ঢাকা, বাংলাদেশ

বৃহস্পতিবার, ১৩ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪

English

সারাদেশ

দেশের প্রথম স্কুল অ্যাপ ‘শিক্ষায়তন’

কুমিল্লা প্রতিনিধি: 

প্রকাশিত: ২০:৪৩, ২৯ জানুয়ারি ২০২৩

দেশের প্রথম স্কুল অ্যাপ ‘শিক্ষায়তন’

দেশের প্রথম স্কুল অ্যাপ ‘শিক্ষায়তন’

শিক্ষাকে পুরোপুরি আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য দেশে প্রথম বারের মতো মোবাইল অ্যাপে কার্যক্রম শুরু হয়েছে। স্কুল ‘শিক্ষায়তন’ নামে এ অ্যাপ আবিষ্কার করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সোহেল রানা। শিক্ষায়তন অ্যাপ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্য শিখন ব্যবস্থাপনা অ্যাপ হিসেবে পরিচিত পাচ্ছে।
এরই মধ্যে এ শিখন ব্যবস্থা অ্যাপ কুমিল্লার তিনটি উপজেলার পাঁচটি স্কুলে পাইলট প্রজেক্ট হিসেবে পরিচালনা করা হচ্ছে। 

ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার সোহেল রানা বলেন, প্রথমে আমরা কুমিল্লা জেলার সব স্কুলে এটি বাস্তবায়ন করতে চাই। পরবর্তীতে সরকার বড় পরিসরে পুরো বাংলাদেশে এটি ছড়িয়ে দিতে পারে। এটা সরকার বিবেচনা করবে।

বছরের শুরুতেই অ্যাপভিত্তিক শিখন কার্যক্রম হাতের মুঠোয় পেয়ে খুশি শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নতুন শিক্ষাক্রম বাস্তবায়নেও এ অ্যাপ হতে পারে বেশ কার্যকর। অনেক আগে থেকেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমের মাধ্যমে শিখন কার্যক্রমকে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে এসেছে। তবে এই প্রথম বাংলাদেশের স্কুল কলেজের জন্য এক নতুন ধরনের লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম উদ্ভাবন করলেন ব্রাহ্মণপাড়ার ইউএনও সোহেল রানা।

শিক্ষায়তন নামে এ লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম একটি স্যাস (সফটওয়্যার অ্যাজ এ সার্ভিস) মডেল অনুসারে তৈরি করা ই-সার্ভিস অ্যাপ্লিকেশন, যাতে দুইটি ওয়েব বেজড প্ল্যাটফর্ম এবং একটি মোবাইল অ্যাপ। পুরো সিস্টেমটির স্পেসিফিকেশন ডিজাইন করেছেন ইউএনও। এই ডিজাইনটি বাস্তবায়ন করতে জেলা প্রশাসন পরবর্তীতে বিজনেস একসিলারেট বিডি নামে একটি টেকনোলজি পার্টনার নিযুক্ত করে, যারা সফলভাবে এই লার্নিং ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম ডেভেলপ করে। এ প্ল্যাটফর্মে স্কুলের সব কার্যক্রম প্রধান শিক্ষক ওয়েব প্ল্যাটফর্মে এবং শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি কোর্স আলাদাভাবে সাজানো আছে।

কোর্সে সব ক্লাসের আলাদা সেকশন আছে, যেখানে শিক্ষকরা অতিরিক্ত লার্নিং ম্যাটেরিয়াল জমা করতে পারবেন এবং শিক্ষার্থীরা তা দেখতে পারবেন। শিক্ষকরা অ্যাপে লেকচার নোট আপলোড করতে পারবেন। শিক্ষার্থীদের গ্রুপে ভাগ করতে পারবেন, ক্লাসে নোটিফিকেশন পাঠাতে পারবেন, অ্যাসাইনমেন্ট দিতে পারবেন ও জমা নিতে পারবেন। এছাড়া গ্রেডও বসাতে পারবেন। ক্লাসে বসে সফটওয়্যার ব্যবহার করে শিক্ষকরা হাজিরা নিতে পারবেন। অর্থাৎ স্কুলের সব কার্যক্রম মোবাইল অ্যাপে করতে পারবেন শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে প্রত্যেক শিক্ষক ও শিক্ষার্থীর রয়েছে নিজস্ব ওয়েব পেজ।


শিক্ষায়তনের টেকনিক্যাল বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করছেন বিজনেস একসিলারেটের সিইও কামরুল হাসান সুমন। তিনি বলেন, এ ধরনের সফটওয়্যারের ব্যবহার দেশে নেই। দেশে প্রচলিত সফটওয়্যারগুলোতে ক্লাস রুমে কী পড়ানো হচ্ছে সে বিষয়টি সংযোগ করার অপশন কম। শিক্ষায়তনের মাধ্যমে অভিভাবক জানতে পারবেন তার বাচ্চারা কী পড়ছে। যেগুলো আছে তাদের অধিকাংশ কনটেন্ট নির্ভর সেবা দেয়। জেলা প্রশাসন থেকে এরকম সফটওয়্যারের ডিজাইন অভাবনীয়। আমরা এই উদ্যোগের অংশীদার হতে পেরে গর্বিত এবং ভবিষ্যতে এটিকে সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে ইচ্ছুক।

ভগবান সরকারি স্কুলে শিক্ষায়তন বাস্তবায়ন করছেন বিজ্ঞান শিক্ষক মহিউদ্দিন পলাশ। তিনি জানান, শিক্ষায়তন এমন একটি সফটওয়্যার যেখানে শ্রেণি কার্যক্রমের সবকিছু রয়েছে। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা মোবাইলের মাধ্যমে উন্নত মানের শিক্ষা সেবা গ্রহণ করতে পারবে। অ্যাপের মাধ্যমে শিক্ষকদের কাজ অনেকটাই সহজ হয়ে যাবে। বিশেষ করে তদের টিচিং প্ল্যান সাজানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। বর্তমানে www.sikkhayton.gov.bd ইউআরএলের মাধ্যমে প্ল্যাটফর্মটি ব্যবহার করা যাবে। এছাড়া গুগল প্লে স্টোরে অ্যাপের নাম ‘শিক্ষায়তন’ অথবা ‘sikkhayton’ নামে অ্যান্ড্রয়েড অ্যাপটি পাওয়া যাবে। শিক্ষায়তন নেটওয়ার্কে যুক্ত হতে চাইলে আগ্রহী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জেলা প্রশাসন, কুমিল্লা অথবা উপজেলা প্রশাসন, ব্রাহ্মণপাড়ার সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন।

//এল//