে নাসা তাকে মনোনীত করে নেয়। এবং ঘোষণা করে, সমস্ত অবস্থা অনুকূল হলে সে হবে ২০৩৩ সালে পৃথিবীতে আর ফিরে না আসা, মঙ্গলে যাওয়া পৃথিবীর প্রথম মানুষ।
এলিজা সিংগেল প্যারেন্ট হিসেবে বাবার কাছে বড় হচ্ছে, সে জানে না কে তার মা। সাত বছর বয়সে বাবা তাকে নিয়ে গিয়েছিলেন আলবামার একটি স্পেস ক্যাম্পে। সেই ক্যাম্পের অভিজ্ঞতা তাকে এমনভাবে নাড়িয়ে দিলো যে, তার জগৎটাই বাকি সব শিশুর থেকে তাকে আলাদা করে দেয়। এলিজার যখন ৯ বছর তখন তার দেখা হয় নাসা'র এক মহাকাশচারী 'সান্ড্রা ম্যাগনাস'র সঙ্গে। এই নারী মহাকাশচারী তাকে জানিয়েছিলেন, "ছোটবেলা থেকেই তিনি মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন..!" আর সেদিন থেকেই ছোট্ট 'এলিজা'ও মহাকাশে যাওয়ার স্বপ্নবুনা শুরু করে।
২০৩৩/ ৩৪ সালনাগাদ মঙ্গলগ্রহে যাওয়ার জন্য নভোচারী প্রশিক্ষণ শুরু করেছে 'এলিসা কার্সন'। নাসার মুখপাত্র 'পল ফোরম্যান' এক সাক্ষাৎকারে 'বিবিসি'কে জানিয়েছেন, "এলিসার মতো মানুষকে খুব গুরুত্বের সঙ্গে দেখে নাসা। মঙ্গল মিশনে যাওয়ার জন্য একদিন যে নভোচারীর প্রয়োজন হবে এলিসা এখন ঠিক সেই বয়সে রয়েছে।"
এলিজা সবচেয়ে কম বয়সী হয়ে আলবামা, কানাডার কুইবেক ও তুরষ্কের ইজমিরে নাসার তিনটি বিভিন্ন স্পেস ক্যাম্পে অংশ নেয়। মহাকাশের বেসিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন মিশন কিভাবে পরিচালিত হয় তা আয়ত্তে নিয়েছে এলিজা। এছাড়া মহাকর্ষ-শূন্যস্থানে চলাচল করার পদ্ধতি, ভারহীন স্থানে থাকার উপায়ও শিখেছে সে। অর্জন করেছে বিশেষ মূহুর্তে জরুরি সিদ্ধান্ত নেয়ার দক্ষতা। রোবটিক বিষয়ের উপর জ্ঞানার্জনের পাশাপাশি একটি রকেটও বানিয়েছে সে।
নাসার থেকে তাকে একটি 'কল-নেম' ও দেয়া হয়েছে 'ব্লুবেরি'। যেহেতু মঙ্গলে গেলে তার আর ফিরে আসার কোন সম্ভাবনা নেই, তাই নাসার কাছে সে কোন প্রকার যৌনতা, বিয়ে বা সন্তানধারণের নিষেধাজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করেছে।
নাসা ১৮ বছরের আগে কাউকে নভোচারী হিসেবে আবেদন করার সুযোগ দেয় না। তবে এলিজার ক্ষেত্রে এ নিয়ম ব্যতিক্রম করা হয়েছে। প্রথম থেকেই প্রতিষ্ঠানটি এলিজাকে মানুষের ভবিষ্যৎ বাসস্থান মঙ্গলে অভিযানের জন্য শক্ত সমর্থ করে তৈরি করতে চেয়েছে। ২০৩৩ সালে যখন মঙ্গলগ্রহে প্রথম মানুষ পাঠানোর অভিযান শুরু হবে তখন এলিজার বয়স হবে ৩২, যা একজন নভোচারীর জন্য যথাযথ বয়স।
এলিজা জানে সে হয়তোবা আর ফিরে আসবে না এই পৃথিবীতে। আর মাত্র ১২ বছর পরে একমাত্র নিঃসঙ্গ মানুষ হিসেবে বাকি জীবনটাই কাটিয়ে দিবে কোটি- কোটি মাইল দূরের, লোহার লালচে মরিচায় ঢাকা প্রচণ্ড শীতল নিষ্প্রাণ গ্রহের ক্ষীয়মান নীল নক্ষত্রের এক গ্রহে। তবে এতে 'এলিজা' মোটেও ভীত নয়।
মানুষের স্বপ্নের বিশালতার কথা চিন্তা করলেই কেমন অবাক লাগে, আর 'এলিজা কার্সন'র সেই স্বপ্ন তো যেন বিশালতাকেও হার মানায়। 'এলিজা' বলে, "Always Follow Your Dream and Don’t let Anyone Take it From You."