
ছবি সংগৃহীত
ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে পানিতে ভাসছে সিলেট। এতে ম্লান হয়ে গেছে মানুষের ঈদ আনন্দ। বৃষ্টিতে অনেকের বাড়িতে গলা থেকে কোমর পর্যন্ত পানি ওঠেছে। তারপরও অনেক জায়গায় বৃষ্টিতে ভিজে দেওয়া হচ্ছে কোরবানি। তবে বেশির ভাগ জায়গায় সম্ভব হয়নি। সেই কোরবানিগুলো দেওয়া হবে মঙ্গলবার, এমনটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সোমবার (১৭ জুন) ভোর থেকে ভারী বৃষ্টি ও উজানের ঢলে সকালের মধ্যেই জেলার প্রায় সব উপজেলায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া সিলেট মহানগরের অধিকাংশ এলাকায় দেখা দিয়েছে বন্যা। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ও প্রধান সড়ক তলিয়েছে পানিতে। এ অবস্থায় বেশিরভাগ ঈদগাহে ঈদুল আজহার জামাত বাতিল করে স্থানীয় মসজিদগুলোতে নামাজ আদায় করেছেন মুসল্লিরা।
সিলেটে প্রধান ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হওয়া শাহী ঈদগাহে প্রতি বছর দেড় থেকে দুই লাখ মুসল্লির সমাগম ঘটলেও এবার বৃষ্টির কারণে মুসল্লি ছিলেন মাত্র কয়েক হাজার।
এদিকে, বাসবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পনি ঢুকে পড়ায় সিলেট মহানগরের কোরবানিদাতারা পড়েছেন বেশ বিপাকে। অনেকে পশু দোতলায় উঠিয়ে রেখেছেন। পানি না নামলে কোরবানি দিতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন অনেকেই। তারা বলছেন, দুই-একদিন পরে কোরবানি দিতে হতে পারে।
সকালে সিলেট মহানগর সরেজমিন, সব নিচু এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বিশেষ করে শাহজালাল উপশহর পুরোটাই পানির নিচে। অনেকের বাসার নিচতলায় গলা পর্যন্ত পানি। এছাড়া শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়াসহ নগরের অধিকাংশ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছে।
মহানগরের মধ্যে অনেক প্রধান ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে পানি উঠেছে। এয়ারপোর্ট সড়ক, সিলেট-তাবিল সড়ক, দক্ষিণ সুরমার বঙ্গবীর রোডসহ বিভিন্ন সড়কের বেশ কয়েকটি স্থান তলিয়ে গেছে। কোনো কোনো স্থানে কোমর পর্যন্ত পানি দেখা গেছে। এ অবস্থায় নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটছেন মানুষজন।
সিলেট আবহাওয়া অফিস সূত্র জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় (রোবার সকাল ছয়টা থেকে সোমবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত) সিলেটে ১৭৩.৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। আর সোমবার সকাল ছয়টা থেকে ৯টা পর্যন্ত হয়েছে ৮৬ মিলিমিটার বৃষ্টি। এখনও বৃষ্টি হচ্ছে।
সিলেট মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাউন্টস অফিসার আরিফ আহমদ একাত্তরকে বলেন, রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে, এখনও চল়ছে। খুব কষ্ট করে বৃষ্টিতে ভিজে কোরবানি দিয়েছি।
শাহরিয়ার আহমদ সুজন নামে সিলেটের এক ব্যবসায়ী বলেন, বৃষ্টিতে ভিজে একটি গরু কোরবানি দিয়েছি, আরও একটি রেখে দিয়েছি, আগামীকাল দেবো। বৃষ্টিতে ঈদগাহে নামাজ পড়া যায়নি।
এদিকে রোববার রাতে সিলেট জেলা প্রশাসন জানায়, সিলেট সদর, দক্ষিণ সুরমা, ওসমানীনগর, বিশ্বনাথ, ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ, গোয়াইনঘাট, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার উপজেলার এক লাখ ৪২ হাজার ১৮৫ জন মানুষ বন্যায় আক্রান্ত। এসব উপজেলার ৫১২টি গ্রাম রোববার পর্যন্ত প্লাবিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসন আরও জানায়, সিলেটের সব উপজেলায় ৫৩৮টি আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। শনিবার থেকে এসব কেন্দ্রে মানুষজন আসতে শুরু করেছে।
এদিকে সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্র জানিয়েছে, ঈদের সকাল ৯টা পর্যন্ত সিলেটে তিনটি নদীর পানি তিনটি পয়েন্টে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সুরমার পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ৭২ সেন্টিমিটার, কুশিয়ারার পানি ফেঞ্চুগঞ্জ পয়েন্টে বিপৎসীমার ৬৫ সেন্টিমিটার ও সারি নদীর পানি সারিঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১৯ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এছাড়া সিলেটের সব নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।
এ নিয়ে রোববার রাতের বৃষ্টির পর সিলেটে ২০ দিনের মাথায় দ্বিতীয় দফা বন্যায় আক্রান্ত হলো। গত ২৭ মে সিলেটে আগাম বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। এতে জেলার সব উপজেলার সাড়ে সাত লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নামার আগেই শনিবার আবারও বন্যা কবলিত হলো সিলেট।
ইউ